ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিডির রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশে রাজনীতি এখন সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক বিনিয়োগ

এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে উদ্যোক্তা রাষ্ট্রে যেতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে উদ্যোক্তা রাষ্ট্রে যেতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রতিফলন থাকা উচিত বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, এলডিসি উত্তরণে উন্নয়ন রাষ্ট্র থেকে উদ্যোক্তা রাষ্ট্রে যেতে হবে। আর উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সরকারী নীতিগত সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে উত্তরণ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিপিডি। ওই অনুষ্ঠানে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতিই এখন সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক উদ্যোগ। আগামী নির্বাচনের ভেতরে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর উপস্থিতি যথেষ্ট দৃশ্যমান রয়েছে। রাজনীতিবিদদের চেয়েও হয়তো ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরই তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমান উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এখন প্রয়োজন বোধ করছেন তাদেরও রাজনীতিতে যুক্ত হতে হবে। কারণ যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা তারা অনেক ক্ষেত্রে পেয়েছেন, সেটা একমাত্র রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য দ্বারাই সুরক্ষা করা সম্ভব। তিনি বলেন, কর অবকাশ থেকে শুরু করে নতুন একটি ব্যাংকের কথা বলেন, দেখবেন-এগুলো বিশেষভাবে আনুকূল্যের ভিত্তিতে হয়েছে। সেজন্য তারা রাজনীতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে এটাকে সুরক্ষা দিতে চান। দেবপ্রিয় বলেন, আবার রাজনীতিবিদরাও এখন অনেক বেশি ব্যবসার দিকে যুক্ত হচ্ছেন। রাজনীতিবিদরাও এখন ব্যবসায়ী হয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা একে অপরের সমর্থনে কাজ করছেন। এ কারণে দেশের সাধারণ নাগরিকরা কে রাজনীতিবিদ আর কে ব্যবসায়ী তা বুঝে উঠতে পারছে না। তাদের সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে- বাংলাদেশে এখন রাজনীতি সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক উদ্যোগ। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনী হলফনামায় দেয়া প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই সঙ্গে ঋণখেলাপী ও কর ফাঁকিবাজদের তথ্যও জনগণের সামনে তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলের, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হবো। এ জন্য উন্নয়ন রাষ্ট্র থেকে উদ্যোক্তা রাষ্ট্রে যেতে হবে। উদ্যোক্তা শ্রেণী সৃষ্টি করতে চাইলে সরকারের নীতিমালার সাহায্য লাগবে। আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বড় বাজার হবে বাংলাদেশ। এ কারণে এখন থেকেই উদ্যোক্তা তৈরিতে নজর দেয়া প্রয়োজন। দেবপ্রিয় বলেন, আগামী নির্বাচনের পরে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন তখনই তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ ঘোষণা দিয়ে নিবন্ধন করবেন। যেখানে বলতে হবে, এই এই খাতে আমার ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে, বিনিয়োগ আছে, আমার পরিবার এটার সঙ্গে যুক্ত। তাহলে আইন প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে উনি যখন মতামত দেন, তখন বুঝতে পারব উনি কতখানি নীতির ভিত্তিতে কথা বলছেন। কতখানি ব্যক্তি স্বার্থে বলছেন। এই স্বচ্ছতা যদি আমাদের সংসদের ভেতরে না আসে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, তাহলে আগে যে স্বার্থগুলোর কথা বলেছি, যে বিকৃতির কথা বলেছি তা চলে আসবে। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রতিফলন থাকা উচিত। আমরা উন্নয়নশীল দেশ উন্নীত হতে যাচ্ছি। এ কারণে এখন থেকে বেশি করে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। আবার উদ্যোক্তা শ্রেণী সৃষ্টি করতে চাইলে সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, একটি দেশের প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির জন্য একই রকম রাজনীতি দরকার। এর মাধ্যমে একটি বিনিয়োগ, উদ্যোক্তাবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনীতির জন্য সুশাসন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
×