ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের সামনে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২১ নভেম্বর ২০১৮

 টাইগারদের সামনে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ

যে দল ১৭ বছর ধরে বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিততে পারেনি, সেই জিম্বাবুইয়ে দলটি বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে টেস্টে হারিয়ে দিল। বাংলাদেশকে এবার নাড়িয়ে দিয়ে গেল জিম্বাবুইয়ে। এবার সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ রয়েছে। এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ; যে দলটির বিপক্ষে জুলাইয়ে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল নেই। তাতে কী? ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে অনায়াসেই হোয়াইটওয়াশ করা গেছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাত্তাই পায়নি জিম্বাবুইয়ে। টেস্ট সিরিজেও নিশ্চয়ই পাত্তা পাবে না? এমনই ভাবনা ছিল। কিন্তু সেই জিম্বাবুইয়েই কিনা প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিল! তাও আবার ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল। বাংলাদেশকে লজ্জায় ফেলল। জিম্বাবুইয়ের মতো দলের বিপক্ষেই দুই ইনিংসে ২০০ রানের স্কোরও জমা করতে পারল না বাংলাদেশ। কী লজ্জা! সেই লজ্জার সঙ্গে সিরিজ হারের সম্ভাবনাতেও পড়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট হেরে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে ২০০১ সালের পর ১৭ বছর পর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জিম্বাবুইয়ের কাছে দেশের মাটিতে হারের বিপর্যয়েও পড়ে গেল বাংলাদেশ। এতটাই খারাপ অবস্থা হলো। টেস্টে বাংলাদেশ দলের অবস্থা করুণ। এ বছরতো আরও বিপর্যস্ত দল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামার আগে টানা ৬ ইনিংসে ২০০ রানের ওপরে নেই কোন স্কোর। সব তার নিচে। ১৬৮ রানের ওপরে কোন স্কোর নেই। এতটাই দুর্বিষহ অবস্থায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। এখান থেকে উতরাতে হলে জিম্বাবুইয়েকে দ্বিতীয় টেস্টে হারাতেই হতো। সেই কাজটি ভালভাবেই করেছে বাংলাদেশ। তবে জিম্বাবুইয়েও যে লড়াই করতে পারল সেটি ভবিষ্যতের জন্য অশনি সঙ্কেত হয়েই থাকল। দ্বিতীয় টেস্টেই ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেই মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ২১৯ ও মুমিনুল হকের ১৬১ রানে ৫২২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করল বাংলাদেশ। তাতে মনে হলো জিম্বাবুইয়ে ইনিংসে হারবে এবার। সেই সম্ভাবনাও উঁকি দিল। কিন্তু জিম্বাবুইয়ে যে প্রথম ইনিংসে ব্রেন্ডন টেইলরের ১১০ রানের সঙ্গে পিটার মুরের ৮৩ রানে ৩০৪ রানের লড়াকু ইনিংস গড়ল, ফলোঅনে পড়লেও জিম্বাবুইয়েকে ইনিংসে হারানোর ঝুঁকি নিল না বাংলাদেশ। যদি জিম্বাবুইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে আবার বড় ইনিংস গড়ে ফেলে। ২১৮ রানে এগিয়ে থেকেও তাই বাংলাদেশই আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামল। জিম্বাবুইয়েকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠালে যদি সাড়ে তিন শ’ বা চার শ’ রানের মতো করে ফেলতো জিম্বাবুইয়ে, তাহলেই ঝুঁকি হতো। তাই নিরাপদে থাকতেই বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামল। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ১০১ রানে ইনিংসে ২২৪ রান করে ইনিংসও ঘোষণা করল বাংলাদেশ। তাতে করে জিম্বাবুইয়ের সামনে জিততে ৪৪৩ রানের টার্গেট পড়ল। এই টার্গেট অতিক্রম করা ছিল অসম্ভবই। জিম্বাবুইয়েকে যে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো। শুধু তাই নয়, যে জিম্বাবুইয়ে কখনও ৩০০ রানের টার্গেটেও জিততে পারেনি, সেখানে ৪০০ রানের এত ওপরে রানের টার্গেটে কিভাবে জিতবে? তাই বাংলাদেশ নিরাপদেই থাকল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করা ব্রেন্ডন টেইলর (১০৬*) ঠিকই আতঙ্ক ছড়িয়েছিলেন। যোগ্য সঙ্গী দ্বিতীয় ইনিংসে না পাওয়ায় জিম্বাবুইয়ের হারই মেনে নিতে হয়েছে। ৫ উইকেট পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের অসাধারণ স্পিন জাদুতে হারতে হয়েছে। তবে বাংলাদেশকে ঠিকই নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। জিম্বাবুইয়ে টেস্ট সিরিজে হারেনি। এটিই তাদের ঝুলিতে বড় প্রাপ্তি হয়ে ধরা দিয়েছে। দ্বিতীয় টেস্টে জিতে সিরিজ শেষ পর্যন্ত ১-১ ড্র করে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদেরও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে