ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আবুধাবি টেস্টে ৪ রানের নাটকীয় জয় নিউজিল্যান্ডের, ২০০৫ সালের পর এত ক্লোজ ম্যাচে ফল দেখল টেস্ট ক্রিকেট, নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম এক অঙ্কের ব্যবধানে হারল ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান

এমন ম্যাচেও হেরে গেল পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২০ নভেম্বর ২০১৮

 এমন ম্যাচেও হেরে গেল পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পাকিস্তান কতটা ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ সেটি আরও একবার দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। আবুধাবি টেস্টে নিউজিল্যান্ডের কাছে মাত্র ৪ রানে হেরে গেল সরফরাজ আহমেদের দল। টেস্ট ক্রিকেটে ১, ২ ও ৩ রানে হারের নজির আছে, কিন্তু পাকিস্তান যেভাবে হারল এর কাছে সেসব ম্লান। লক্ষ্য ১৭৬। তৃতীয়দিন শেষে কোন উইকেট না হারিয়ে তুলে ফেলেছিল ৩৭ রান। অর্থাৎ পুরো দুইদিন ও ১০ উইকেট হাতে নিয়ে প্রয়োজন ১৩৯ রান। এক পর্যায়ে ৩ উইকেটে ১৩০-এ পৌঁছে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল জয়টা সময়ের ব্যাপার। ৪১ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে সেই দলটা হারল ৪ রানে। এটা কেবল পাকিস্তানের পক্ষেই সম্ভব। অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে (২/৬৪ ও ৫/৫৯) অভিষেকেই কিউইদের এমন নাটকীয় জয়ের নায়ক বাঁহাতি অফস্পিনার আইজাজ প্যাটেল। তিন টেস্টের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড। বিনা উইকেটে ৩৭ রান নিয়ে সোমবার ব্যাটিং শুরু করেছিল পাকিস্তান। ১৭৬ রানের লক্ষ্যে গুটিয়ে গেছে ১৭১-এ। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৫৩ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড। বিপরীতে ২২৭ রানে থামে পাকিদের সংগ্রহ। আর কিউইরা তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোর বোর্ডে জমা করেছিল ২৪৯ রান। আইজাজ প্যাটেলের বলে জয় থেকে মাত্র ৫ রান দূরে থাকতেই এলবিডব্লিউ হয়ে গেছেন পাকিস্তানকে সকাল থেকে বয়ে নেয়া আজহার আলী। ৪০ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর নেমে দলের অর্ধেক রানই করেছেন সাবেক অধিনায়ক। কিন্তু ৬৫ রানের চেয়েও বড় হয়ে উঠল আর ৫টি রান করতে না পারা। প্যাটেল ও ইশ সোধি ধংসযজ্ঞের শুরুটা করেন সকালেই। উগ্রমূর্তিতে থাকা ইমাম-উল-হক (২৭) এলবিডব্লিউ হলে ৪০ রানে প্রথম উইকেট হারাল পাকিস্তান। এরপর কিছুক্ষণ ৪-এর নামতা পড়ল পাকিস্তান। ৪৪ রানে আউট হাফিজ, ৪৮-এ হারিস সোহেল। এরপরও কিন্তু ম্যাচটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। আজহার ও আসাদ শফিক মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে করেন ৮২ রান। নিল ওয়াগনারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শফিক (৪৫), মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় দুই দল। তখনও বোঝা যায়নি কি হতে যাচ্ছে। বাবর আজমের রানআউট দিয়ে শুরু পাকিদের দুর্ভাগ্য। প্যাটেলের তিন বলে সরফরাজ ও বিলাল আউট হতেই ‘কু’ ডাক শুনতে পায় পাকিস্তান। পরের ওভারে ওয়াগনারের বলে ইয়াসির শাহও ফিরলেন। পাকিস্তানের জিততে দরকার ২১ রান, নিউজিল্যান্ডের ২ উইকেট। কিন্তু হাসান আলীর আত্মাহুতির পর ম্যাচটা রূপ নিয়েছিল এক চরম অপেক্ষার লড়াইয়ে। যে দল আগে ধৈর্য হারাবে তারাই হারবে। ৭ ওভারের জুটিতে মোহাম্মদ আব্বাসকে নিয়ে ৭ রান তুলেছিলেন আজহার। কিন্তু আর শেষরক্ষা হয়নি। পারেননি তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ১ রানে ফল নির্ধারিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। এ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৫ সালে বার্মিংহামে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২ রানের হার ইংল্যান্ডের। ৩ রানে ফল হওয়া টেস্ট দুটি। ১৯০২ ও ১৯৮২ সালে সেই দুটি ম্যাচের সঙ্গেও জড়িয়ে এই দু’দলের নাম। তালিকায় এরপরই আবুধাবিতে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। পাকিস্তান আগে কখনই সিঙ্গেল ডিজেটে টেস্ট ম্যাচ হারেনি। তাদের আগের সর্বনি¤œ হার ছিল ২১ রানে, গত বছর শ্রীলঙ্কার কাছে, এই আবুধাবিতেই। স্কোর ॥ নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ॥ ১৫৩/১০ (৬৬.৩ ওভার; রাভাল ৭, লাথাম ১৩, উইলিয়ামসন ৬৩, টেইলর ২, নিকোলস ২৮, ওয়াটলিং ১০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, সোধি ৪, ওয়েগনার ১২, প্যাটেল ৬, বোল্ট ৪*; আব্বাস ২/১৩, হাসান ২/৩৮, বিলাল ১/৩৩, ইয়াসির ৩/৫৪, হারিস ২/১১, হাফিজ ০/০) ও দ্বিতীয় ইনিংস ॥ ২৪৯/১০ (১০০.৪ ওভার; রাভাল ৪৬, লাথাম ০, উইলিয়ামসন ৩৭, রস টেইলর ১৯, নিকোলস ৫৫, ওয়াটলিং ৫৯, গ্রান্ডহোম ৩, সোধি ১৮, ওয়াগনার ০, প্যাটেল ৬*, বোল্ট ০; হাসান আলি ৫/৪৫, ইয়াসির ৫/১১০, আব্বাস ০/৩১)। পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ॥ ২২৭/১০ (৮৩.২ ওভার; ইমাম ৬, হাফিজ ২০, আজহার ২২, হারিস ৩৮, শফিক ৪৩, বাবর ৬২, সরফরাজ ২, বিলাল ১১, ইয়াসির ৯; বোল্ট ৪/৫৪, ডি গ্রান্ডহোম ২/৩০, আইজাজ প্যাটেল ২/৬৪) ও দ্বিতীয় ইনিংস ॥ ১৭১/১০ (৫৮.৪ ওভার; হাফিজ ১০, ইমাম ২৭, আজহার ৬৫, হারিস ৪, আসাদ ৪৫, বাবর ১৩, সরফরাজ ৩, বিলাল ০, ইয়াসির ০, হাসান ০, আব্বাস ০*; আইজাজ ৫/৫৯, সোধি ২/৩৭, ওয়াগনার ২/২৭)। ফল ॥ নিউজিল্যান্ড ৪ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ আইজাজ প্যাটেল (নিউজিল্যান্ড)। সিরিজ ॥ তিন টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
×