ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার কথা বলে বিএনপি গৃহযুদ্ধের ইন্ধন দিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার কথা বলে বিএনপি গৃহযুদ্ধের ইন্ধন দিচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভোট কেন্দ্রে পাহারা দেয়ার কথা বলে বিএনপি সংঘাতে উস্কানি দিয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিএনপির আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ দূরের কথা, বাংলাদেশের কোথাও একটা বিরোধিতাও দেখলাম না। তাই ফখরুল সাহেবরা স্বপ্ন দেখতেই পারে। বৃহস্পতিবার র‌্যাডিসন হোটেলে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির জনগণের ওপর যদি তাদের আস্থা থাকে, তাহলে তারা কিভাবে অবিরাম এগ্রেসিভ মুডে কথা বলছে? কিভাবে অবিরাম তারা আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছে? তারা গৃহযুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে। কারণ, কেন্দ্রে কেন্দ্রে তিন শ’ থেকে পাঁচ শ’ লোক পাহারা দেয়ার অর্থ কি? আমরাও যদি কেন্দ্রে কেন্দ্রে তিন থেকে পাঁচ শ’ লোকের ব্যবস্থা করি, তাহলে অবস্থাটা কি হবে? তাহলে ভোট হবে না, গৃহযুদ্ধ হবে। ভোট হবে না, ভায়োলেন্স হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির ঐক্যফ্রন্ট যেভাবে এগ্রেসিভ টোনে কথা বলছে, সেটা কিন্তু সংঘাতের উস্কানি দিচ্ছে। এই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘিœত করবে, নষ্ট করবে। তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারাদার নিয়োগের নামে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে, এটা সহ্য করা যায় না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, অবিরাম তারা আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছে। নির্বাচনী গণতন্ত্র তাদের ভাষায় নেই। আজকে দেশের জনগণ একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। বিএনপি আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করে নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশকে নষ্ট করছে। এটাই আমার প্রশ্ন, কেন তারা এমন করছে? নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে বিএনপির এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা ইসিকে জিজ্ঞাসা করুন, আমার দৃষ্টিতে কোন পক্ষপাতমূলক আচরণ পাচ্ছি না বরং আমরা কিছু অভিযোগ করেছি তারা বলেছে না, আরপিও কভার করে না। তাই আমাদের অনেক কিছু ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের আচরণেও ধৈর্যের পরিচয় দেব। হয়রানিমূলক মামলায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বিএনপির এমন অভিযোগ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পল্টনের মতো জায়গায় যদি নৃত্য করতে করতে পুলিশের গাড়ির ওপর চড়াও হয়, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে ফেলে, পুলিশের ওপর হামলা করে। তারা কী নিরপরাধ? তারা যদি প্রার্থীও হয়, তাহলে কি ক্ষমা করা যাবে? ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব বিএনপির হাতে যাচ্ছে এমন বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা তো আগেই বলেছি, এখানে ঐক্যফ্রন্ট কোন বিষয় নয়। ঐক্যফ্রন্ট শুধু একটি জোটে রূপ নিয়েছে। যেহেতু তাদের নেত্রী-নেতা দ-িত। তাদের চেয়ারপার্সন কারাগারে, এই অবস্থায় কামাল হোসেনকে তারা ব্যবহার করছে এবং আরও কিছু কিছু নিয়ে আসছে। আজকে এই ঐক্যফ্রন্টের চালিকাশক্তি হচ্ছে বিএনপি এবং এই ঐক্যফ্রন্টের সব কর্মকা-ের নির্দেশনা আসছে লন্ডন থেকে। লন্ডন থেকে তারেক রহমান যে নির্দেশ দিচ্ছে তার অঙ্গুলি হেলনে আজকে ঐক্যফ্রন্ট চলছে, এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ও অন্যান্য যারা আছে তারা দিনে দিনে আরও পরিষ্কার হবে যে, তাদের কানাকড়িরও দাম নেই। তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। জরিপের চেয়ে প্রশাসনে গুরুত্ব রাখতে পারে এমন