ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন সঙ্কটে জাকারবার্গ

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২০ নভেম্বর ২০১৮

 নতুন সঙ্কটে জাকারবার্গ

একেই বোধকরি বলে- শনির দশা! অন্তত জাকারবার্গের বর্তমান দশায় এ কথা বলাই যায়। বিপদ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তার। ক্যামব্রিজ এনালাইটিকা কান্ড, বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের বিতর্কেও রেশ কাটেনি এখনও। ভুয়া খবর ছড়ানো নিয়েও আছেন বিপদে। ক্ষমা প্রার্থনা, সংশোধনের প্রতিশ্রুতি, নতুন উদ্যোগ গ্রহণ কিছুতেই পার পাচ্ছেন না। তার মধ্যেই ফের বিপাকে ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গ। সংস্থার চেয়ারম্যান পদ থেকে তার অপসারণ চাইছেন বিনিয়োগকারীরা। দাবি তুলছেন পদত্যাগেরও। কোনভাবে ফাঁকফোকর গলে যাতে বেরিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য রীতিমতো চাপও তৈরি করছেন তারা। ব্যবসা দাঁড় করাতে অনেক সময় জনসংযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নেন ব্যবসায়ীরা। যাতে তাদের ব্যবসার প্রচার হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়াতে এবং যাবতীয় বিতর্ক ঝেড়ে ফেলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি গড়তে সম্প্রতি রিপাবলিকান পার্টির ঘনিষ্ঠ ‘ডিফাইনার্স পাবলিক এ্যাফেয়ার্স’ সংস্থাকে নিয়োগ করেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এমনটাই লেখা হয়েছে মার্কিন সংবাদপত্র ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর একটি প্রতিবেদনে। সেখানে দাবি করা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর নজর রাখা এবং তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোই ছিল ওই সংস্থার কাজ। ফেসবুকের ভাবমূর্তি উদ্ধারেও নেমেছিল তারা। যাতে কেমব্রিজ এনালাইটিকার মাধ্যমে গ্রাহকদের তথ্য চুরি এবং মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত যাবতীয় বিতর্ক কাটিয়ে ওঠা যায়। তাদের নিশানায় ছিলেন মার্কিন কোটিপতি জর্জ সোরোসও। মার্কিন কংগ্রেসে শুনানি চলাকালীন জাকারবার্গ ও ফেসবুকের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তিনি। সোরোস এবং ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুাের মধ্যে আর্থিক লেনদেন রয়েছে বলে প্রমাণ করতে চেয়েছিল তারা। সেই মতো একটি রিপোর্টও সামনে আনা হয়। সংবাদমাধ্যমকেও চাপ দেয়া হচ্ছিল বিষয়টি তুলে ধরতে। তবে বুধবার মার্কিন সংবাদপত্র ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনই ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ফেসবুকের তরফে ‘ডিফাইনার্স পাবলিক এ্যাফেয়ার্স’কে নিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। তার পর থেকেই সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এবং স্যার নিক ক্লেগ। সংস্থার আন্তর্জাতিক নীতি এবং যোগাযোগ বিভাগের প্রধান হিসেবে গত মাসেই নিযুক্ত হন নিক। দু’জনের ওপরই বেজায় চটেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মধ্যে অন্যতম জোনাস ক্রোন। ‘ট্রিলিয়াম এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’ সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। ফেসবুকে ৮৫ লাখ পাউন্ডের অংশীদারিত্ব রয়েছে ওই সংস্থার। সম্প্রতি জাকারবার্গকে ফোন করেন তিনি। সরাসরি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলেন। সংবাদমাধ্যমে দেয়া একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘নিজেদের আহামরি কিছু ভাবতে শুরু করেছে ফেসবুক। যেন বাকিদের চেয়ে স্পেশাল ওরা। যা একেবারেই ঠিক নয়। যত প্রভাবই থাকুক শেষ পর্যন্ত এটি কেবল একটি সংস্থা, এর বেশি কিছু তো নয়! তাই চেয়ারম্যান আর সিইও পদের মধ্যে পার্থক্য থাকা দরকার। খবরটা চোখে আসার পর আমাদের সংস্থার কর্তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ওদের সঙ্গে কাজ করতে আর ইচ্ছুক নই আমরা।’ জাকারবার্গ এবারও যথারীতি যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘শুরুতে ওই সংস্থাকে নিয়োগের কথা জানতামই না আমি। যে মুহূর্তে জানতে পারি, সঙ্গে সঙ্গে টিমের সকলের সঙ্গে কথা বলি। ওদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করি। এই মুহূর্তে ওই সংস্থার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই আমাদের।’ এই ধরনের কোন কোন সংস্থা ফেসবুকের হয়ে কাজ করছে, তাদের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক দলের সংযোগ রয়েছে, স্যার নিককে তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে তার এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন বিনিয়োগকারীরা, তারা এটাও জানেন যে কোন অজুহাতে অভিযোগ এড়িয়ে যেতে জুড়ি নেই জাকারবার্গের। আর ২০০৪ সালে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ফেসবুক পরিচালনায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন জাকারবার্গ। চেয়ারম্যানের পদ সামলানোর পাশাপাশি সংস্থার সিইও তিনি। এবার তাতে বদল চাইছেন বিনিয়োগকারীরা। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×