ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাত্র তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা এই পাখিগুলোর চেহারা, খাবার-দাবার, আচার-আচরণ, সবই অসাধারণ। ফুলের মধু খায় মৌমাছিদের মতো; পিছন দিকে উড়তে পারে পোকামাকড়ের মতো; আবার হাজার হাজার মাইলও পরিভ্রমণ করে। বলছি হামিংবার্ডের কথা।

জানা-অজানা ॥ বিস্ময়কর পাখি হামিংবার্ড

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

 জানা-অজানা ॥ বিস্ময়কর পাখি হামিংবার্ড

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পাখি ট্রকিলিডে পরিবারের ক্ষুদ্রতম সদস্য এই ‘বি হামিংবার্ড’ বা মৌমাছি হামিংবার্ড, ঠোঁট শুধুমাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা, ওজনে আড়াই গ্রাম বা দু’টি ডাক টিকিটের সমান। হামিংবার্ডরা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা হয়। এদের বাস প্রধানত দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকায়। পক্ষীবিজ্ঞানীরা ৩০০ থেকে ৩৫০ ধরনের হামিংবার্ড শনাক্ত করেছেন। তলোয়ারঠুঁটো হামিংবার্ডরা প্রধানত ফুলের মধু খেয়ে বেঁচে থাকে। ফুলের মধ্যে ঠোঁট ঢুকিয়ে খায় বলে নানা ফুলের আকার অনুযায়ী হামিংবার্ডদের ঠোঁটের আকারেরও বিবর্তন ঘটেছে। পাখা ঝাপটায় বিদ্যুতগতিতে হামিংবার্ড নামটা এসেছে ‘হামিং’ বা অতি দ্রæত পাখা ঝাপটানোর একটানা শব্দ থেকে, যেন ভোমরার গুঞ্জন। সাধারণভাবে হামিংবার্ডরা সেকেন্ডে ৫০ বার পাখা ঝাপটায়, ওরা আবার পাখা ঝাপটায় ইংরেজী আটের মতো করে, সামনে ও পিছনে, ফলে ওরাই একমাত্র পাখি, যারা সামনের দিকে আবার পিছনের দিকেও উড়তে পারে। আর হেলিকপ্টারের মতো বাতাসে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পাখা নাড়া তো আছেই, যাকে ইংরেজীতে বলে ‘হোভারিং’, যেমন ‘ হোভারক্রাফ্ট’। উচ্চগতিতে বেঁচে থাকা হামিংবার্ডদের হৃদস্পন্দন মিনিটে ১,২৬০ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যেখানে মানুষের হৃদস্পন্দন থাকে মিনিটে ৬০ থেকে ৮০-র মধ্যে। হামিংবার্ডরা মিনিটে ২৫০ বার অবধি নিঃশ্বাস নিতে পারে। হামিংবার্ডদের শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা ৪০ কি ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস, রাতে তা কমে দাঁড়ায় ১৮ ডিগ্রীতে, হৃদস্পন্দন কমে হয় মিনিটে ৫০ থেকে ১৮। হামিংবার্ডরা এই সময় যে অর্ধচেতন অবস্থায় থাকে, তাকে ইংরেজীতে বলে ‘টপর’। মেটাবলিজম পরিভাষায় যাকে বলে বিপাক, অথবা সহজ কথায়, শরীর যেভাবে খাদ্যকে শক্তিতে পরিণত করে ও সেই শক্তি ব্যয় করে। হামিংবার্ডদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি জীবজগতে দ্রæততম। তাই বেচারাদের প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর মধু আহরণ করতে হয় চিনির হিসেবে তারা প্রতিদিন নিজের ওজনের অর্ধেক পরিমাণ চিনি খায়। ফুলের মধু শরীরে গিয়ে শক্তিতে পরিণত হতে ৪৫ মিনিটের বেশি লাগে না। দূরের পথ মাত্র তিন ইঞ্চি লম্বার ফাস হামিংবার্ড গ্রীষ্মের শেষে আলাস্কা থেকে মেক্সিকোয় যায় ৩,৯০০ মাইল পার হয়, যা কিনা তার আকারের হিসেবে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে দীর্ঘতম যাত্রা। নীড় বহু প্রজাতির হামিংবার্ড মাকড়শার জাল আর শ্যাওলা দিয়ে তাদের ছোট্ট বাসাগুলোকে বেঁধে রাখে। এর ফলে বাসার কাঠামোটা ভাল হয়, আবার মাকড়শার জাল টানলে বাড়বে বলে, বাচ্চা হামিংবার্ডরা যত বড় হতে থাকে, বাসাটাও তত বড় হতে থাকে। হামিংবার্ডরা দু’টি ছোট সাদা ডিম পাড়ে স্বভাবতই সেগুলো পক্ষিজগতের সবচেয়ে ছোট ডিম। তবে তা থেকে দুই কি তিন সপ্তাহ পরে বের হয় দু’টি কচি হামিংবার্ড। সূত্র: ডয়েচে ভেলে
×