ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি?

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২০ নভেম্বর ২০১৮

সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি?

হাজারো হুঙ্কার, হম্বিতম্বি, হুমকি-ধমকি, হুঁশিয়ারি, লম্বা-লম্বা কথা আর গরম-গরম বাক্যবাণ নিক্ষেপের পর ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট সবাই সুড় সুড় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চলেছে। আমার রাষ্ট্রদূত বন্ধু সুদূর মস্কো থেকে সাঁঝ সকালে ফোন করে আমি হ্যালো বলার আগেই বলে উঠলো, ‘সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি?’ আমি প্রত্যুষের ঘুমের আতিশয্যে কোন কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারছিলাম না। তাই জানতে চাইলাম, ‘দোস্ত, নথ আবার কখন কোথায় খসালাম?’ সে তখন ব্যাপারটা খোলাসা করতেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল মুহূর্তে। বুঝলাম ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির উদ্দেশ্যে তার এই যুৎসই ও তীর্যক বাক্য প্রয়োগ। যাক, রাজনীতি বলে কথা! ওই যে রাজনীতিবিদদের রক্ষাকবচতুল্য এক বুলি আছে না, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই,’। ওদের এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার কৈফিয়ত বা অজুহাত এখন ওই বাক্যের মধ্যেই যে ঘুরপাক খাবে। এতে কোন সন্দেহই নেই। রাজনীতির মাহাত্ম অপার! বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে তো এ কথা শত ভাগ প্রযোজ্য। নইলে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত বীর কাদের সিদ্দিকী নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অকৃত্রিম সৈনিক হিসেবে দাবি করে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী শিবিরের সঙ্গে মেলবন্ধন করেন? যিনি সাফাই গাইছেন এই বলে যে, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করিনি, ঐক্য করেছি ড. কামালের ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে।’ তার এই ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তিনিও দেশবাসীকে আইয়ুবী কায়দায় বোকা ঠাওরান! এই মাত্র ক’দিন আগে তিনি এক সমাবেশে তারস্বরে ঘোষণা করেন যে, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৯টির বেশি আসন পাবে না।‘ আবার রাজশাহীর জনসভায় তো আরও এক কদম আগ বাড়িয়ে এবং আবেগের আতিশয্যে মহিলাদের সমাগম দেখে বলেই ফেলেছেন যে, এমন ধরনের মহিলা কর্মী পেলে ‘আমি শেখ হাসিনাকে তিন দিনের মধ্যে গদি থেকে ফেলে দিতে পারি।’ অথচ, তিনি বিলক্ষণ জানেন যে, রাজশাহী জামায়াত-শিবিরের একটি শক্ত ঘাঁটি এবং সেদিনের জনসভায় উপস্থিত মহিলাদের অধিকাংশই ছিল জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার। এই উগ্র মহিলাদের দেখে তার মতিভ্রম ঘটে গিয়েছিল বুঝি! তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমার প্রিয় নন, আবার অপ্রিয়ও নন’ এ কথার মারপ্যাঁচে তিনি কাদের কাবু করতে চান? তিনি এও বলেছেন যে, বন্দী খালেদা জিয়া নাকি এখন গোটা বাংলাদেশব্যাপী পরিব্যাপ্ত হয়ে গেছেন! এখন খালেদা জিয়া মানেই নাকি বাংলাদেশ! তাহলে, বঙ্গবন্ধুর স্থানটি আপনার বিবেচনায় কোথায় যাবে, তা দেশবাসীকে দয়া করে জানাবেন কি জনাব? আওয়ামী লীগ এখন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নেই বলে আপনি সেটি ছেড়ে দিয়ে যাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন, তাদের