ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ইঁদুরের সম্পর্ক কি?

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

 জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে  ইঁদুরের সম্পর্ক কি?

ঘটনা-১ : ফ্রান্সের প্যারিসে মেয়র নির্বাচন হতে বাকি আছে দুই বছরের মতো। কিন্তু জরিপে এখনই দেখা যাচ্ছে যে ৫৮ শতাংশ লোক বর্তমান মেয়রকে ভোট দেবেন না। আর তার কারণ হলো শহরে ভয়াবহ ইঁদুরের উৎপাত। ঘটনা-২ : নাইজেরিয়াতে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি প্রায় এক সপ্তাহ বাড়ি থেকে রাষ্ট্রীয় কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। কেন? কারণ তার কার্যালয় চলে গিয়েছিলো ইঁদুরের দখলে। ঘটনা-৩ : ইন্দোনেশিয়া এক গবেষণায় দেখা গেছে সেখানে ইঁদুরের পেটে যাচ্ছে ১৭ শতাংশ ফসল। ঘটনা-৪ : যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর এক সময় পরিচিত ছিল গান আর খেলার শহর হিসেবে। কিন্তু এখন তাকে ডাকা হচ্ছে ‘ইঁদুরের রাজধানী। এ এমন এক যুদ্ধ যাতে মানব জাতি নাকি ইঁদুরের কাছে রীতিমতো পরাজিত হচ্ছে। আর বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস হচ্ছে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ইঁদুরের প্রজননের গতি : ইঁদুরের কারণে শুধু যে একজন মেয়রের রাজনীতির ক্যারিয়ারে বিপদগ্রস্ত তা নয়। ইঁদুর নানা ধরনের অসুখ ছড়ানোর জন্য দায়ী। ইঁদুর নানা ধরনের স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি করে। খাদ্যের ক্ষতি করে। কর্নওয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা বলছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ইঁদুরের উৎপাতের কারণে প্রায় দুই হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠী শহরে বাস করবে। যা এখন ৫৫ শতাংশ। এর অর্থ হলো আরও, শহরে ইঁদুরের খাদ্য ও বাসস্থানের পরিমাণ ব্যাপকহারে বাড়বে। ইঁদুর প্রচুর সন্তান জন্ম দেয় এই তথ্য হয়ত ইতোমধ্যেই জানেন। কিন্তু গরম আবহাওয়ায় তার প্রজনন আরও বেশি হয়। এক জুটি ইঁদুর সাধারণত ১২ মাসে ১২৫০টি নতুন ইঁদুরের জন্ম দেয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেভাবে আবহাওয়া গরম হচ্ছে তাতে ইঁদুরের প্রজনন চক্র আরও দীর্ঘ হবে। তার মানে আরও ইঁদুর আরও বেশি বাচ্চার জন্ম দেবে। সব প্রজাতির মধ্যে বিশেষ করে বাদামি ইঁদুর খুব ভয়াবহ। সামরিক কায়দায় মোকাবেলা করলে হবে না : গত এক হাজার বছরে সবগুলো যুদ্ধে যে পরিমাণে মানুষ মারা গেছে, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ মারা গেছে ইঁদুরের কারণে। ১৪ শতকে যে প্লেগে ইউরোপে এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী মারা গিয়েছিল তার জন্য দায়ী ছিল ইঁদুর। গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজির শিক্ষক স্টিভ বেলমেইন বলছেন, ‘ইঁদুরকে পুরোপুরি নির্মূল করা অসম্ভব। ওদের মেরে ফেলার বিষয়টা কাজ করবে না। কারণ যেগুলো বাকি থাকবে তারা বেশ দ্রæতই পরিস্থিতি আগের যায়গায় নিয়ে যেতে পারবে।’ একটি বাদামি নারী ইঁদুর জন্মের পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই সন্তান জন্ম দানের ক্ষমতা অর্জন করে। জীববিজ্ঞানী মাইকেল পার্সনস বলছেন, ‘সমস্যা হলো আমরা যুদ্ধের কায়দায় বিষয়টা দেখছি। আক্রমণের পর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি। আক্রমণের আগেই পরিকল্পনা করছি না।’ এখন এই প্রাণীটিকে শুধু মেরে ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিষ দিয়ে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা খেয়াল করছেন, কিছু ইঁদুর এমনকি বিষের বিরুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জন করছে। তাছাড়া এসব বিষের ব্যবহার পরিবেশ ও মানুষজনের জন্য হুমকি। মাইকেল পার্সনস বলছেন, বলছেন, ‘আমরা যে পরিমাণে জায়ান্ট পান্ডা সম্পর্ক, ইঁদুর সম্পর্কে সে পরিমাণে জানি না সেটা একটা মুশকিল। বাদামি ইঁদুর নিয়ে গবেষণার মারাত্মক অভাব রয়েছে।’ বিড়াল কি অলস হয়ে যাচ্ছে: বিষ দিয়ে ইঁদুর মারো কোন কার্যকর পন্থা নয় বলে মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। একটা সময় ছিল বাড়িতে একটা বিড়ালই সব সমস্যার সমাধান করত। ইঁদুর ধরা বিড়ালের কাজ এমন ভাবনা থেকে কিছু শহরে ইঁদুরের এই শত্রæকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেমন ওয়াশিংটনে বহু বিড়াল ছাড়া হয়েছে। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। মাইকেল পার্সনস ব্রæকলিনে ময়লার ভাগাড়ে পাঁচ মাস যাবত চালানো এক গবেষণায় দেখেছেন প্রতি ১৫০টি ইঁদুরের মধ্যে মোটে দুটো মারতে পেরেছে বিড়াল। মাইকেল পার্সনস বলছেন ইঁদুর একটা বিশেষ আকারের বড় হওয়ার পর মনে হচ্ছে যেন ইঁদুর আর বিড়াল একে অপকে এড়িয়ে চলছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ দিয়ে কাজ হবে: ২০১৬ সালে মার্কিন একটি কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছে যে তারা একটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ তৈরি করেছে যাতে নারী ইঁদুরের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া যায়। তারা দাবি করেছে এতে পৃথিবী বদলে যাবে। কোম্পানিটির দাবি বিষ বা অন্যভাবে ইঁদুরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে এই পদ্ধতি ৪৬ শতাংশ বেশি কাজ করে। নিউইয়র্কে এটির পরীক্ষা চালানো হয়েছে। কিন্তু একটা বিশাল শহরজুড়ে ইঁদুরকে এমন বড়ি আপনি কিভাবে খাওয়াবেন? সেটা একটি মুশকিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইঁদুর টিকে আছে শহরের মানুষের তৈরি খাবার খেয়ে। তাদের মতে ইঁদুরের খাবারের যোগান বন্ধ করার মধ্যেই রয়েছে মুল সমাধান। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×