ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্দোলনে অচল হাবিপ্রবি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২১ নভেম্বর ২০১৮

আন্দোলনে অচল হাবিপ্রবি

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও উপদেষ্টার পদত্যাগ ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে অচল হয়ে পড়ছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধনের মাধ্যমে এসব দাবি জানায় রসায়ন, পদার্থ ও গণিত বিভাগের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। একই দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার ক্লাস- পরীক্ষা বর্জন করে মুখে কালো ও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে প্রশাসন ভবনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন ৬১ সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত লাঞ্ছিত শিক্ষক। লাঞ্ছিত শিক্ষকদের সঙ্গে সোমবার থেকে ক্লাস ও মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শতাধিক শিক্ষক। চলমান আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে সোমবার কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। জানা যায়, ১৪ নবেম্বর বিকেল ৪ টার দিকে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৬১ সহকারী অধ্যাপক পূর্বসূচী অনুযায়ী কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনা সভায় শিক্ষকরা নিয়ম অনুযায়ী প্রদেয় বর্ধিত বেতন কেন বন্ধ করা হচ্ছে, তা কোষাধ্যক্ষের কাছে জানতে চান। কোষাধ্যক্ষ এক পর্যায়ে বলেন, বর্ধিত বেতন প্রদান করা সম্ভব নয়। আর প্রশাসন সেটিও আপনাদের দিতে রাজি নয়। আপনাদের যা করার আছে করেন। এক পর্যায়ে কোষাধ্যক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং কয়েক শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে থাকনে। ঠিক ওই সময় প্রক্টর অধ্যাপক খালেদ হোসেন, ডিন অধ্যাপক ফাহিমা খানম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শফিউল আলম, উপদেষ্টা অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম উপস্থিত হন। তারা একদল উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে ঢুকেন। কোষাধ্যক্ষ ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে প্রক্টর ও উপদেষ্টার মদদে উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ও কয়েক মহিলা শিক্ষকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় লাঞ্ছিত শিক্ষক হাফিজ আল হোসেন ও ফাতিহা ফারহানা লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে ঘটনাটি অবহিত করেন এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রক্টর, উপদেষ্টা ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেন। একই দিনই সহকারী অধ্যাপক ফাতিহা ফারাহানা ও সাবরিনা মোস্তাফিজ বাদী হয়ে মহিলা শিক্ষকের লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানির জন্য দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় পৃথক ২টি মামলা করে। কিন্তু মামলাগুলো এখনও নথিভুক্ত হয়নি। এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক খালেদ হোসেন ও উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ৬১ শিক্ষক। চলমান কর্মসূচীতে রবিবার তারা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানায়। তারা জানায়, প্রক্টর, উপদেষ্টা ও রেজিস্্রারের পদত্যাগ ও বেতন বৈষম্য নিরসন না হলে শিক্ষকরা আমরণ অনশন কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে। প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, লাঞ্ছিত শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন ও হামলা ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গত সোমবার সকল ক্লাস বর্জন করে। মঙ্গলবার ফোরামের শতাধিক শিক্ষক ক্লাসের পাশাপাশি সকল ধরনের পরীক্ষা থেকেও বিরত থাকেন। লাঞ্ছিত ও প্রগতিশীলের দেড় শতাধিক শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিরত থাকায় বিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৭টি বিভাগে কোন ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়াও কৃষি, মাৎস্য, প্রকৌশল, ভেটেরিনারি এ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্স, সোশ্যাল সায়েন্স এ্যান্ড হিউমিনিটিস ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ৬০/৬৫ শতাংশ ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় নি। এ ঘটনায় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শফিউল আলম বলেন, ইউজিসি থেকে চিঠি এলেই আমরা বেতন বৈষম্যের সমাধান করব। আর হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি। কেউ আহত হয়নি। তাই পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। শিক্ষার্থীদের আমরা নিয়ে আসিনি। তারা কিভাবে এসেছে আমি জানি না।
×