ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সানডের হ্যাটট্রিকে ফাইনালে ঢাকা আবাহনী

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২০ নভেম্বর ২০১৮

 সানডের হ্যাটট্রিকে ফাইনালে ঢাকা আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দিনটা ছিল মানডে। আর মানডেতে হ্যাটট্রিক করলেন সানডে! হ্যাঁ, নাইজিরিয়ান এই ফরোয়ার্ডের হ্যাটট্রিকের সুবাদেই ওয়ালটন ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠলো ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো হ্যাটট্রিক ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ দল। সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৩০তম এই আসরের প্রথম সেমিফাইনালে আবাহনী ৪-২ গোলে হারায় তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডকে। খেলার প্রথমার্ধে কোন দলই গোল করতে পারেনি। মজার ব্যাপার- সর্বশেষ (২০১৭) আসরের সেমিতেও মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী-জামাল। সেবারও জিতেছিল আবাহনীই ১-০ গোলে। এবার হেরে যাওয়াতে প্রতিশোধটা আর কড়ায়-গন্ডায় নিতে পারলো না ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত জামাল। এর আগে তিনবার টানা ফাইনালে খেলার নজির গড়েছিল মোহামেডানের মতো সর্বাধিক ১০ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। ১৯৮১, ৮২, ৮৩ সালে প্রথমবার। এরপর হ্যাটট্রিকসহ টানা ৫ বার ফাইনাল খেলে ১৯৯৪, ৯৫, ৯৭, ৯৯ ও ২০০০ সালে (১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে আসর অনুষ্ঠিত হয়নি)। এরপর ২০০৮, ০৯ ও ১০ সালে তৃতীয়বার। এবারের আসরসহ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ফাইনাল খেলেছে আকাশী-নীল শিবির। তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান হ্যাটট্রিক ফাইনাল খেলেছে দু’বার (এর মধ্যে আবার টানা ৫ ফাইনালও আছে)। মানডের সেমির নায়ক সানডের সঙ্গে ম্যাচ সম্পর্কে কথা হয়। তার কথার প্রায় সবকিছুকেই ‘ঈশ্বর’ শব্দটি ছিল। হঠাৎ মনে পড়ে গেল এভাবে কথা বলার অভ্যাস তার আগে থেকেই ছিল। স্মৃতি হাতড়ে মনে পড়লো আজ থেকে ঠিক সাত বছর আগের একটি ইন্টারভিউর কথা। সেদিন ছিল ৫ জুন, ২০১১ সাল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের খেলা। মোহামেডান ৩-২ গোলে হারিয়েছে ফেনী সকার ক্লাবকে। সানডে করেছেন হ্যাটট্রিক। ম্যাচ শেষে যে প্রশ্নই তাকে করা হয়, সেই প্রশ্নের উত্তরেই বলেন, ‘সব ঈশ্বরের কৃপা।’ তার কথা শুনে তখন তাকে ফুটবলার মনে হয়নি। মনে হয়েছিল পাদ্রী বা যাজক কেউ। সাত বছর পরও দেখলাম সেই আগের মতোই রয়ে গেছেন সানডে। সোমবার সেমির পর তার মন্তব্য ছিল এ রকম, ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। তার কৃপাতেই হ্যাটট্রিক করেছি। এরপর কৃতিত্ব দেব সতীর্থদের। তাদের সাপোর্ট না পেলে হ্যাটট্রিক করতে পারতাম না। তেমনি আবাহনীও জিততে পারত না।’ আবাহনীর কোচ জাকারিয়া বাবু বলেন, ‘না, সানডে একাই পার্থক্য গড়ে দেয়নি। টিম হিসেবেই খেলেছে আবাহনী। জয়ের জন্য পুরো কৃতিত্ব সব খেলোয়াড়কেই দেব। আজকে সানডে অসাধারণ খেলেছে। সে তার ছন্দে ফিরেছে। এটা আবাহনীর জন্য ইতিবাচক। আর আজকের ম্যাচে আবাহনী খেলেছে আবাহনীর মতোই। এই দল নিয়ে আমি গর্বিত।’ প্রথমার্ধে ভাল খেলেও গোল পায়নি দল। তবে এ নিয়ে কখনই চিন্তায় ছিলেন না বাবু, ‘আমার দেশী-বিদেশী ভালমানের খেলোয়াড় রয়েছে। তারা পার্থক্য গড়ে দেবে- এই ভরসা ছিল। সেটা তারা করতে পেরেছে।’ হারলেও অখুশি নন শেখ জামালের নাইজিরিয়ান কোচ জোসেফ আফুসি, ‘কেউই ভাবেনি শেখ জামাল সেমিফাইনালে খেলবে। আমরা সেটা করেছি। ছেলেরা অসাধারণ পারফর্মেন্স করেছে। ছোটখাটো কিছু ভুলের কারণে গোল হজম করেছি। আর সবাই আবাহনীর শক্তি সম্পর্কে জানে। শুধু সানডে না। আমরা পুরো আবাহনীর কাছেই হেরেছি।’ দ্বিতীয়ার্ধে উভয় দলই আক্রমণের ধার বাড়ায়। ৫৬ মিনিটে আবাহনীর ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়ার কর্নারে জটলার মধ্য থেকে বাঁ পায়ের দারুণ শটে জামাল গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন আফগান ফরোয়ার্ড মাসীহ সাইঘানী ১-০। ৬৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সানডের গোলে ব্যবধানটা দ্বিগুণ করে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ৭৯ মিনিটে বোজাংয়ের জোগানে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন জামালের বদলি মিডফিল্ডার দিদারুল আলম। ৮২ মিনিটে ওয়ালী ফয়সালের ক্রসে দর্শনীয় হেডে জামালের জাল কাঁপান সানডে। ৮৪ মিনিটে বক্সের ভেতরে জটলা থেকে গোল করে আবারও ব্যবধান কমান জামালের দিদারুল। ৮৬ মিনিটে দূরপাল্লার শটে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সানডে। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ঢাকা আবাহনী।
×