ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-উইন্ডিজ প্রথম টেস্ট কাল শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২১ নভেম্বর ২০১৮

  বাংলাদেশ-উইন্ডিজ  প্রথম টেস্ট কাল শুরু

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সর্বশেষ টেস্ট জয়ের স্মৃতিটা এখনও তরতাজা। তবে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচ জিতলেও বড় ধরনের নাড়া খেয়েছে বাংলাদেশ দল। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিদের পরাস্ত করার পর খর্বশক্তির জিম্বাবুইয়ের কাছে প্রথম টেস্টে হেরে যাওয়াটা ছিল অনেক বড় ধাক্কা। সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সময়টা নড়বড়ে অবস্থার মধ্যে চলছে সেটাও প্রমাণ হয়েছে। এবার সেই পরিস্থিতিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে নামছে স্বাগতিকরা। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ফিরে আসা এবং সর্বশেষ ম্যাচ জেতার কারণে অবশ্য আগের চেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়েই নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অতীত পরিসংখ্যান তেমন সুবিধার না হওয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জ হবে এটি সাকিবদের জন্য। ক্যারিবীয়রাও টানা দেড় মাস ভারতের মাটিতে কাটিয়ে ফেরার পর বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রত্যয় জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে পুরো সিরিজে অনুপস্থিত ছিলেন সাকিব এবং অপরিহার্য ওপেনার তামিম ইকবাল। এবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাকিব ফিরেছেন। তাছাড়া হঠাৎ করেই টাইগারদের হারিয়ে ভারি আঁচড় কেটে দেয়া জিম্বাবুইয়েকে দ্বিতীয় টেস্টে বেশ ভালভাবেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবার চ্যালেঞ্জ নিজেদের ফিরে আসার ব্যাপারটি আরেকবার প্রমাণের। আঙ্গুলের ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর দলের সঙ্গে দু’দিন বেশ ভালভাবেই ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন করেছেন সাকিব। এ ম্যাচে খেলার সম্ভাবনাটাও উজ্জ্বল তার। খেললে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। দেশের পক্ষে সর্বাধিক ১৯৬ টেস্ট উইকেটের মালিক বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের সামনে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার সুযোগ এ ম্যাচে। বরাবরের মতোই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে স্পিনবান্ধব উইকেটই রাখা হবে এটা নিশ্চিত। সেজন্য মাইলফলক ছুঁতে মাত্র ৪ উইকেটের যে অপেক্ষা তা এ ম্যাচেই ঘুচতে পারে সাকিবের। কারণ দলের স্পিন বিভাগের অন্যতম স্তম্ভ তিনি। যদিও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে ১৮ উইকেট নেয়া বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও ১১ উইকেট পাওয়া অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও থাকবেন তার সঙ্গী হিসেবে। বাংলাদেশের একাদশে এ তিনজনের থাকাটা নিশ্চিত। সাকিব শেষ মুহূর্তে না খেললে অবশ্য একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যাবে। নেতৃত্ব দেবেন আবার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তরুণ অফস্পিনার নাইম হাসানকে সেক্ষেত্রে একাদশে দেখা যেতে পারে। গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দলে ডাক পেলেও ১৭ বছর বয়সী এ তরুণের অভিষেক হয়নি। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানরা রানে ফিরেছেন। বিশেষ করে দুই মিডলঅর্ডারের স্তম্ভ মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ নিজেদের ফিরে পেয়েছেন। এছাড়া টপঅর্ডারে মুমিনুল হকও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, মাহমুদুল্লাহ শতক পেয়েছেন। এর পাশাপাশি দলও দীর্ঘ ব্যর্থতা কাটিয়ে বড় সংগ্রহ পেয়েছে। তবে ওপেনারদের ব্যর্থতাই এখন ভাবনা বাংলাদেশের। দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস ব্যর্থ হওয়াতে এবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে নামার আগে সৌম্য সরকার ও নবাগত বাঁহাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিককে দলে টেনেছেন নির্বাচকরা। তাই বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে একাদশে। কারণ লিটন বাদই পড়েছেন। তবে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে অন্যতম ভরসা সেই মুশফিকই। টেস্টে দেশের পক্ষে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪ হাজার রান স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। সর্বাধিক ৬৪ টেস্ট খেলা মুশফিকের রান এখন ৩৯৬৯। আর মাত্র ৩১ রান করতে পারলেই তামিমের পর তিনিও ৪ হাজার টেস্ট রানের মালিক হয়ে যাবেন। ফিল্ডিং নিয়েও বেশ মাথাব্যথা আছে দলের। যদিও কোচ স্টিভ রোডস ও ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক এটিকে তেমন আমলে নিচ্ছেন না। কিন্তু ২ দিনের অনুশীলনে ফিল্ডিংয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাচিং প্র্যাকটিস করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এখন পর্যন্ত ১৪ টেস্ট খেলা হয়েছে দু’দলের। যার মধ্যে ২০০৯ সালে ক্যারিবীয়দের ২-০ ব্যবধানে তাদের মাটিতেই হোয়াইটওয়াশ করা ছাড়া বড় কোন সাফল্য নেই। একটি ড্র তাদের মাটিতে, আরেকটি ড্র নিজেদের মাটিতে আছে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে। বাকি ১০ টেস্টেই হার দেখতে হয়েছে বাজেভাবে। ২০১১ সালে সর্বশেষ সাগরিকায় খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজরা। তবে সম্প্রতি ভারত সফর করে আসায় স্পিনবান্ধব উইকেট ও উপমহাদেশের পরিবেশে ইতোমধ্যেই মানিয়ে নিয়েছে তারা নিজেদের। গত জুলাইয়ে নিজেদের মাটিতে সফরকারী বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলায় মেতেছিল তারা। সেই স্মৃতিটাও আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে তাদের। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রেথওয়েট বলেছেন, ‘মাত্রই আমরা ভারত সফর করে এসেছি। এখানে প্রথম টেস্টের আগে ওটা খুব ভাল প্রস্তুতি ছিল বলেই মনে করি। কন্ডিশন প্রায় একই, উইকেটেও তেমন পার্থক্য নেই। বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কাজটা মোটেও সহজ হবে না। ওরা ঘরের মাঠে খুব ভাল। কিন্তু আমরা এই চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত।’ এখন জুলাইয়ে ক্যারিবীয়দের কাছে নাজেহাল হওয়ার মোক্ষম জবাব দেয়ার সুযোগ বাংলাদেশের। শুরুটা পয়মন্ত ভেন্যু সাগরিকা থেকেই হচ্ছে স্বাগতিকদের।
×