ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিবীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২১ নভেম্বর ২০১৮

ক্যারিবীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত টাইগাররা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আর মাত্র একদিন, তারপরই সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ দল। নতুন মিশনে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ শুরু বৃহস্পতিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। কি অপেক্ষা করছে সেখানে বাংলাদেশ দলের জন্য। সর্বশেষবার এই সাগরিকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং উপহার দিয়েছিল স্বাগতিকরা। টেস্টটি ড্র হয়েছিল। সম্প্রতি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে অবশ্য কোন ম্যাচ ছিল না সাগরিকায়। আর মাঝের বাজে সময়টা কাটিয়ে ইতোমধ্যেই ঘুরেও দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ দল। তাছাড়া টেস্টের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রেথওয়েটের সঙ্গে টস করতে নামবেন তিনিই। সিরিজের প্রথম এই টেস্টেই কঠিন চ্যালেঞ্জ স্বাগতিকদের জন্য। গত জুলাইয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে দুই টেস্টের সিরিজে চরম লজ্জার শিকার হয়ে ফিরেছিলেন সাকিবরা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মোক্ষম জবাব দেয়ার লড়াই এবার বাংলাদেশের জন্য। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বল মাঠে গড়ানোর কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। প্রতিটি সিরিজেই গুণে গুণে ২টি করে মোট ১৪ টেস্ট হয়েছে। এর মধ্যে ২টি ড্র ও ২টি জয় আছে, বাকি ১০টি ম্যাচেই হারতে হয়েছে। যে দুটি জয় এসেছে সেটি ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। তবে আশ্চর্যের তেমন কারণ নেই। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে দল গেলেও প্রথম টেস্টের প্রথমদিনেই ইনজুরি নিয়ে সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে শুরুটা মধুরতম হয়েছিল সাকিবের। দুই টেস্টে স্বাগতিকদের হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করেছিল সিরিজে। সেবার ক্রিকেটারদের বিদ্রোহের কারণে নিয়মিতদের বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলেছিল ক্যারিবীয়রা। সেই সুযোগেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল সফরকারী বাংলাদেশ দল। কিন্তু নিজেদের মাটিতেও এমন সাফল্য ধরা দেয়নি গত ১৬ বছর ধরে ৭ সিরিজ খেলে। বাংলাদেশের মাটিতে ৩টি আর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ৪টি সিরিজ হয়েছে। দেশের মাটিতে খেলা ৬ টেস্টের মধ্যে একমাত্র সাফল্য ২০১১ সালে সাগরিকার এই মাঠে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র করা। তবে সেই ম্যাচটি ছিল বৃষ্টিতে সঙ্কুল হয়ে পড়া। ২০১২ সালের নবেম্বরে আবার বাংলাদেশ সফর করেছিল ক্যারিবীয়রা। সেবার দুই টেস্টের দুটিতেই সফরকারীরা জিতেছিল সহজে। তবে সেবার ম্যাচ দুটি হয়েছিল খুলনা ও ঢাকায়। সবমিলিয়ে ১৪ টেস্টে ১০ পরাজয়, ২ জয় আর ২ ড্র আছে বাংলাদেশের। সর্বশেষ এ বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে চরম লজ্জায় পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এ্যান্টিগার নর্থ সাউন্ডে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪৩ রানে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। আর সেটি ছিল বাংলাদেশের টেস্টে সর্বনি¤œ দলীয় সংগ্রহ। সেই লজ্জা কাটিয়ে ওঠার জন্য এবার দেশের মাটিতে দারুণ কিছুই করতে হবে সাকিবদের। ৭ বছর পর আবার সাগরিকায় খেলতে নামবে ক্যারিবীয়রা। সর্বশেষবার যখন তারা ২০১১ সালে এ মাঠে খেলেছিল, তখন বৃষ্টির বাধার কারণে প্রায় দেড়দিন ভেসে যাওয়াতে স্বাগতিকদের সঙ্গে ড্র মানতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু