ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারীর ক্ষমতায়নে শিল্প পণ্য মেলার উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

নারীর ক্ষমতায়নে শিল্প পণ্য মেলার উদ্বোধন

পেশার ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে নারীদের বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। উন্নয়নের গতিধারায় নিজেদের শামিল করাই শুধু নয় সমতাভিক্তিক সমাজ ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার দীপ্ত চেতনায় নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগামিতা প্রতিনিয়তই প্রমাণ করছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে নারীদের অসামান্য কর্মযোগ প্রবৃদ্ধির এই খাতকে নিরন্তর জোরদার করেছে। পাশাপাশি এটাও চলে আসে নারীর ক্ষমতায়নের মতো দর্শনীয় সাফল্যও। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও উৎসাহের সমন্বিত প্রচেষ্টা নারীদের স্বাবলম্বী করতে যে মাত্রায় অবদান রাখছে তাও একেবারে যুগের সঙ্গে তাল মেলানো। ‘উইমেন্স এ্যাম্পাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশন’ এমন ধারার একটি জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে ১০০ জন নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে এই সংগঠনটি যে যাত্রা শুরু করে তা এক বছর অতিক্রান্তের সময় একটি উৎসাহোদ্দীপক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী এক মেলার আয়োজন করা হয় হোটেল সিক্স সিজনে। মেলা ঘুরে এসে জানাচ্ছেন- নাজনীন বেগম। নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে অবদান রেখে যাওয়া এই মহৎ প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে আছেন নাজমা মাসুদ। তিনি মূলত তৃণমূল পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কিছু স্টল ফ্রিতে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। এভাবে কর্মক্ষম এবং প্রত্যয়ী নারীরা এমন সুযোগ গ্রহণ করে অর্থনৈতিকভাবে নিজের অবস্থান শুধু তৈরি করা নয় শক্তভাবেও গড়ে তোলার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে যাতে এই হাতের নির্মিত শিল্প পণ্য বহির্বিশ্বেও তার জায়গা করে নিতে পারে তেমন পরিকল্পনাও উদ্যোক্তাদের ভেতরে ভীষণভাবে কাজ করে। তারা তাদের অব্যাহত কর্মদক্ষতার প্রমাণ দিয়ে নান্দনিক পণ্য-সামগ্রী দর্শনার্থীদের সামনে নিয়ে আসছে। দেশের সীমাবদ্ধ গ-িতে সফলতার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব বাজারের আঙ্গিনায় প্রবেশ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সেও এক সামগ্রিক সমৃদ্ধির নিয়ামক শক্তি। যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখবে এমন আশা ব্যক্ত করাই যায়। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে হোটেল সিক্স সিজনে ৯ নবেম্বর শুক্রবার দুই দিনব্যাপী যে মেলার উদ্বোধন করা হয় সেখানে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নাজমা মাসুদ অনুষ্ঠানটির চেয়ার ছিলেন। আর এই মেলা উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত নিলুফার করিম। ফেইথ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক যিনি কিনা আবার ‘উইমেন্স এন্টারপ্রেণার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। নারী ও শিশু বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইতোমধ্যে তার মহতী কার্যক্রমকে সংশ্লিষ্টদের সামনে নিয়ে আসতে পেরেছেন। নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে নিলুফার করিমের সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা নারীদের জন্য যে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয় সেখানেও