ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রশাসন ও পুলিশ কর্তাদের প্রত্যাহার চেয়ে ইসিতে ফের বিএনপির চিঠি

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

জনপ্রশাসন ও পুলিশ কর্তাদের প্রত্যাহার চেয়ে ইসিতে ফের বিএনপির চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবারও চিঠি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি প্যাডে লেখা এবং ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে বিএনপির মহাসচিবের স্বাক্ষর করার এসব চিঠি বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের পৌঁছে দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। প্রত্যাহার চাওয়া এসব কর্মকর্তার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সচিবও রয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসনের কয়েক সচিব, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও কয়েক জেলা প্রশাসকের নাম রয়েছে। এছাড়া পুলিশের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপারের মতো পদধারী ৬০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। চিঠিতে বিএনপির পক্ষ থেকে ১৩ দফা দাবিও কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির ছেলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সভা হয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে তারা। এছাড়া নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অন্য এলাকার লোকজনকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, ‘দলকানা’ লোকদের পদায়ন, সার্কিট হাউসে ইসি সচিব ও মুখ্যসচিবের কথিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে ১৩ দফায়। কমিশনে চিঠি পৌঁছে দেয়ার পর মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাংবাদিকদের বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য পুলিশের দলবাজ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সিইসি নিরপেক্ষ থাকার জন্য পুলিশকে আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বান জানানো মানে অনুরোধ করা। তিনি তো নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পরে সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা যে কাজগুলো করতে পারেন না, সে কাজগুলো অনবরত করা হচ্ছে। তার কয়েকটি উদাহরণ তাদের কাছে তুলে ধরে প্রতিকার চেয়েছি। তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা যেগুলো চোখে পড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতির পুত্র আওয়ামী লীগের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। বঙ্গভবনে এলাকার লোকজন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের রাষ্ট্রীয় খরচে আদর-আপ্যায়ন করা হয়েছে। এগুলো প্রভাব বিস্তারের উদাহরণ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এনটিএমসি ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) বিতর্কিত দলকানা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন। এসব ব্যক্তি কিছুদিন আগে থেকেই কার্যক্রম শুরু করেছেন। তারেক রহমানের স্কাইপি কথোপকথন বন্ধ করেছেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের আশপাশে ইন্টারনেট কার্যক্রম বন্ধ করেছেন, যেটাও আচরণবিধির লঙ্ঘন। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢালাও অভিযোগ করি না। লিখিতভাবে সব তথ্যপ্রমাণসহ ইসিতে জমা দিয়েছি। গণহারে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এদের সঙ্গে জনপ্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদেরও প্রত্যাহার চাওয়া হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতাসীনরা এমন আচরণ করছে, মনে হচ্ছে ভোট থেকে সরে যেতে বাধ্য করার জন্যই তারা তড়িঘড়ি করছে। আমরা অবিলম্বে সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিইসির নির্দেশনা চেয়েছি, যাতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকে। বলেন, নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারদের ডেকে গত ১৬ নবেম্বর বৈঠক করেছেন। পরে ২০ নবেম্বর চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, তার এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ডেকে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব ঘটনা নির্বাচন আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার দাবি বিএনপির চিঠিতে জনপ্রশাসন সচিব, ইসি সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, চট্টগ্রাম ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম, ভোলা, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, নড়াইল, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকদের (রিটার্নিং অফিসার) প্রত্যাহার চাওয়া হয়েছে। র‌্যাবের ডিজি ও ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশ প্রশাসনের ৭০ কর্মকর্তার নামও রয়েছে যাদের ভোটের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে বলা হয়েছে চিঠিতে। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, ভোলা, বরিশাল, সিলেট, শেরপুর, ময়নসিংহ, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার পুলিশ সুপারের নামও প্রত্যাহারের তালিকায় রয়েছে।
×