স্বরূপ আপনি জানেন না তা কি হতে পারে? একাত্তরে এত বড় যুদ্ধ করে আজ যদি শুধু নিজের ব্যক্তিগত অভিলাষ চরিতার্থ করতে নীতিবোধ, আদর্শ সব বেমালুম ভুলে গিয়ে একেকবার একেক কথা বলেন সুবিধাবাদীদের মতো, তাহলে আপনার সেই একাত্তরের বীরত্বগাথা মলিনতার আবর্তে ঢাকা পড়ে যেতে বাধ্য! যে ফ্রন্টের মূল শক্তি বিএনপি আপনি তার সঙ্গে নয়, বরং ঐক্য করেছেন জনসমর্থহীন ড. কামালের সঙ্গে এই ছেলে ভোলানো ছড়া আপনার মুখে বড্ডো বেমানান! মান্না সাহেবও এক্ষেত্রে কম যাচ্ছিলেন না। তিনি অনেক লম্বা লম্বা ও গরম গরম কথা বলতে ছাড়েননি। আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর খোঁচা খেয়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘এসব কথা না বললে যে আমার রাজনীতিটাই থাকে না’। অর্থাৎ, নিছক রাজনীতির স্বার্থে তাকে এসব বলতে হয়, কোন নীতি বা আদর্শ বোধ দ্বারা তাড়িত হয়ে নয়। তাহলেই বুঝুন পাঠক, এ দেশের রাজনীতির মহিমা ও মাহাত্ম্য যে অপার কথাটা সত্যি কিনা! বগুড়া থেকে তার নির্বাচন করা দরকার আর সেখানে আছে জামায়াতের এক বড় ভোট ব্যাংক। সুতরাং, সেটিকে কব্জা করতে হলে জামায়াতের রাজনীতির প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি না দেখিয়ে তার যে কোন উপায় নেই! এই জাতীয় নানা ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে এই ঐক্যফ্রন্ট গড়ে উঠেছে। আর সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি মিথ্যে বুলি সমস্বরে কপচে তারা আসর মাত করার কৌশল নিয়েছে। এই সরকারের আমলে দুর্নীতি, লুট-পাট, স্বজনপ্রীতি, ভর্তি-নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য হয়েছে বিস্তর এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে, বিএনপি বা এরশাদ সাহেবের আমলও ধোয়া তুলসী পাতা ছিল না। বিএনপি নেতারা যখন কথা বলেন তখন হাওয়া ভবনের দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খুন, জঙ্গী উত্থান, হামলা, মামলা, শ্বেত সন্ত্রাসের কথা সম্পূর্ণ চেপে গিয়ে এমন ভাব করেন যেন তাদের আমলে দেশে কেবলই শান্তির সুবাতাস আর সর্বত্র দুধের নহর বয়ে গেছে! তবে, তাদের আমলগুলোর সঙ্গে এই আমলের গুণগত পার্থক্য এই যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আত্ম-মর্যাদা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পেয়েছে। সকল সূচকেই দেশের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিএনপি আমলে পাঁচবার আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেই কলঙ্ক তিলক এখন আর বাংলাদেশের ললাটে শোভা পায় না। বরং, বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত এখন। এই সহজ সত্যটি অস্বীকার করে যারা কূটচালে জনগণকে বোকা বানিয়ে নিজেদের গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত, তারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না। স্পেড কে স্পেড বলার মতো সততা না থাকলে রাজনীতি তার জন্য সঠিক পন্থা হতে পারে না। তার অন্য কোন মতলবি পেশা বেছে নেয়া উচিত সে ক্ষেত্রে! আ স ম আবদুর রবের ব্যাপারেও একই কথাই খাটে। তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে যেভাবে কথা বললেন, তা কি শিষ্টাচার বহির্ভূত ছিল না? তিনি নির্বাচন কমিশনারকে ‘বেহুদা’ বলে উল্লেখ করলেন যা ভীষণ অশোভন বলে মনে হয়েছে। তিনি কয়েকদিন আগে নির্বাচন একতরফা, সরকারের ইচ্ছে পূরণের জন্য নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে, সুতরাং, তাদের ৭ দফা দাবি