ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাশোগি হত্যার পর সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক

উভয় সঙ্কটে ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২১ নভেম্বর ২০১৮

উভয় সঙ্কটে ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সৌদি ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা ট্রাম্পকে জটিল সঙ্কটের মধ্যে ফেলেছে। রিয়াদের সঙ্গে মিত্রতার কথা যেমন জোর দিয়ে বলতে পারছেন না তেমনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকেও খাশোগি হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এএফপি। যুবরাজ বিন সালমানের নির্দেশেই সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে গত সপ্তাহে সিআইএর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইএ ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা এ তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, সিআইএ তাদের মূল্যায়ন কংগ্রেসকে জানিয়েছে। তবে ওয়াশিংটন এখনও যুবরাজকে দায়ী করেনি। ওয়াশিংটনে বসবাসরত খাশোগি ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত লিখতেন। তিনি ছিলেন সৌদি রাজ পরিবারের একজন কট্টর সমালোচক। ২ অক্টোবর তিনি বিয়ের জন্য কাগজপত্র নিতে ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যাকান্ডের শিকার হন। তুরস্কের দাবি, পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ডি ঘটানো হয়। তাকে হত্যা করে মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরদোগানের এক উপদেষ্টা বলেছেন, ১৫ সদস্যের সৌদি কিলিং টিমের প্রধান খাশোগিকে হত্যার পর যুবরাজ বিন সালমানের দফতরে চারবার ফোনে কথা বলেছেন। সিআইএ জানায়, খাশোগিকে নিয়ে যুবরাজের ভাই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত খালেদ বিন সালমানের ফোনালাপ নিয়ে তদন্ত করে তারা এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ নিয়ে সৌদি আরব প্রচন্ড আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আছে। সৌদি প্রসিকিউটরের দফতর জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২১ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, ৫ জনের জন্য মৃত্যুদন্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সময় সৌদি আরবের কার্যত শাসক যুবরাজ বিন সালমানের দুই ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাসহ ১৭ সৌদির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস মনে করে সৌদি আরব অথবা যুক্তরাষ্ট্র কোন পক্ষই ঘটনার পরিকল্পনাকারীর নাম উল্লেখ করছে না। সিআইএ নিশ্চিত যে, যুবরাজই এ হত্যাকা-ের নির্দেশদাতা। সিআইএর মূল্যায়ন ট্রাম্পকে বেকায়দায় ফেলেছে। তিনি সরাসরি সৌদিকে দায়ী করতে পারছেন না। আবার দেশটির বিরুদ্ধে কড়া কোন পদক্ষেপও নিতে পারছেন না। ইরান বিরোধিতা ও তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ বিভিন্ন ইসু্যুতে যুবরাজ বিন সালমান ও ট্রাম্প অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন। এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা রয়েছে ট্রাম্প জামাতা জারেড কুশনারের । গবেষণা সংস্থা কার্নেগি এন্ডোমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল পিসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল ডান বলেন, ট্রাম্পের সামনে এখন দুটি পথ খোলা রয়েছে। তিনি সিআইএর মূল্যায়ন সমর্থন করতে পারেন। যার অর্থ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কংগ্রেসের নেয়া সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন। কংগ্রেস এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র আর কাজ করবে না। অথবা তিনি সিআইএর মূল্যায়ন উপেক্ষা করে যুবরাজের সঙ্গে সম্পর্ক যথারীতি বজায় রাখতে পারেন। তিনি যে পথেই অগ্রসর হন না কেন উভয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। ডান বলছেন, যুবরাজের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার অর্থ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত। যুবরাজের বন্ধু কুশনারও এ বিষয়ে শুরু থেকে নীরব রয়েছেন।
×