ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাশেদুজ্জামান রাজিব

অভিমত -সড়ক দুর্ঘটনা ॥ কারণ ও প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২০ নভেম্বর ২০১৮

অভিমত -সড়ক দুর্ঘটনা ॥ কারণ ও প্রতিরোধ

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ প্রতিদিনের সাধারণ ঘটনা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। পত্র-পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ। টেলিভিশনে ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে কোন না কোন এলাকার সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ থাকবেই। এতে প্রাণ হারাচ্ছে অগণিত মানুষ। আহত হচ্ছে অনেকেই। অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও পড়ছে এর পরোক্ষ প্রভাব। সময়ের আবর্তনে দেশের উন্নয়ন ঘটছে। দেশে যুক্ত হচ্ছে নিত্য-নতুন সব প্রযুক্তি। পাশাপাশি নতুন নতুন যানবাহনও যুক্ত হচ্ছে রাস্তায়। আর দেশের জনসংখ্যাও অনিয়ন্ত্রিতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও সম্প্রতিককালে এর প্রভাব কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রথমত দায়ী হচ্ছে সরু রাস্তা। আমাদের দেশে যে পরিমাণ যানবাহন রাস্তায় চলাচল করে (বিশেষত রাজধানী শহরে), সে তুলনায় রাস্তা প্রশস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ যানজট। রাজধানী শহরে যানজটে অতিষ্ঠ প্রতিটি মানুষ। রাস্তা তুলনামূলক সঙ্কীর্ণ হওয়ায় হাল্কা, ভারি সব ধরনের যানবাহন একই রাস্তায় চলাচল করে। ফলে সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। অনেক সময় ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত সড়ক দুর্ঘটনা। আবার দীর্ঘ সময় ধরে যানজটের কারণে বিরক্তবোধ করে যাত্রীরা। গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। তাই যাত্রীদের গাড়ির চালককে উস্কানি দেয়া, দুর্ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, গাড়ির চালকরাও আমাদের মতো সাধারণ মানুষ। যানজটে আমরা যতটা বিরক্ত হই, তারাও ঠিক ততটাই বিরক্ত হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে কোন চালক যাত্রাপথে বিলম্ব করে না। যাত্রীদের উস্কানিমূলক বা রাগান্বিত আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ির চালক অনেক সময় দ্রুত গাড়ী চালানোর চেষ্টা করে। ফলে সংঘটিত হয় অপ্রত্যাশিত সড়ক দুর্ঘটনা। দেশে দুর্নীতিও কম হয় না। অনেক গাড়ির মালিক লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ গাড়ি চালকের হাতে গাড়ি তুলে দেন। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি অবৈধ লাইসেন্স বহনকারী ‘ড্রাইভারও’ প্রচুর আছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরাও দুর্নীতিতে প্রলুব্ধ হয়। লাইসেন্সবিহীন গাড়িকে, ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী চালককে শাস্তি প্রদানের পরিবর্তে তার কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নামক অবৈধ উপার্জনকারী ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যাও কম নয়। এদের চেয়ে দেশের স্কাউট সদস্যরা বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়। পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কম বেশি দায়ী। ওভারব্রিজ কিংবা জেব্রাক্রসিং ব্যবহারের পরিবর্তে সোজাসুজি রাস্তা পারাপারের প্রবণতা অধিক। রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। কারণ, একজন চালকের জন্য হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি থামানো সম্ভব নয়। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা তাই প্রতিনিয়তই ঘটে। আর দেশের জনসাধারণের চলাচলের ফুটপাথ প্রতিনিয়তই হচ্ছে লুটপাথ অর্থাৎ বেদখল ফুটপাথে তৈরি হচ্ছে দোকানপাট, অস্থায়ী বসতি, মোটরসাইকেল পার্কিং করার জায়গা। ফলে ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তায় নামছে জনগণ। সংঘটিত হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে গাড়ি পার্কিং করে, রাস্তার সঙ্কীর্র্ণতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী। দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা উভয়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। যথাযথ আইন প্রয়োগের পাশাপাশি রাস্তার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চালক, যাত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রত্যেককেই দায়িত্বশীলতা অবলম্বন করা জরুরী। এ সবের সঙ্গে সঙ্গে জনসচেতনতা থাকলেই কেবল এই সমস্যার সমাধান হবে। লেখক : শিক্ষার্থী, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা
×