পূরণ ভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না বলে হুঙ্কার দিলেন। অথচ, এখন আবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্যই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আন্দালিব পার্থ তো এই নির্বাচনে যাওয়ার বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন ইত্যাদি দাবিসমূহের একটিও সাংবিধানিক কারণে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়, এই বিষয়টি এখন মেনে নিয়েই এই বাঘা বাঘা সরকারবিরোধীরা নির্বাচনে যাচ্ছেন। আবার তারাই দেখেন জনগণের কাছে মুখ রক্ষার্থে কি সুন্দরভাবে বলে বেড়াচ্ছেন যে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটাকে তারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছেন। এও যে এক প্রকার ছলনা তা জনগণ বোঝে বৈকি! বিএনপি নেত্রীর মামলা ও সাজা বাতিল আর তদীয় গুণধর পুত্র তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা, সাজা ইত্যাদি পরিহারের যে দাবি ড. কামাল, রব, মান্না, কাদের সিদ্দিকী ও সুলতান মনসুরের মুখ দিয়ে সুকৌশলে বিএনপি বলিয়ে নিয়েছে, তাতে যে ওই নেতাদের কতবড় পরাজয় ঘটে গেছে, তা তারা এখনও ঠাহর করে উঠতে পারছেন না আসলে! আ স ম রব ভুলে গেছেন কি করে তথাকথিত ৭০ দলের (যার পাঁচটার নাম তিনি বলতে পারবেন কিনা সন্দেহ!) জোট গঠনের নামে তিনি সেদিন এরশাদ শাহীকে বৈধতা দিয়েছিলেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় একাত্তরের এক ছাত্র গণ-সমাবেশে ছাত্র নেতৃ-চতুষ্টয় (চার খলিফা) বাংলাদেশের যে পতাকাটি প্রদর্শন করেছিলেন, তার উত্তোলক হিসেবে তিনি একক কৃতিত্ব নিতে চান কোন বিবেচনায়, তাও দুর্বোধ্য। তিনি জানেন যে, পতাকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলনের একমাত্র বৈধ কর্তৃত্ব ছিল বঙ্গবন্ধুর, কেননা তার পেছনে ছিল বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ম্যান্ডেট। অথচ, এই সত্যটিকে নিদ্বিধায় চেপে গিয়ে নিজেকে তিনি কেন স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলক বলে দাবি করেন? তার এমন দাবি জিয়াউর রহমানের ‘স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক’ দাবির ন্যায় কপটতাপূর্ণ নয় কি? মুক্তিযুদ্ধে রবের অবশ্যই সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর সেই ভূমিকার কারণেই তিনি মানুষের কাছে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে রইবেন, যদি না কোন কপটতা, মিথ্যা বা আত্ম প্রবঞ্চনার আশ্রয় নেন। এদিকে আবার কর্নেল অলি সাংবাদিক সম্মেলনে যেভাবে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যার বেড়াজালে ঘেরা বক্তব্য পেশ করলেন তাতে জাতি তার প্রতি কতখানি শ্রদ্ধা রাখতে পারবে আল্লাহই মালুম! তিনি তার লিখিত ভাষণের শুরুটা করলেন এভাবে, ‘একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতে শহীদ জিয়া আমাদের কয়েকজনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন এবং ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।’ স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বিষয়ে জাতির কাছে এত প্রমাণ-পঞ্জি থাকা সত্ত্বেও কর্নেল সাহেবরা নিছক মতলবি স্বার্থে এই জাতীয় মিথ্যাচার করে নিজেদের হাসির খোরাকে পরিণত করেন মাত্র! