ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পোড়ামাটির বুদ্ধমূর্তি ক্রুশাকৃতির মন্দির প্রাচীন নিদর্শন

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২০ নভেম্বর ২০১৮

পোড়ামাটির বুদ্ধমূর্তি ক্রুশাকৃতির মন্দির প্রাচীন নিদর্শন

সমুদ্র হক ॥ দূর অতীতের নবপতির ধাপ। প্রত্ন ইতিহাস উদ্ধারের পর নাম পোশিপো বিহার- যা আজকের ভাসু বিহার। প্রাচীন ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ভাসু বিহারেই ছিল বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ইতিহাসের পাতা উন্মোচনে খনন কাজ করে মন্দির সাদৃশ্য এই বিদ্যাপীঠ দৃষ্টিতে আনে গেল শতকের ৯০-এর দশকের শেষের দিকে। এরপর ইতিহাসের এই খনি খুঁড়ে অজানা ইতিহাস তুলে আনা হচ্ছে। খননের ধারাবাহিকতায় ভাসু বিহারে এ বছরের খনন শুরু হয়েছে অক্টোবরের মধ্য ভাগে। শেষ হবে ডিসেম্বরের মধ্যভাগে। এই ভাসু বিহারে আগামী ২৩ নবেম্বর শিল্পকলা একাডেমি সৃজনকর্মের ঐতিহ্যবাহী প্রত্ন নিদর্শনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের শৈল্পিক উপস্থাপনায় প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’ মঞ্চস্থ করবে। এবারের প্রত্ন নাটক হবে শিল্পকলা একাডেমির এ ধরনের দ্বিতীয় প্রযোজনা। প্রথমটি তিন বছর আগে হয়েছিল পাহাড়পুরে। বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী মহাস্থানগড়। যা পু-্রবর্ধনের পটু-্রনগরী। সেখানে থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ভাসু বিহার। এ বছরের প্রতœ খননে এই ঐতিহাসিক স্থাপনার গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। এবারের খননে মিলেছে অনেকটা টিলার মতো ৪টি স্তূপের সন্ধান। যা বৌদ্ধাদের নিদর্শন। যেখানে কোন সন্যাসী বা ভিক্ষুর দেহাবশেষ ছিল। তাদের স্মরণে এগুলো নির্মিত। এর তিনটি কিছুটা ভাল। বাকিটি ধ্বংস অবস্থায়। প্রত্নতত্ত্ববিদগনের ধারনা, প্রায় ১৩শ’ বছর আগে পাল আমলের মধ্যভাগে এই স্তূপ নির্মিত। সম্রাট অশোক গৌতম বুদ্ধের পদচিহ্ন পেয়ে তা সংরক্ষণ করেন। পরে সেখানেই নির্মাণ করেন বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরের সন্ধান পাওয়ার পর এর চারধারে খনন কাজ করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বগুড়া ও রাজশাহী বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, ভাসু বিহারে ১৯৭৩ সাল থেকে কয়েকদফায় খনন কাজে দুটি বৌদ্ধ বিহার ও উত্তরমুখী একটি বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান মেলে। এবারের সাত সদস্যের খনন কাজে অংশ নেয়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অলোকচিত্রী আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রত্ন নিদর্শন উদ্ধারের পর ছবি তোলার সময় খেয়াল করেছেন ভাসু বিহারের নিদর্শন অনেকটাই আলাদা। যা ঐতিহাসিক পটভূমির একটি বড় সাক্ষ্য- যা বলে দেয় আমাদের অতীত কতটা সমৃদ্ধ ছিল। এবারের খননেও মিলছে ক্রশাকৃতির মন্দির। লোহার বড় টুকরা। পোড়ামাটির তৈরি সিলমোহর। টেরাকোটার ইট ফলক। ব্রোঞ্জের টুকরা। পদ্মফুল জাতীয় মাটির নক্সা। পোড়ামাটির বুদ্ধের মূর্তি। অনেক মৃৎপাত্র। এর আগের খননে মাঝারি আকারের দুটি বৌদ্ধ মন্দির, অর্ধ ক্রশাকৃতির বৌদ্ধ মন্দির, ৬০টির বেশি ব্রোঞ্জ মূর্তি, উৎকীর্ণ লিপিযুক্ত ১শ’রও বেশি পোড়ামাটি, ৩৭টি পোড়ামাটির ফলক চিহ্ন, বেশকিছু অলংকৃত ইট কয়েকটি প্রস্তর গুটিকা পাওয়া যায়। ইতিহাসের এই বিলুপ্ত সভ্যতা জানিয়ে দেয় বঙ্গীয় এই বদ্বীপ কতটা সমৃদ্ধ। মহাস্থানগড়কে ঘিরে তার আশপাশে অনেক বড় এলাকা প্রাচীন ইতিহাসের বিশাল এক খনি। যেখানে আড়াই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্তত ১৬টি সভ্যতার চিহ্ন লুকিয়ে আছে মাটির নিচে। প্রাচীন এই সভ্যতার বর্ণিল ইতিহাস প্রতি বছর উদঘাটিত হচ্ছে। যা লিপিবদ্ধ করছেন প্রত্ন ইতিহাসবিদ। বগুড়ার এই প্রাচীন খনিতে ঘিরে জেলার ব্রান্ডিং হয়েছে ‘বগুড়া দ্য সিটি অব পু-্র সিভিলাইজেশন’।
×