ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অন্যবারের চেয়ে এবার নারী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ নভেম্বর ২০১৮

 অন্যবারের চেয়ে এবার নারী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি

রশিদ মামুন ॥ নির্বাচনের মাঠে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এবার নারী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। বড় দুই দলেই এবার সমাজে প্রতিষ্ঠিত নারীরা মনোনয়ন চাইছেন। বড় রাজনীতিবিদদের অনুসরণ করে নারীদের এই এগিয়ে আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন সকলে। বড় দুই দলেই এবার নারী মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও বেড়েছে। সংরক্ষিত আসনের নারী প্রার্থীরাও এবার জয়ের আশা নিয়ে ভোটের মাঠে লড়তে চাইছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলছেন, দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রতিটি শাখায় ৩৩ শতাংশ নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সব রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচনে অধিকহারে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া এবং ওই প্রার্থীদের নির্বাচনে জিতিয়ে আনার সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করে নেয়ার জন্য, বিশেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকার, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কার্যকর ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। দেশের নারীদের একটি বড় অংশই গৃহিণী। রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলেও এই নারীদের ভোট প্রদানে প্রভাব ফেলে তার পরিবার। বাবা-ভাই এবং স্বামী-সন্তানের কথায় এরা প্রভাবিত হন। ভোট দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছার খুব বেশি মূল্যায়ন ঘটে না। তবে নারী প্রার্থীরা যদি দল মত নির্বিশেষে নারীদের ভোট টানতে পারেন, তো নির্বাচনে তাদের বিজয়ী হওয়াটা কঠিন কিছু হবে না। সংরক্ষিত আসনে নারী প্রার্থীরা কাজ করে শিখেছেন কিভাবে তৃণমূলে কাজ করে নির্বাচন করতে হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সঙ্গত কারণে অনেক নারী প্রার্থী সরাসরি নির্বাচন করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ সীমিত। সেখানে এভাবে নারীর এগিয়ে আসাকে স্বাগত জানান তিনি। সেলিমা রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে থাকে। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নারীদের প্রাধান্য দিলে তাদের সেই সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। অনেকেই সংরক্ষিত আসন থেকে এবার ভোটের মাঠে নামতে চাইছেন এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বলেন, তৃণমূলে কাজ করতে গিয়ে নারীরা নির্বাচন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এখন বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে চাইছে এটা শুভ লক্ষণ। গত পাঁচ বছর ধরেই সরকারী দল নির্বাচন করতে চান এমন প্রার্থীরা বেশ সরব ছিলেন। অপেক্ষাকৃত কম আলোচনায় এসেছেন বিএনপি প্রার্থীরা। তবে ভোটের মাঠ সরগরম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক নারীই বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন। তবে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতে নারী হেভিওয়েট প্রার্থী নেই বললেই চলে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলার দ- নিয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর বাইরে সেলিমা রহমানকেই ধরা হচ্ছে দলটির হেভিওয়েট নারী প্রার্থী হিসেবে। এই বিচারে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচনে অংশ নেবেন সকলে। দলটিতে সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরীর মতো বর্ষীয়ান নারী রাজনীতিবিদ রয়েছেন। তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অন্য প্রার্থীরা। জাতীয় সংসদের স্পীকার শরীন শারমিন চৌধুরীও নতুন নারী প্রার্থীদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ থেকে যেসব নারীরা মনোনয়ন চেয়েছেন তাদের বেশিরভাগই দেশের সকলের পরিচিত মুখ। এসব দিক বিচারে আওয়ামী লীগের নারী প্রার্থীরা অন্যদের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। হবিগঞ্জ-১ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। তিনি সমাজ সেবক থেকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত পাঁচ বছরে তৃণমূলে কাজ করতে যাওয়ার সুবাদে তার মনে হয়েছে, নারীর জন্য সরাসারি ভোটে অংশ নেয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সময় এসেছে। এখন নারীরা ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে তৃণমূলে অনেক সচেতন। নারী প্রার্থীরা নারীদের এই ভোট টানতে পারবেন এমন আশা করেন কেয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, শুরুতে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যকে অলঙ্কার বলা হতো। কিন্তু আমি এটা কোন দিন মনে করিনি। কাজ করেছি বলেই মানুষ আমাকে ভোটের মাঠে দেখার আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট প্রার্থী সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী থাকছেন এবার ভোটের মাঠে। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী সাহারা খাতুন, সাগুফতা ইয়াসমিন, সিমিন হোসেন রিমি, দীপু মনি, মেহের আফরোজ চুমকি, সারাহ বেগম কবরী, তারানা হালিমের মতো অভিজ্ঞ নারী নেত্রীরা। প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, সঙ্গীতশিল্পী মমতাজ, মাহাবুব আরা বেগম গিনি, জয়া সেনগুপ্তা, সৈয়দা সায়রা মহসীন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, মারুফা আক্তার পপি, সাবিনা আক্তার তুহিন। এবার অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি তারকা ও তরুণ নারী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন। এই দৌড়ে নাম লিখিয়েছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, অরুণা বিশ্বাস, জ্যোতিকা জ্যোতি, অভিনেত্রী তারিন; খালেদ মোশাররফের মেয়ে মাহজাবিন খালেদ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজনীন আলম, মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের নারী বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানু আক্তার, একমাত্র প্রবাসী নারীপ্রার্থী ক্যালিফোর্নিয়া মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহানা পারভিন, এছাড়া মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমাদ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আরিফা রহমান রুমা। যারা ভালর পক্ষে পরিবর্তন চান তারাই সমর্থন দিচ্ছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজনীন আলমকে। তৃণমূলে কাজ করে চলা নাজনীন জানালেন, আমি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এলাকাতে থাকি। সাধারণ মানুষই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তারাই আমার প্রেরণার মূল উৎস। ময়মনসিংহ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নাজনীন জানালেন, নারী হিসেবে তৃণমূলের মানুষ আমাকে দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। ক্যালিফোর্নিয়া মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহানা পারভিন কুড়িগ্রাম সদর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন। গত দুই বছর ধরে তিনি দেশেই নানা সমাজ সেবামূলক কাজ করছেন। সেখানের অবকাঠামো নির্মাণ ব্যবসাও ছেড়ে এসেছেন দেশের জন্য। জানালেন, এখন কাজ করতে চান দেশের জন্য। সেজন্যই মনোনয়ন চাইছেন সংসদ সদস্য হিসেবে। আশা করছেন নারীর এই অগ্রযাত্রাকে তিনি আরও বহুদূর এগিয়ে নিতে পারবেন। নির্বাচনের মাঠে অভিজ্ঞ সাগুফতা ইয়াসমিনের আসন মুন্সীগঞ্জ-২ থেকে মনোনয়ন চাইছেন এ্যাডভোকেট রানু আক্তার। এক সময় ছাত্রলীগ করতেন এরপর যুবলীগ হয়ে মূল সংগঠন আওয়ামী লীগ করছেন। রানু মনে করছেন অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন দল করবেই কিন্তু এখন সময় এসেছে তারুণ্যকে প্রধান্য দেয়ার। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও তরুণদের দায়িত্ব দিতে চাইছেন সেই বিবেচনায় রানু মনে করছেন তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনীতির মাঠে বেশ সরব বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আক্তার উদ্দিন আহমেদের মেয়ে জেবা আহমেদ খান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, জাসাসের সহ-সভাপতি শাহরিয়া ইসলাম শায়লা, নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা। এছাড়া ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা। নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর বোন সাবেক কমিশনার ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টি, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সুলতানা রাজিয়া শাওন, হেলেন জেরিন খান, সৈয়দা আসিয়া আশরাফি পাপিয়া, বেবি নাজনীন, কনক চাঁপা, রিজিয়া পারভিন, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস এবং মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সালতানা আহমেদ মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। মনোনয়নের মাঠে নবীন নামের তালিকায় যোগ হয়েছে অভিনত্রী জোতিকা জ্যোতির নাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ময়মনসিংহ-৩ আসনে মনোনয়ন চাইছেন। কেন মনোনয়ন চাইছেন জানতে চাইলে বলেন, আমি আসলে রাজনীতিটা করতে চাই। আর দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমি যেহেতু অভিনয় করি তাই সব সময় সম্ভব না হলেও আমি সময় করে এলাকায় যাই। আমি শখ করে রাজনীতিতে আসিনি উল্লেখ করে জতিকা বলেন, আমি বুঝে শুনে এসেছি। যাতে এখানে কাজ করতে পারি।
×