ব্যক্তিদের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, কে বলেছে? এটা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা সম্পূর্ণ সার্ভে রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই মনোনয়ন দিচ্ছি। এখানে কোন আপোস করে লাভ নেই। জনগণ চায় না এমন প্রার্থীকে কেন আমরা মনোনয়ন দেব, পরাজিত হওয়ার ভয় আছে না। জামায়াতে ইসলামী স্বতন্ত্রের নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রার্থী হচ্ছে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, জামায়াতে ইসলাম তাদের জোটে আছে। বিএনপির এই জানের জান দোস্তকে কখনও হারাতে চায় না। কখনও তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে না। কারণ, তদের অবস্থা এমন হচ্ছে যে জামায়াতের শক্তির ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে হলে জামায়াতের সেই জঙ্গী শক্তিটা দরকার আছে। তাদের ছাড়বে না এটাই স্বাভাবিক। বিএনপি ক্রমেই তাদের নেতিবাচক রাজনীতির কারণে শক্তিহীন হচ্ছে। এই শক্তিটা প্রদর্শনের জন্য জামায়াতকে দরকার। বিএনপি থেকে অনেকেই আ’লীগে আসতে চান ॥ এদিকে বুধবার দুপুরে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিতে আগ্রহী। যদি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) ক্লিয়ারেন্স পাই বা নেত্রী সবুজ সংকেত দিলেই, সারাদেশ থেকে বিএনপির বিপুল নেতাকর্মীর যে স্রোতধারা আওয়ামী লীগ অভিমুখে যাত্রা করবে, এই যাত্রা মির্জা ফখরুলরা বন্ধ করতে পারবে না। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী দিনে দল বদলের রাজনীতির কোন চমক আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঘোড়া বদলের যে রাজনীতি, এটা গণতান্ত্রিকদেশগুলোতে নতুন কোন বিষয় নয়। নতুন কোন দৃশ্যপটও নয়। নির্বাচনে কে কোনদিকে অবস্থান নেবে, ইতোমধ্যে তো অনেকেই দলবদল করেছেন। আমরা কিন্তু এখনও আমাদের নেত্রীর ক্লিয়ারেন্স পাইনি। বিএনপি থেকে কত আসে দেখুন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, গত ৪৩ বছরে এই দেশে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) মতো ভাল মানুষ আছেন? দেশের ক্ষমতায় তিনি আবারও ফিরে আসুন, এটা জনগণের প্রত্যাশা। যে কোন দেশী-বিদেশী জনমত জরিপেও আমরা অনেক এগিয়ে আছি। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা আমাদের নেত্রীর চেয়ে একটু কম হলেও নেত্রী আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তিনি এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেছেন, তার ধারে কাছেও কেউ নেই। কাজেই আমরা আশাবাদী ইনশাল্লাহ নৌকার বিজয় হবে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও আশা করছেন যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আবার ফিরে আসেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে বিএনপি সরে যাওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই আশঙ্কা এই মুহূর্তে করতে চাই না। কারণ আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চাই। ইলেকশনে যদি কম্পিটিশন না থাকে তাহলে রেজাল্টের কোন মজা নেই। তিনি বলেন, বিএনপি ইতোমধ্যে টের পেয়েছে যে, ‘ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার’ ভোট হলে তাদের নির্বাচিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ তাদের নেতিবাচক কর্মকা-ে দেশের জনগণ বিরক্ত। তারা এখনও নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সেটা তারা প্রমাণ করেছে তফসিল ঘোষণার পর পল্টনে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন দলের অভিযোগের বিষয়ে কাদের বলেন, তারা একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে। আমার বিশ্বাস ভাল একটা নির্বাচন হবে। অহেতুক ইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, যা ঠিক নয়। আগাম বিজয়ের নিশ্চয়তা না পেলে নির্বাচনের ফল পর্যন্ত তারা নানা অবান্তর অভিযোগ করেই যাবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×