এই নেতৃত্ব সময়ের বলিষ্ঠ পথিক। মেয়েদের নিজের ক্ষমতা এবং দক্ষতাকে সব সময়ই প্রমাণ দিয়ে যাচাই করতে হয়। এটা যেমন দুঃখজনক একইভাবে হতাশাব্যঞ্জকও। নারীদের ওপর এমন ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপে নিলুফার করিম ক্ষুব্ধ এবং মর্মাহত। বিশেষত শিশুদের ওপর তার পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহত আছে। শিশুদের অভিভাবকদের প্রতি তার নজরকাড়া অনুভূতি এমন স্পর্শকাতর জায়গাটি নানামাত্রিকে সমৃদ্ধ হচ্ছে। মেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের জেলা কর্মকর্তা আয়শা নার্গিস। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতা সম্প্রসারণে যে মাত্রায় বিভিন্ন কর্মপ্রকল্প এবং উদ্যোগকে সমন্বিত করছে সেখানে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদেরও পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। এমন অভিমত ব্যক্ত করে এই সরকারী কর্মকর্তা সুদৃঢ়ভাবে মত দেন কন্যা শিশুরা আজ আইনগত অধিকারের সুরক্ষিত থাকার বিভিন্ন বিধি সরকার কর্তৃক চালিত হয়ে সমাজকে অভিশাপমুক্ত করতে সক্রিয়। যা অতীতের অনেক জঞ্জালকে পরিষ্কার করে বাল্য জীবন থেকে মেয়েদের যাত্রাপথ শঙ্কাহীন অবস্থায় পৌঁছে দিচ্ছে। প্রশাসনে থাকা এই নারী ব্যক্তিত্ব অসহায়, দুস্থ ও কর্মক্ষম মেয়েদের জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। সংগঠনের সভানেত্রী নাজমা মাসুদ তার সমাপনী বক্তব্যে স্বাবলম্বী নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে সফল করার উদ্যোগ নিয়ে যে মেলার আয়োজন করা হয় তাকে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। বক্তব্য অনুষ্ঠানের পর মেলার কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। আগত নারী উদ্যোক্তারা তাদের নিজ হাতে তৈরি বাহারি পণ্যের সম্ভার নিয়ে স্টল খুলে বসেন। পরের দিন ১০ নবেম্বর শনিবারও চলে দিনব্যাপী এই মেলার কার্যক্রম। এই মেলার মূল বার্তাকে সামনে নিয়ে আসা হয় আগত শীতকে উপলক্ষ করে। সঙ্গত কারণে ‘শীতবস্ত্র মেলা’র ওপর ভিত্তি করেই পুরো আয়োজনটি সাজানো গোছানো হয়। তবে শুধুমাত্র যে শীতের কাপড়ের স্টল ছিল তা নয়। শাড়ি, থ্রি-পিস, ব্যাগ, দর্শনীয় গয়না থেকে আরম্ভ করে সুস্বাদু খাবারেরও মনোমুগ্ধকর আমেজ ছিল। সফল প্রত্যয়ী নারী উদ্যোক্তারা তাদের নিজের অর্থায়ন, শৈল্পিক মহিমা এবং মূল্যবান সময় ব্যয় করে যে দৃষ্টিনন্দন পণ্য সামগ্রী ক্রেতাদের সামনে হাজির করেন তা যেমন আকর্ষণীয় একইভাবে আর্থিক সচ্ছলতার নিয়ামক শক্তিও। এসব নারী ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় তারা পারিবারিক আবহকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক রেখে তাদের এই কর্মদ্যোতনাকে চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ স্বামী, সন্তান এবং সংসার সামলানোর গুরু দায়িত্ব পালন করে তারা নিজের কর্মপরিধিকে সচল রেখেছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী নারীরা একবাক্যে স্বীকার করলেন বাবা, ভাই, কিংবা স্বামীর সহযোগিতা ছাড়া তারা এই বৃহৎ কর্মজগতকে কল্পনাও করতে পারেন না। অর্থাৎ পারিবারিক অনুকূল সুযোগ তৈরি হওয়া নারীদের জন্য এক বিরাট অর্জন। সে সফলতা প্রদর্শনেও তারা নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে। ক্ষমতা এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিজেদের কর্মক্ষেত্রকে প্রসারিত করতে গিয়ে কোন ধরনের বাধা-প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়নি। তবে সময়ের মিছিলে তাদের অবস্থানকে শক্ত আর মজবুত করতে অসম সাহসে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়কে লালন করা ছাড়া কোন পথও থাকবে না।
×