ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। অগ্রগতির নানা খবর আসছে প্রতিদিন। এই যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে বাংলাদেশ, যে সে কথা? অথচ নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলেছে কাজ। ঢাকায় হচ্ছে মেট্রোরেল। সাধারণের কল্পনাতেও ছিল না- এমন বড় কাজ, যুগান্তকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পাওয়া হয়েছে বিশ্ব স্বীকৃতি। এই অদম্য শক্তি ও সাহসের উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বাদ-বাকিদের কাজটা কী? এ প্রশ্ন কিন্তু মাঝে মধ্যেই উঠছে। নানা ইস্যুতে আসছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। একইরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া হলো কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে। বহু আগের নির্মাণ হলেও, ভবনের নান্দনিক নক্সা এখনও নজর কাড়ে। দারুণ প্রশংসিত। ঢাকাকে চেনার অন্যতম প্রধান প্রতীক বলা চলে এটিকে। অথচ গত দু’দিন আগে রাজধানী শহরে অবস্থিত দেশের প্রধান রেলস্টেশনে পা রেখে হতবাক হয়ে যেতে হলো। গোটা অঙ্গনটিকে মনে হচ্ছিল ভাগাড়। কী যে নোংরা করে রাখা হয়েছে! যাত্রীদের আসা-যাওয়া না থাকলে পরিত্যক্ত স্টেশন বলেই মনে হতো। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, উঁচু দেয়ালের প্রতিটিতে কয়েক স্তর ধুলো জমে আছে। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে নোংরা কোন রান্নাঘরের দেয়াল। পানের পিক, এটা ওটা মোছার দাগ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। দেয়ালে একবার পিঠ ছোঁয়ালে, নিশ্চিত করেই বলা যায়- শার্টের রং বদলে যাবে। টিকেট কাউন্টারের ঠিক ওপরে একটি করে ফ্যান ঝুলছে। ফ্যানগুলোর দিকে তাকানো যায় না। ময়লার ভারে যেন নুইয়ে পড়ছে। কোন্টি সচল আর কোন্টি অচল বোঝার উপায় নেই। কারণ মাকড়সার জালে ঘেরা ওই খাঁচার ভেতর থেকে বাতাস ঠেলে বের করা মুশকিলের কাজ। ভবনের ওপরের দিকে তাকালে যে নির্মাণশৈলী চোখে পড়ত, এখন তা-ও উপভোগ করার অবস্থায় নেই। ধুলোর ভয়ে বেশি সময় তাকানো যায় না। আর নিচে? না তাকালেই নয়। দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে হলে মেঝের দিকে চোখ রেখেই হাঁটতে হবে আপনাকে। একটু ভুল করলেই পা পড়বে গর্তে! মোজাইক করা মেঝেতে গর্ত? অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু সত্য। মূল স্টেশনে প্রবেশ করতেই দু’পাশে যে বিশাল খোলা চত্বর, সেখানে অসংখ্য গর্তের তৈরি হয়েছে। ড্রেনের মতো অনেক জায়গা পার হয়ে টিকেট কাউন্টারে যেতে হয়। প্ল্যাটফর্মে যাওয়া এবং আসার সময় ছোটখাটো খাল অতিক্রম করতে হয় সব যাত্রীকে। মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঝখানে যে নক্সা করা হয়েছিল, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ড্রেনে পরিণত হয়েছে। এক ঘণ্টার মতো সময় সেখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, আসা-যাওয়ার পথে একটু পর পরই হোঁচট খাচ্ছেন যাত্রীরা। দেরি করে স্টেশনে আসা এক নারী যাত্রী ট্রেন ধরার জন্য দ্রুত পা চালাচ্ছিলেন। আর যায় কোথায়? প্রায় উপুড় হয়ে পড়লেন তিনি। পেছন থেকে কেউ একজন তাকে ধরার চেষ্টা করলেন বটে। শেষ রক্ষা হলো না। পাশে থাকা সুমন আহমদ নামের এক যাত্রী প্রায় চিৎকার করে উঠলেন। বললেন, আমার স্ত্রীর যে পতন দেখলেন সেটি পতন নয়। পতন হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। যুক্তি মেনে নিয়ে শোয়েব নামের আরেকজন বললেন, এটা তো টাকা-পয়সার বিষয় নয়। রুচির দুর্ভিক্ষ। সৌন্দর্যজ্ঞানের অভাব। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সৌন্দর্যের জ্ঞান আছে এমন অন্তত একজন লোক নিয়োগের পরামর্শও দেন তিনি। দুঃখ করে বলেন, দেশে বড় বড় স্থাপনা হচ্ছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণটাই কেউ শিখল না। এ কারণে আমাদের সিভিক সেন্স নিয়ে বিদেশীরা প্রশ্ন তোলেন। পাশে থাকা আরেকজনের পরিচয় জানা গেল না। তিনি বলছিলেন, কর্তৃপক্ষের দেখার মতো কারও দেখার চোখ নেই। আর যারা প্রতিদিন দেখেন তাদের চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। তা না হলে স্টেশনটির এই চেহারা হতে পারে? যারা দায়িত্বে আছেন তারা কী করে মেনে নেন? এভাবে বেশ কয়েক মিনিট ধরে চলল সমালোচনা। এখন কথা হচ্ছে, রেলওয়ের মন্ত্রী-ডিজিরা কি এত ‘ছোটখাটো’ বিষয় দেখার সময় পাবেন? পর্যটন মৌসুম এখন। বেড়ানোর সময়। সবাই সুযোগ খুঁজছে। ঠিক তখন মাত্র একদিনের বাড়তি ছুটি। তাতে কী? টেনে যে যার মতো লম্বা করে নিয়েছেন। গত বুধবার ছিল ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। ওই দিনে সরকারী ছুটির পাশাপাশি পরদিন বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগত ছুটি নিয়েছেন অনেকেই। আর শুক্র ও শনিবার তো সাপ্তাহিক ছুটি। সব মিলিয়ে চারদিনের কর্মবিরতি। পর্যটন মৌসুমের শুরুতে হওয়ায় সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন ঢাকার ভ্রমণপিপাসুরা। আগে-ভাগেই খোঁজ-খবর রাখছিলেন তারা। সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতিও চলছিল। মঙ্গলবার অফিস-আদালত শেষ করে রাতেই বড় অংশটি ঢাকার বাইরের পা বাড়ায়। বুধবার রাস্তায় নেমে তাই অবাক হতে হয়েছে। বেশ ফাঁকা রাস্তা। বৃহস্পতিবার আগের দিনের চেয়েও কম যানজট। স্বস্তির যাতায়াত লক্ষ্য করা গেছে। এখনও ঢাকার মধ্যে যে কোন গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে সামান্যই। রবিবার পর্যন্ত পরিবেশটি এক থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনের কথা না বললেই নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। সারাদেশের মতো রাজধানীতেও এই এক আলোচনা। বুধবার ধানমন্ডি এলাকায় গিয়ে মনে হলো কোন উৎসব চলছে। এখানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়া শেষ। তবুও ভিড় কমেনি এতটুকু। কেন? জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার এক নেতা বলছিলেন, পার্টি অফিস ছাড়া যাবে না ভাই। আমার লোকেরা এলাকায় কাজ করছে। এখানেও থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের চোখের সামনে না থাকলে নাকি তারা ভুলে যান! বিএনপির গুলশানের অফিসের সামনেও অভিন্ন চিত্র। সেদিন তো মারামারিও হলো কয়েক দফা। আরও নানা কিছু ঘটবে। তবে শেষটা যেন ভাল হয়। সবার প্রত্যাশা তাই।
×