কী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব? আজ বাদে কাল থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার প্রথম টেস্ট চট্টগ্রামে শুরু হবে। ৩০ নবেম্বর দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে মিরপুরে। এরপর শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। ওয়ানডে সিরিজের তিনটি ম্যাচ হবে ৯, ১১ ও ১৪ ডিসেম্বর। প্রথম দুটি ওয়ানডে মিরপুরে ও শেষটি সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে। এরপর তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজও অনুষ্ঠিত হবে। টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচ সিলেটে ১৭ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচ যথাক্রমে ২০ ও ২২ ডিসেম্বর মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে। শুরুতেই হবে টেস্ট সিরিজ। আর এই সিরিজেই সবার দৃষ্টি বিশেষভাবে আছে। ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে দেশের মাটিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল বাংলাদেশ। আর তাই টেস্ট সিরিজ নিয়েই বেশি ভাবনা আছে। দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যে দলের বিপক্ষে জুলাইয়েই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছয় বছর পর খেলবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মাটিতেও ২০১২ সালের পর, ছয় বছর পর টেস্ট খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই জায়গাতেই বাংলাদেশ একটু ইতিবাচক থাকতে পারছে। বাংলাদেশ যে এখন দেশের মাটিতে দুর্দান্ত দল। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে হারটি নাড়া দিয়েছে। তবে দ্বিতীয় টেস্টেই দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ ঘুরে দাঁড়ানোই বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। দুটিতে জিতেছে। ২০০৯ সালে দুটি জয় আছে বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারানোর সঙ্গে হোয়াইটওয়াশও করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তখনকার দলটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল। তাই সেই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে টেস্টে হারানো নিয়ে সবসময়ই আলোচনা হয়েছে। যখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা হয়েছে, তখনই এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা দূর করতে এখনও পারেনি বাংলাদেশ। ১৪ টেস্টের দুটিতে ড্র করেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ১০টি টেস্টে। ২০১১ সাল থেকে সর্বশেষ সাত টেস্টে বাংলাদেশই হেরেছে। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে জুলাইয়ে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে দল অসাধারণ নৈপুণ্য দেখালেও টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০০৪ সালের পর আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। এতটাই করুণ অবস্থা হয়েছিল বাংলাদেশের। তবে দেশের মাটিতে টেস্টেও দিন পাল্টেছে বাংলাদেশের। দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১২ সালের পর আর খেলেনি বাংলাদেশ। এরপর থেকে দল অনেক উন্নতি করেছে। টেস্টে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। জিম্বাবুইয়েকেও সর্বশেষ টেস্টে হারিয়েছে। এবার তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পালা? এবার আবার দলে থাকছেন সাকিবও। খেললে তিনিই নেতৃত্ব দেবেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও ভাল কিছু করার সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘এই (জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জেতা) আত্মবিশ্বাস আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও কাজে দেবে। আমরা যদি আমাদের হোম কন্ডিশনটা আমাদের মতো করে টিপিকাল করে নিতে পারি, তাহলে ম্যাচের রেজাল্ট আমাদের পক্ষে আসতেও পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কতটা ভাল ক্রিকেট খেলছি সেটা। তারা অনেক ভাল দল। আমরা মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে তৈরি থাকতে হবে টাফ উইকেটে খেলার জন্য।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট খেলা কঠিনই হবে। আবার জিম্বাবুইয়ে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। তবে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের জয় থেকে আত্মবিশ্বাস পেয়ে এখন সামনে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নাড়িয়ে দেয়া গেলেই হলো।
×