ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ দিন আগে সেনা ॥ ভোট যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

১৫ দিন আগে সেনা ॥ ভোট যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে এবার ১৫ দিন আগেই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় তারা জেলা পর্যায়ে ছোট ছোট টিমে বিভক্ত হয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে। ১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট দল পুলিশের সঙ্গে দেখা করবে। সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম প্রতিটি জেলাতেই থাকবে। এদের নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। অন্যান্য বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ সভায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি তিনি এই নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহরের পর আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আরও ১২ দফা নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তিনি এ সময় পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ প্রশাসনের কারণে নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ না করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, যদি কোন তথ্য জানার প্রয়োজন হয় গোপন সূত্র থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে। এ সময় তিনি ইসিতে বিএনপির জমা দেয়া মামলার তালিকা সম্পর্কে বলেন, বিএনপি যেসব তালিকা দিয়েছে তা অধিকাংশই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে করা মামলা। এ সময় তিনি পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে তফসিল ঘোষণার পর কাউকে যাতে হয়রানি বা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশনা দেন। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা কমিশনের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল। তবে কবে থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে সে বিষয়ে ইসি বরাবরই বলে আসছিল; বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এর আগে জানান, নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন থাকবে। তবে গত ৮ নবেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সিইসি বলেন, এবারের নির্বাচনেও আগের মতো সেনা মোতায়েন হবে। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েনে তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে না। এর আগে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এক বৈঠক শেষে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা না দেয়া হলেও অন্তত প্রতিকেন্দ্রে সেনাবাহিনী রাখার দাবি করেন কমিশনের কাছে। বিএনপি সব সময়ই ইসিকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু বিচারিক ক্ষমতা ছাড়াই এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এ সময় সিইসি পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য একমাত্র পুলিশেরই আছে। তাই বিভিন্ন বাহিনী পুলিশের কাছ থেকেই পরামর্শ নেবে। পুলিশকে এখনই কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট টিম পুলিশের সঙ্গে দেখা করবে। প্রুতি জেলায় থাকবে সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম। এদের নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করবেন। তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। অন্যান্য বাহিনীও ম্যাজিস্ট্রেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কারণে যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সব দল অংশ গ্রহণ করছে। কমিশন থেকেও নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রজাতন্ত্রের সবাই মিলে কাজ করতে হবে। নির্বাচনে সিংহভাগ দায়িত্ব পুলিশের থাকে। ভোটারের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের ওপরই বেশি থাকে। এ সময় তিনি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়েও কথা বলেন। পুলিশের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধ করা ঐতিহ্যগতভাবেই আপনাদের দায়িত্ব। এবারও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধান মতে কর্তৃত্ব নয়, বিবেক মতো কাজ করতে হবে। নির্বাচন যেন কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশন তা নজরদারি করবে। ইতোমধ্যেই অভিযোগ আসা শুরু করেছে। তবে নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভালভাবে যাচাই না করে কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময় তিনি পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে নিষেধ করেন। বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করার কথা আমরা বলিনি। এটা আপনারা করবেন না। কারণ, এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যারা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা তারা বিব্রত হন। আমরা এটা চাই না। যদি তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়, তবে গোপন সূত্র ব্যবহার করে সংগ্রহ করতে পারেন। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। এটা আমরা চাই না। তফসিল ঘোষণার পর কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা যাবে না। কারও বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। কাউকে হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেফতার করা যাবে না। আশা করি, আপনারা এটা করছেনও না। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া বিএনপির মামলার বিষয়ে উল্লেখ করেন। বলেন, মামলার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে শুরুতে ৪ থেকে ৫ হাজার জনের একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওসব মামলা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের। আর এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে করা মামলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিএনপির পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তাই ব্যবস্থা নিতে পারছি না। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, পুলিশ বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে পুলিশ একটি অন্যতম সংস্থা। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব। দেশবাসীকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশব্যাপী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে প্রতিটি সংসদীয় এলাকার জন্য রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচন সম্পর্কিত আইন, বিধিবিধান, পরিপত্র, প্রজ্ঞাপনসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে। আরো অনেক নির্দেশনা জারি করা হবে। নিবর্চান পরিচালনা বিষয়ে সকল রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফ করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদেরও ব্রিফ করা হয়েছে। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনার্থে সারাদেশে ৬শ’র উপরে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ২৪, ২৫, ২৬ নবেম্বর তাদেরও ব্রিফ করা হবে। এছাড়া কমিশনের পক্ষ থেকে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে-পরে ও ভোটের দিনের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু রাখতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নির্বিঘœ করা, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের নিরাপত্তা, নির্বাচনী সামগ্রী কেন্দ্রে পৌঁছানোর নিরাপত্তা, নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিরাপত্তায় পুলিশ পাহারা দেয়া, নির্বাচনের আগে, ভোটের দিন ও ভোট পরবর্তী সার্বিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখার বিষয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়। সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, ডিএমপি কমিশনার, এনআইডি উইংয়ের ডিজি, ইসির অতিরিক্ত সচিব, বিভিন্ন রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, মেট্রোপলিটনের কমিশনারসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×