ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তাইজুল-নাঈমের ব্যাটে দিন পার

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

তাইজুল-নাঈমের ব্যাটে দিন পার

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্ট পাঁচদিনের খেলা। বেশিরভাগ দিন যে দল জয় করে, তারাই টেস্ট জিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথমদিনটি বাংলাদেশের হয়ে গেল। মুমিনুল হকের ১২০ রানের অসাধারণ ইনিংসে প্রথমদিনে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রান করল বাংলাদেশ। এখনও ২ উইকেট হাতে আছে। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা নাঈম হাসান (২৪*) ও তাইজুল ইসলাম (৩২*) ব্যাট হাতে আছেন। দুইজন মিলে নবম উইকেটে ৫৬ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন। আজ দ্বিতীয়দিনে এই দুইজন ব্যাট হাতে নামবেন। বাংলাদেশের স্কোর আরও বড় করার আশা আছে। আর তা যদি হয় তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভাল কিছু করার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে যাবে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হচ্ছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার প্রথম টেস্ট। টেস্টটিতে টস জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ইনজুরি মুক্ত হয়ে টেস্ট খেলতে নামা সাকিব আল হাসান। শুরুতেই অবশ্য ধাক্কা মিলে। স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ না হতেই টেস্টে ফেরা সৌম্য সরকার আউট হয়ে যান। তবে এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধু জুটির সাফল্য মিলেছে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হক মিলে ১০৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররা যতই গতির ঝড় তোলার চেষ্টা করে যান, তাতে কোন কাজ হয়নি। ‘নতুন জীবন’ ইমরুল ও মুমিনুল দুইজনই পান। তা খেলারই অংশ। সেই সুযোগ মিলে ইমরুল হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে থাকতে আউট হন। ১০৫ রান হতে ইমরুল আউটের পর মোহাম্মদ মিঠুন ব্যাট হাতে নেমে মুমিনুলকে ভালই সঙ্গ দেন। আরও বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা হচ্ছিল। কিন্তু ১৫৩ রানে গিয়ে মিঠুন সাজঘরে ফিরলে একটু চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ থেকে দলকে মুক্ত করেন মুমিনুল ও সাকিব। সাকিবকে নিয়ে ছিল সংশয়। সত্যিই টেস্ট খেলতে পারবেন? সেই প্রশ্নও ছিল সবার মনে। সব সংশয় দূর করে টেস্ট অধিনায়ক খেলতে নামেন। ব্যাট হাতে নেমে উজ্জ্বলতাও ছড়ান। যদিও ইনিংস খুব বড় করতে পারেননি। কিন্তু ৩ উইকেট পড়ার পর মুমিনুলের সঙ্গে যেভাবে এগিয়ে যান, জুলাইয়ের পর টেস্ট খেলতে নেমে প্রশংসাই পাচ্ছেন। এত দ্রুত আঙ্গুলের ইনজুরি থেকে মুক্ত হয়ে মাঠে নেমে যাবেন তা ভাবনাই ছিল না। সাকিব শেষ পর্যন্ত নামলেন। দলকেও এগিয়ে নিয়ে গেলেন। সাকিবের সামনেই ১৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে ফেলেন মুমিনুল। তামিম ইকবালের সমান, বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন মুমিনুল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই ছয় নম্বর সেঞ্চুরি করেন মুমিনুল। চলতি বছর এটি বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের চতুর্থ সেঞ্চুরি। চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় থাকা বিরাট কোহলির পাশে বসলেন তিনি। যখন দলের ২২২ রান হয় তখন ১৬৭ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ১২০ রান করে গ্যাব্রিয়েলের বলে আউট হয়ে যান। মুমিনুল অধ্যায় শেষ হলেও শেষ হয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এদিন দলকে কিছুই দিতে না পারলেও সাকিব ৩৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হন। ততক্ষণে দল ২৩৫ রানে চলে যায়। একটা ভাবনা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত দল প্রথম ইনিংসে ৩০০ রান করতে পারবে তো? সেই ভুল ভেঙ্গে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। অষ্টম উইকেটে মিরাজ ও নাঈম মিলে ২৪ রানের জুটি গড়ে দলকে ২৫৯ রানে নিয়ে যান। এরপর নাঈম ও তাইজুল মিলেতো প্রতিরোধই গড়ে তুলেন। কি পেস, কি স্পিন; কোন কিছুই এ দুইজনকে রুখতে পারেনি। দুই স্পিনার নাঈম ও তাইজুল মিলে ব্যাটসম্যানরূপে আবির্ভূত হলেন। দুইজন মিলে দলকে ৩০০ রানেও নিয়ে যান। আরও এগিয়ে যেতে থাকেন। যখন ৩১৫ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয় প্রথমদিন শেষ হয়। দুইজন যেন গর্বের সঙ্গেই মাঠ ছাড়েন। হাসিমুখে মাঠ ছাড়েন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জবাব দেয়ার টেস্ট সিরিজ চলছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। এবার ২০১২ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে এসেছে। বর্তমান বাংলাদেশ দলের সঙ্গে বাংলাদেশের মাটিতে এখনও টেস্ট খেলা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তাই বাংলাদেশের সক্ষমতার সঙ্গে পরিচয় হয়নি। বাংলাদেশের এমন সুসময়ে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডও ছাড় পায়নি। হার হয়েছে এ দুই দলের। ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও কী ছাড় মিলবে? সেই ছাড় দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে পাত্তা না পাওয়ার প্রতিশোধ এবার দেশের মাটিতে নেয়ার সুযোগ। সেই সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না বাংলাদেশ। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিতে চায়। ২০০৯ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারের স্বাদ দিতে চায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। দুটিতে জিতেছে। ২০০৯ সালে দুটি জয় আছে বাংলাদেশের। হেরেছে ১০টি টেস্টে। ২০১১ সাল থেকে সর্বশেষ সাত টেস্টে বাংলাদেশই হেরেছে। এবার সেই হারের গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার পালা। নিজ দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যে বিপদেও ফেলা সম্ভব তা প্রথমদিনই বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে প্রথমদিনেই যে রান করেছে বাংলাদেশ, এর সঙ্গে দ্বিতীয়দিনে আরও ১০০ রান যোগ করা গেলে; ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিপদে পড়ে যাবে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে ম্যাচ। প্রথমদিনের সুফল এখন সামনের দিনগুলোতেও নেয়া গেলেই হয়।
×