ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী

ব্যাংকাররাই ঋণখেলাপী হওয়ার সুযোগ করে দেন

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

ব্যাংকাররাই ঋণখেলাপী হওয়ার সুযোগ করে দেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঋণ খেলাপীর পেছনে ব্যাংকারদের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, খেলাপী ঋণের বারবার পুনঃতফসিল হয়ে থাকে। কতবার ঋণ খেলাপীরা এ সুযোগ পেয়ে থাকেন তা আমার জানা নেই। আর এ সুযোগ দিয়ে থাকেন ব্যাংকাররা। এভাবেই ব্যাংকাররা চেষ্টা করেন যাতে উদ্যোক্তারা ঋণ খেলাপী হতে পারেন। ব্যাংকাররাই এ অবস্থা তৈরি করেছেন। যাতে দ্রুত সে ঋণ খেলাপী হয়ে যায়। রবিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) মিলনায়তনে পাঁচ দিনব্যাপী রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। রবিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) মিলনায়তনে পাঁচ দিনব্যাপী রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপী ঋণের অনবরত পুনঃতফসিল (রিশিডিউলিং) হওয়ায় ঋণ খেলাপী বেড়ে যাচ্ছে। এখন এর একটু লাগাম টানা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে অবসায়ন বা একীভূতকরণ হলো সবচেয়ে ভাল সমাধান। কিন্তু সেটি হয় না। কারণ ব্যাংকাররাই চায় উদ্যোক্তারা তাদের বাধ্য থাকুক। আমার কাছে মনে হয় ব্যাংকারদের এটা একটা অস্ত্র। যেটা ব্যবহার করেন এবং করতে চান। এই লক্ষ্যটা অত্যন্ত খারাপ। ব্যাংকারদের উদ্দেশে আমার একটা উপদেশ হচ্ছে, জোর করে হলেও এ লক্ষ্য থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। একজন উদ্যোক্তাকে শুরুতে সাহায্য করবেন। কিন্তু ব্যাংকাররা সেটা করেন না। এক্ষেত্রে আপনাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় ব্যাংকারদের এটা একটা অস্ত্র। যেটা ব্যবহার করেন এবং করতে চান। এই লক্ষ্যটা অত্যন্ত খারাপ লক্ষ্য। এ সময় ব্যাংকারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার একটা উপদেশ হচ্ছে এ লক্ষ্য থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু করেন এ বিষয়ে। আপনাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে। ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় ব্যাংকিং খাত সরকারী ছিল। কিন্তু এখন ব্যাংকিং খাত ব্যক্তিমালিকানায় অনেক প্রসারিত। ব্যাংকিং খাতের সিংহভাগ ব্যবসা ব্যক্তি মালিকানা খাতেই হয়ে থাকে। এক সময় ছিল সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়। এখন আর সেটা নেই। ইসলামী ব্যাংকই মনে হয় সর্বত্র বিরাজ করে। তার মানে ব্যাংকিং খাত ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে গত কয়েক বছরে। তিনি বলেন, এ খাত নিয়ে অনেক সমালোচনা-আলোচনা বিদ্যমান। অনেকই বলতে চান-এ খাতটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং এটি দুর্বল খাত হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করেন। আর একটি কথা বলা হয়-আমাদের এখানে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। সরকারীসহ ৬৩টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ সরকারী ব্যাংক। খেলাপী ঋণ প্রসঙ্গে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে খেলাপী ঋণ। খেলাপী ঋণের ক্ষেত্রে মোটামুটি দোষটা সরকারী ব্যাংকের। সেগুলোতেই খেলাপী ঋণের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। প্রাইভেট ব্যাংক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট ব্যাংক সে রকম হয়নি। তবে প্রাইভেট খাতে আরেক রকম ফাঁকিবাজি রয়েছে। প্রাইভেট খাতের এক ব্যাংকের পরিচালক সমঝোতার মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকে লোন নেন। তিনি তার নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ নেন না। এইটা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টকর। তবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আমাদের উপায় বের করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা হয়নি। মুহিত বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংক অবসায়ন বা একীভূতকরণ একেবারেই ছিল না। এক্ষেত্রে একটি আইন হয়েছে। তবে আইনটি খুব উপযুক্ত নয়। তিনি বলেন, ব্যাংক একেবারেই বন্ধ না করে দিয়ে একীভূতকরণ করা যেতে পারে। এটা খুব ভাল হবে। ব্যাংকারদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, একটি প্রকল্প হয়নি। সেটাকে বাঁচানোর চেষ্টা একটু কম করেন। সেটা বন্ধ করে দিয়ে নতুন করে অন্য কিছু করার ব্যবস্থা করেন। সেটাই ভাল হবে। তিনি বলেন, আমার আমলে বিদেশে বিনিয়োগের তেমন সুযোগ দিচ্ছে না। কিন্তু আগামীতে আমার মনে হয় বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন হবে। অর্থনীতিটা এখন বেশ উন্নতি করেছে তাই বিদেশে বিনিয়োগটা দোষের কিছু হবে না।
×