ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিবীয়দের মোকাবেলায় সাগরিকায় প্রস্তুত হচ্ছে স্বাগতিকরা

সাকিব ফেরায় দল চাঙ্গা

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২০ নভেম্বর ২০১৮

সাকিব ফেরায় দল চাঙ্গা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বৃহস্পতিবার আরেকটি লড়াই শুরু। সে লড়াইটা প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যতটা তারচেয়েও বেশি বাংলাদেশ দলের নিজেদের সঙ্গেই। সম্প্রতিই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে জবুথবু হয়ে পড়া বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যাটিং-বোলিং ভাল হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে চলা সঙ্কটময় সময়গুলো পেছনে ফেলে। তবে সেখানেও ঘাটতি ছিল অনেকখানি। গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ব্যাপক ভরাডুবি ঘটে বাংলাদেশ দলের। সেই বিষাদময় স্মৃতি আবারও ফিরে এসেছে, এবার ঘরের মাটিতে প্রতিপক্ষকে আঘাত ফিরিয়ে দেয়ার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে কোচ স্টিভ রোডসেরও তার শিষ্যদের নিয়ে জবাব দেয়ার অনেককিছুই আছে। রবিবার থেকে সে জন্য সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নেমে পড়েছেন জাতীয় দল নিয়ে। এবার দলে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ফেরার কারণে মানসিক শক্তি কিছুটা বেড়েছে সবার। তবে দীর্ঘদিন টপঅর্ডারদের রান না পাওয়া, ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ফেলার মতো গুরুতর বিষয়গুলো কাটিয়ে ওঠার অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে ক্যারিবীয় পেস বোলারদের বিপক্ষে। তাই আরেকবার নিজেদের সঙ্গেই লড়াই বাংলাদেশ দলের সবার। মাত্র কয়েকদিন আগেই সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে শক্তিধর হিসেবে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরলেও এবার খর্বশক্তির জিম্বাবুইয়ের কাছেই প্রথম টেস্টে মাথানত করতে হয়েছিল। তাতে করে ব্যর্থতার ষোলোকলাই পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। টানা ৮ ইনিংসে দলীয় রান ২০০ ছুঁতে না পারার মতো লজ্জা ছিল। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নিজেদের সর্বনিম্ন ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ছিল। ক্যারিবীয় পেসারদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তবে এবার ঘরের মাটিতে তাদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। মাঝে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে তামিম ইকবাল ছাড়াও নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব ছিলেন না। সে জন্য ঘরের মাটিতেও তাদের কাছে প্রথম টেস্টে পূর্বের ব্যাটিং ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় ১৫১ রানে হেরে গিয়েছিল সিলেট টেস্টে। দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিকুর রহীমের ডাবল সেঞ্চুরি, মুমিনুল হক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সেখান থেকেই নিজেদের হারানো আত্মবিশ্বাস কিছুটা খুঁজে পেয়েছে স্বাগতিকরা। সেখানে এবার সাকিবও যোগ হওয়াতে শক্তি নিশ্চিতভাবেই বেড়েছে। আর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা রোডস ভয়ানক বাজে স্মৃতি নিয়ে ফিরেছিলেন। এবার তার সুযোগ শিষ্যদের নিয়ে প্রতিশোধ তোলার। সে জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিসিবি একাদশের ২ দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটিও বেশ তীক্ষè নজরেই পর্যবেক্ষণ করেছেন। রবিবার সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছে সেদিন বিকেলেই অনুশীলন শুরু করেছেন রোডস শিষ্যদের নিয়ে। বিশেষ নজর ছিল সাকিবের দিকে। কারণ আঙ্গুলের ভয়ানক ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন তিনি। যদিও তার চিকিৎসা চলার সময় বলা হয়েছিল সময় লাগবে অনেক। তাই প্রথমদিনই দীর্ঘক্ষণ নেটে ব্যাটিং করেছেন সাকিব। প্রথম টেস্টের দলে তিনি থাকলেও খেলবেন এমনটা যদিও নিশ্চিত হয়নি এখন পর্যন্ত। শেষ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছুবে বাংলাদেশ দল। ক্যারিবীয়দের মোকাবেলা করার আগে তাদের শক্তির জায়গাগুলো নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ছিল পেসবান্ধব উইকেট। তাই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ভুগেছেন। এবার বাংলাদেশে থাকবে মূলত স্পিনবান্ধব উইকেট। এরপরও এমন উইকেটে কিছুদিন আগেই জিম্বাবুইয়ের পেসাররা ঝড় তুলেছিলেন। তাদের তুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের তাঁবুতে গতির রসদ আরও উন্নতমানের। এ বিষয়টি মাথায় রেখেছেন রোডস। কিন্তু আসল লড়াই বাংলাদেশ দলের নিজেদের সঙ্গেই। টপঅর্ডাররা জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস ওয়ানডের ফর্মটা টেস্টে কাজে লাগাতে পারেননি। তামিমের অনুপস্থিতিতে তাই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে নামার আগে দলে ডেকে আনতে হয়েছে সৌম্য সরকারকে। বর্তমানে রানের মধ্যে থাকা সৌম্য দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচেও ৭৮ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন। এছাড়া একই ম্যাচে আরেক তরুণ ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক ৭৩ রান করেছেন। তিনি সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) সর্বাধিক রান সংগ্রাহক ছিলেন। এ কারণে চট্টগ্রাম টেস্টের জন্য শেষ মুহূর্তে দলে ডাক পেয়েছেন তিনিও। ব্যাটসম্যানদের নিয়ে মাথাব্যথা শেষ না হওয়ার কারণেই লিটনকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে দুশ্চিন্তা আরেকটি আছে, সেটি হচ্ছে ফিল্ডিংয়ে দুর্দশা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বেশকিছু ক্যাচ ফেলার ঘটনা ছিল। সেখান থেকেও নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ দলের। চট্টগ্রামে গত মার্চের পর আবার টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। এ মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা সর্বশেষ টেস্টটি ড্র করেছিল স্বাগতিকরা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৪ বছর পর আবার মোকাবেলা করবে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এসে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল তারা। তাদের বিপক্ষে ৭ সিরিজে ১৪ টেস্ট খেলে মাত্র দুটি ড্র করতে পেরেছে বাংলাদেশ যার সর্বশেষটি ছিল ৭ বছর আগে এই সাগরিকার মাঠেই। সেই অবস্থানে ফেরার লড়াই এবার বাংলাদেশের। প্রথম টেস্টে নামার আগে সময় আছে আরও দু’দিন নিজেদের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার মন্ত্র রপ্ত করার জন্য। সেভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে রোডসের শিষ্যরা।
×