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সে বোধটুকুও তাদের নেই। দায়িত্বশীল লোকেরা কি করে এত মিথ্যা বলেন? মুখে ইসলামের বুলি আর দোহাই, অথচ মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে এরাই সব চেয়ে এগিয়ে থাকেন! কি দুর্ভাগ্য আমাদের! জনাব অলি কি দয়া করে খাস দেলে এবং সততা ও সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে আমাদের জানাবেন যে, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা করার কোন বৈধ অধিকার বা কর্তৃত্ব সেদিন ছিল কি? জিয়া ছিলেন দারুণ উচ্চাভিলাষী আর তাই প্রথম সুযোগেই বেতার ঘোষণায় নিজের নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন তিনি, আর পরক্ষণেই আবার সকলের আপত্তির মুখে ও যুক্তির কাছে নতি স্বীকার করে ‘আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ পক্ষ থেকে ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। আর পঁচিশে মার্চ রাতে তো তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর একজন একান্ত অনুগত সৈনিক হিসেবে বাঙালীদের নিধনকল্পে সোয়াত জাহাজযোগে আনীত পাকিস্তানী হানাদারদের অস্ত্র খালাসের জন্য উদ্যোগ গ্রহণে ছিলেন ব্যস্ত। কি করে ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামরা তাকে সেখান থেকে নিরস্ত্র করেছিলেন তার বিবরণ এখন জাতির জানা আছে। সুতরাং, এসব বিষয়ে আর কোন প্রকার বুজরুকি যে আকলমন্দরা এখন আর বিশ্বাস করবে না, সেটা কর্নেল সাহেবদের জানা থাকা উচিত নিজেদের স্বার্থেই। বিএনপির উৎপত্তি, এর বিকাশধারা, এর উদ্দেশ্য-লক্ষ্য এবং তা হাসিলের জন্য নানাবিধ চক্র-চক্রান্তের কাহিনী বিশদভাবে অন্য এক নিবন্ধে আলোচনার ইচ্ছে রইল। পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, বিএনপি নেতৃবৃন্দ কিংবা তাদের থিঙ্কট্যাংক বা সুশীলবাবুরা কথায় কথায় জনগণের দোহাই পাড়েন। তারা বলতেই থাকেন যে, ‘জনগণ এই সরকারকে আর চায় না। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে অধিষ্ঠিত এই সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় না হেরে যাবার ভয়ে‘ ইত্যাদি ইত্যাদি! এই সরকারবিরোধীরা এমন একটি নির্বাচনের কথা বলেন যাতে ‘জনগণ ভোট দিতে পারবে।’ অর্থাৎ, তারা ধরেই নিয়েছেন যে, ‘জনগণ যার যার ভোটটি দিতে পারবে না।’ যা হোক, এ প্রসঙ্গে আমি শুধু বলতে চাই যে, ‘জনগণে’র নাম ভাঙিয়ে এই মিথ্যা ছল আর কতদিন চালাবেন তারা? কথায় কথায় ‘জনগণ এই সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই বর্তমান সরকার গো হারা হেরে যাবে’- ইত্যাদি সব কথার ফানুস উড়িয়ে এরা সর্ব সাধারণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল অবলম্বন করেই চলেছে! এই সুশীল আহম্মকরা ‘জনগণ’ বলতে আসলে কি বোঝে, সেটাও আমাদের পরিষ্কার জানা দরকার। এদের কথায় মনে হবে যে, এরা সবজান্তা এবং দেশের সকল স্থানের মানুষের মনের গোপন কথাটি তাদের বাসায় বাসায় গিয়ে জেনে এসেছে এবং সেই মোতাবেক হিসাব কষে বলে দিচ্ছে যে, ‘জনগণ এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’ এই আহম্মকদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাস্য এই যে, দেশে কি শুধু বিএনপি আর তাদের তল্পিবাহকেরাই থাকে নাকি? এই দেশে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকের সংখ্যাতত্ত্বটি কি তাদের জানা আছে? আওয়ামী লীগ করে না কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সম্পূর্ণ আস্থাবান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এই দেশে কত, তা কি তাদের জানা আছে? উপরন্তু, এই জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ না করলেও তাদের ভোট যে আওয়ামী লীগ বা তাদের মিত্রদের বাক্সেই পড়বে, এই সহজ সত্যটি কি তাদের মাথায় আদৌ আছে? আর সবচেয়ে বড় কথা আওয়ামী লীগের ভোটারদের, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ভোটার এবং আর বেশ কয়েকটি স্টেকহোল্ডারের ভোটারদের কি ওই মতলববাজ রাজনীতিক ও ধড়িবাজ সুশীলেরা এ দেশের ‘জনগণ’ মনে করে না? তারা যে ‘জনগণের’ নামে সারাক্ষণ হায় মাতম করে তাও যে এক ধরনের ভাঁওতাবাজি, তা এখন বৃহত্তর সংখ্যক দেশবাসীর নিকট ‘পরিষ্কার-অতি পরিষ্কার!’ বড্ড জানতে ইচ্ছে হয় যে, বিএনপি সমর্থক সব তাবড় তাবড় বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, হাফ নেতা, ফুল নেতা ‘জনগণ’ ‘জনগণ’ বলে যে মর্সিয়া ক্রন্দন করে ফিরছে, এই জনগণ আসলে কারা? দেশের মানুষ ‘আওয়ামী লীগ সরকারকে চায় না’, তাদের এই ধারণায় উপনীত হওয়া বা এই বুঝ পাবার ইয়ার্ডস্টিকটা কি? কোন মন্ত্র বলে বা কোন মাপকাঠি দিয়ে মেপে তারা এই ধরনের এক অর্বাচীন ধারণা মানুষের মনে ঢোকাবার অপচেষ্টা করে ফিরছে? পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সংগ্রামরত রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে কুচক্রীরা এমন সব মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও গাঞ্জাখোরি কথা প্রচার করে বেড়াত, যা কিনা কেবল অধঃপতিতদের পক্ষেই শোভা পায়! এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমার সাংবাদিক পিতা শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন দৈনিক ইত্তেফাকের পাতায় দারুণ রসাল ও তির্যক সব শিরোনাম দিতেন। এর একটি যেমন, ‘গাঁজার নৌকা পাহাড় দিয়া যায়।’ বর্তমানে বিএনপি আর ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাদের আর তাদের সুশীল বাবুদের কথাবার্তা শুনে প্রকৃতপক্ষে দেশের জনগণ মুখ টিপে হাসে আর মনে মনে বলে, ‘ঐরে, গাঁজার নৌকা পাহাড় দিয়া যায়!’ এই যে জাতীয় ঐক্যজোট ও ২০ দলীয় জোট- এদের মধ্যে প্রকৃত প্রস্তাবে বিএনপিই হচ্ছে একমাত্র দল যাদের একটি উল্লেখযোগ্য ভোটব্যাংক আছে। এছাড়া, জামায়াতের আছে কিছু। অতএব, মনোনয়ন বরাদ্দ নিয়ে এই জোটসমূহের মধ্যে আগামীতে কি তেলেসমাতি কান্ড ঘটে, তা দেখার জন্য আমরা সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কথায় বলে, ‘বড়ো’র পিরীতি বালির বাঁধ।’ এই জোটগুলোর মধ্যে বিএনপি সবচেয়ে বড় দল হওয়ায় ছোট ছোট দলগুলো অচিরেই উপরে উল্লিখিত প্রবাদবাক্যকে সত্যে পরিণত করে আম ও ছালা দুইই হারায় কিনা, সেটিও দেখার বিষয় বৈকি! সবশেষে বলা দরকার যে, সম্প্রতি ঢাকায় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আওয়ামী লীগ নেতা সাদেকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সর্ব বিচারেই ছিল অনভিপ্রেত। মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে এ ধরনের সংঘর্ষ, বিবাদ-বিসম্বাদ, বিরোধিতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আজকের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ ধরনের কোন কিছুকেই যে আওয়ামী লীগের প্রশ্রয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই, এই কথাটি সকলকে মাথায় রাখতে হবে, যদি আসলেই দেশের ও জাতির মঙ্গল চান আপনারা। নচেৎ, যে অমানিশার অন্ধকারে আপনি, আমি, আমরা সকলে তলিয়ে যাব, তা ভাবতেও ভয় হয়! আমার বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এ ব্যাপারে যারপরনাই সদা সতর্ক আছেন, আর সেটিই আমাদের একমাত্র ভরসা! লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×