ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের টুকিটাকি ॥ ব্যানারে খালেদার মুক্তি ও তারেকের দন্ড বাতিলের দাবি উঠছে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২১ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের টুকিটাকি ॥  ব্যানারে খালেদার মুক্তি ও তারেকের দন্ড বাতিলের  দাবি উঠছে

রশিদ মামুন ॥ এক জন কেবল ভোট চায়, তিন জনের পক্ষে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে আর সবাই নিঃশর্ত মুক্তি চায়। নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের দুই ধারের রাস্তায় ঝুলানো ছোট বড় ৯০টি ব্যানারের বক্তব্য সেই আভাস দিচ্ছে। ব্যানারে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার রায় বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দলের প্রধান বা শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের চেয়ে নিজেদের মুক্তির বিষয়টি বড় করে লিখেছেন নেতা কর্মীরা। মূলত ব্যক্তিগত প্রচারের জন্যই এ ধরনের ব্যানার ঝুলানো হয়েছে বলে মনে করা হয়। আসন্ন নির্বাচনে যিনি বিএনপির পক্ষে ভোট চেয়েছেন দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দলীয় কার্যালয়ের ভবনে সামনের দেয়ালে তার জায়গা জোটেনি। দলীয় প্রধানের নামের সঙ্গে তার খানিকটা মিল রয়েছে। নামটি তার খালেদা আলম। কার্যালয়ের দুটি বিল্ডিং পর ছোট্ট একটি প্ল্যাকার্ডে যেন একা দল ছুট অবস্থায় দাঁড়িয়ে বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিন। ঢাকা-৪ আসনের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে খালেদা আলমের এই ব্যনারে লেখা, খালেদা আলমের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন। এই অবস্থা দেখে মনেই হতে পারে বিএনপিতে ভোট চাওয়ার লোকের অভাব রয়েছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অর্পনা রায় দাসকে আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখার প্রত্যাশা জানিয়ে তার সংগঠন জাতীয়তাবাদী সংগ্রামী দলের পক্ষ থেকে ছবি টানানো হয়েছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ছেলের বউ নিপুন রায় চৌধুরীর মুক্তি চেয়ে কয়েকটি ব্যানার টানানো হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপি অফিসে হামলার সময় বাঁশের লাঠি হাতে নিপুনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছে। বিএনপি দাবি করেছে তাদের অফিসে হামলা করেছে সরকারপন্থীরা। কিন্তু নিপুন রায় চৌধুরীর হাতে তাহলে লাঠি এলো কিভাবে। কিভাবেই বা তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরীরে লাঠি তুললেন এই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ব্যানারে স্লোগান লেখার ক্ষেত্রে বিএনপি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নকল প্রবণতার আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জনপ্রিয় স্লোগান ‘যদি তুমি ভয় পাও তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তুমি বাংলাদেশ’ স্লোগান ব্যবহার করে ডেমরা থানা স্বেচ্ছাসেবক দল আট নেতার মুক্তি চেয়েছে। যারা সবাই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। তবে সবচেয়ে বড় ব্যানারগুলো টানানো হয়েছে সাবেক ছাত্র নেতা বিএনপির সহ-সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের ব্যানার। বুয়েট ছাত্রদলের এক নেতা ভোট চাওয়ার পাশাপশি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে ব্যানার টানিয়েছেন। নরসিংদী এবং ফেনী থেকে মনোনয়ন চেয়ে দুই নেতা ব্যানার টানিয়েছেন। সবগুলো ব্যানারেই নেতা কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নিঃশর্ত মুক্তি চাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি নয়াপল্টনে পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ছাত্রদল এবং যুবদলের ছয় নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনার দিন এবং পরের দিনও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল এরা ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ সদস্য। ফেসবুকে এদের ছবি দিয়েও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পরের দিন পুলিশ এদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরলেও বিএনপি দাবি করে এরা সবাই সরকারপন্থী। মঙ্গলবার এদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের সকলেই ছাত্রদল এবং যুবদলের সদস্য। এখন কি এদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এমন ব্যানার টানানো হবে! নিপুন রায় চৌধুরীর হাতে লাঠি থাকার পরেও তো বিএনপি বলছে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতেই হবে। কেউ কেউ বলছেন সহিংসতা ঘটানো কি তাহলে বিএনপির অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিশেষত সারাদেশে ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত যে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছে তার বিচার হলে রাজনীতির নামে এসব বন্ধ হতো বলে মনে করেন অনেকে।
×