সেই জ্বালাটা তারা জুড়িয়েছে পরের সিরিজেই বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে। তারপর থেকে সেই ধারাবাহিকতা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জুলাইয়েও ধরে রেখেছে তারা। সর্বশেষ তিন টেস্ট সিরিজের কোন ম্যাচেই বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ দল। এবার বাংলাদেশ সফরে আসার আগেই ভারতে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে এসেছে উইন্ডিজরা। এতে করে উপমহাদেশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া এবং ভয়ানক স্পিনারদের মোকাবেলা করার যথেষ্ট শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে তাদের। ২ দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে সেটিই দেখিয়েছে তারা দারুণ ব্যাটিং করে। ভারতে টানা একমাস থাকার শুরুটা অবশ্য বিষাদে ভরপুর হয়েছিল তাদের জন্য। সিরিজ শুরু হয়েছিল ২ টেস্ট দিয়ে। সেখানে বাজেভাবেই হেরেছে তারা। তবে ওয়ানডে সিরিজে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ব্যাটসম্যানরা রান পেয়েছেন যা তাদের অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী করেছে। তবে নিয়মিত অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার ইনজুরির কারণে শেষ মুহূর্তে দল থেকে ছিটকে পড়াতে কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে তারা। এরপরও বাংলাদেশের বিপক্ষে অতীত রেকর্ডটা সামনে আসবে আবারও এবং সেটাই প্রেরণা দিবে। স্বাগতিকরা এই মুহূর্তে কিছুটা ভারমুক্তই হয়েছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সদ্যই দুই টেস্টের সিরিজে খেলে ১-১ সমতায় শেষ করেছে প্রথম টেস্টে বিমূঢ় করে দেয়া হারের পরও। দুই অপরিহার্য ক্রিকেটার সাকিব ও তামিম ইকবাল একসঙ্গে ছিলেন অনুপস্থিত। এরপরও দ্বিতীয় টেস্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং ও বোলিং নৈপুণ্যে জয় ছিনিয়ে নেয়ার পর টানা ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পেরেছে দল। আর এখন ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে নামার আগে যোগ হয়েছেন সাকিব। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত খেলবেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। তিনি না খেললে আবারও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই দিবেন নেতৃত্ব। তবে রানের মধ্যে থাকা সৌম্য সরকার আসাতে আরেকটু শক্তি বেড়েছে দলের। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টপঅর্ডারদের ব্যর্থতা ভুগিয়েছে। এবার সৌম্য যোগ হয়েছেন এবং ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে রানের মধ্যে থাকা তরুণ ওপেনার সাদমান ইসলাম যোগ হয়েছেন। এতে করে ইমরুল কায়েসের ওপর চাপ বেড়েছে ভাল কিছু করার। দলের ভারসাম্য আরও তৈরি হয়েছে ১৮ বছর বয়সী ডানহাতি অফস্পিনার নাইম হাসান যোগ হওয়াতে। ক্যারিবীয়দের স্পিন আক্রমণেই কাবু করার পরিকল্পনা আঁটছে বাংলাদেশ সেটা স্পষ্ট হয়েছে দু’দিনের অনুশীলনে। স্কোয়াডে থাকা নাইম, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিবরা দীর্ঘক্ষণ বোলিং করেছেন নেটে। দু’দিন অনুশীলনের পর মঙ্গলবার হুট করেই বিরতি দেয়া হয়েছে। আজ শেষবারের মতো অনুশীলন করবে বাংলাদেশ দল। আর বৃহস্পতিবার নামবে লড়াইয়ে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে খেলা একাদশে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা যাবে এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে। সাকিব খেললে একাদশ হবে এক ধরনের এবং তিনি না খেললে হবে আরেক ধরনের। তবে দু’দিন অনুশীলনে সাকিব যে পরিমাণ অনুশীলন করেছেন তাতে করে তার আবার ফেরাটা নিশ্চিতই। সেক্ষেত্রে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য সাগরিকায় বড় পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে।
×