ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

নতুন অধ্যায়ে যাত্রা হৈমন্তী সরকার

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

নতুন অধ্যায়ে যাত্রা হৈমন্তী সরকার

বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী দেখছে অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে। যেখানে কৃষিশিল্প, শিক্ষার পাশাপাশি নারী সমাজের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। নারীর এই অগ্রগতিতে শিক্ষা একটি বড় উপাদান হিসেবে কাজ করছে। শিক্ষা জাতি গঠনের শুধু মূল স্তম্ভই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করার মহান নির্দেশক। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার পথ দেখালেন। সেই আলোয় আলোকিত হলো নারী সমাজ। আজ নারী বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে আপন মহিমায় ভাস্বর। তাই নারী আজ ঘরের কোণে সেকালের মতো বন্দি থেকে অন্ধ অনুকরণ ও বিশ্বাসকে আঁকড়ে না ধরে শিক্ষা তাদের অন্তর-বাহিরকে জাগরিত করেছে। সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে চলছে দীপ্ত পদক্ষেপে। ঠিক তেমনি একজন সিলেটে প্রথম নারী সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার। বাবা সাফল্য সরকার আর মা অনিতা সরকারের তিন মেয়ের মধ্যে হৈমন্তী মেজ। নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার বিরিশিরিতে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই খুব ডানপিটে ছিলেন হৈমন্তী। তাদের কোন ভাই নেই তাই বাবার সঙ্গে ঘরের সব তিনিই করতেন। নেত্রকোনা বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ এসএসসি ও দুর্গাপুর মহিলা কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকার বেগম বদরুননেছা সরকারী মহিলা কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করার পর পুলিশে ট্রাফিক সার্জেন্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আগ্রহী হন। ট্রাফিক সার্জেন্ট হয়ে হৈমন্তী সরকার প্রথম বারের মতো কাজ শুরু করেন সিলেট শহরে। দিনটি ছিল ২৩ এপ্রিল সিলেটে হৈমন্তীর প্রথম কার্যদিবস। নগরীর নাইওরপুল পয়েন্ট। সঙ্গে কয়েক নারী ট্রাফিক কনস্টেবল। মূল দায়িত্বে ছিলেন হৈমন্তী সরকার। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নাইওরপুল। সব সময় ঝামেলা লেগেই থাকে। পুরুষ ট্রাফিক সার্জেন্টও হাঁপিয়ে ওঠে ওই এলাকায়। সেখানে দায়িত্ব পালন শুরু করেন হৈমন্তী। একেক করে গাড়ি যাচ্ছে আর দাঁড়িয়ে দেখছেন হৈমন্তী। হাত নেড়ে ইশারায় গাড়ি থামাচ্ছেন আর ছেড়ে দিচ্ছেন। দৃশ্য তো অবাক করার মতো। সিলেটের রাস্তায় এভাবে কোন নারী সার্জেন্টকে অতীতে দেখা যায়নি। এই শহর সিলেটে এতদিন যারাই দায়িত্ব পালন করছেন তারা পুরুষ। বেশ স্মার্ট নারী হৈমন্তীকে দেখেই চমকে ওঠেন গাড়ির চালকরা। এ দৃশ্য তো সিলেটে অতীতে দেখা যায়নি। ট্রাফিক কন্ট্রোলও পরিচালিত হচ্ছে স্মার্টভাবে। বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে ২০১৫ সালে ২৯ জন নারীকে সার্জেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। রাজপথে প্রথম নারী পুলিশ সার্জেন্ট বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ মনে করে পুলিশ বিভাগ ওই সব নারী সার্জেন্টদের নিয়োগ প্রদান করে। এরপর প্রাথমিকভাবে নিয়োগকৃত ২৯ জনের মধ্যে ২২ জনকে ঢাকা মহানগরের রাজপথে দায়িত্ব পালনে নামায়। তারা বেশ দক্ষতার সঙ্গে ঢাকার রাজপথে দায়িত্ব পালন করেন। ওই ২২ জনের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল পাঠানো হয়। হৈমন্তীর স্বামী সিলেটের একজন ব্যাংকার। এ কারণে হৈমন্তী তার পছন্দের শহর সিলেটে এসেছেন। হৈমন্তী বলছিলেন ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে শুধু যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ নয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকলেও আমরা মোটরসাইকেল চালিয়ে সামনে এগিয়ে যাব, সবাই তাকিয়ে দেখবে, নারীরা আর পিছিয়ে নেই। এই ভাবনা আমাকে এই পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করেছে।’ পুলিশ সার্জেন্ট হৈমন্তী সরকার এভাবেই বললেন নিজের পেশা নিয়ে। হৈমন্তী বলেন, ছোটবেলা থেকেই চ্যালেঞ্জিং কাজ পছন্দ করতাম। আমার কোন ভাই নেই তাই পরিবারে ছেলেরা যে কাজ করে সেগুলো বাবার সঙ্গে আমি করতাম। তবে এই ডিপার্টমেন্ট কাজ করব তা কখনও ভাবিনি। পুলিশের সার্জেন্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে খুব আগ্রহী হই। নিয়োগ দেখার পর মনে হয়েছে যে বাংলাদেশে কোন নারী সার্জেন্ট নেই। এই চাকরি হলে আমি প্রথম নারী সার্জেন্ট হব। এটা একটা ইতিহাস হবে এ বিষয়টা চিন্তা করেই রোমাঞ্চিত হই। সেই সময়ে পুলিশের সার্জেন্ট পোস্টে আবেদন করার প্রবল ইচ্ছা জাগে। বাবাকে বলি আমি আবেদন করতে চাই। বাবা প্রথমেই সাফ না করে দিলেন। বাবা অনেক সহজ সরল মানুষ। সব সময় আমাকে নিয়ে ভয় পেতেন। তাই পুলিশ সার্জেন্ট হয়ে রাস্তায় কাজ করার কথা ভেবে তিনি আরও ভয় পেয়ে যান। তবে আমার মা অনেক সাহসী। আমার সব কাজেই তিনি সাপোর্ট করতেন। ‘এ চাকরির জন্য প্রথমে আমার মা বাবা কেউই রাজি ছিলেন না। তবে আমার আগ্রহ দেখে পরে মা সমর্থন দিয়েছেন আমাকে। বাবা এখনও ভয় পান। উনি বলেন যে গাড়ি চাপা পড়ে কোনদিন মরে যাব। বাবা মনে করেন রাস্তায় গাড়ি সামলানো এটা ছেলেদের কাজ। আমি পারব কিনা। কখন না পেছন থেকে গাড়ি চাপা দেয় এ ধরনের ভয় তার মনে এখন কাজ করে। তবে মা সব সময় সমর্থন ও সাহস দিয়েছে আমাকে। তাই এই চাকরিতে আবেদনের জন্য মা বাবাকে রাজি করিয়েছেন। সব ধরনের মানসিক সাপোর্ট আমি মার কাছ থেকে বেশি পেয়েছি। হৈমন্তী জানান, তার এই পেশার প্রতি শুরু থেকেই স্বামীর সমর্থন এবং অনুপ্রেরণা ছিল। ‘ও সব সময়ই আমকে সাপোর্ট করে।
×