ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার প্রস্তুতি, বর্জনের ডাক দিলে ভোট ঠেকানোর রণপ্রস্তুতি ঠিক করা আছে, তবে এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০ দলের অন্তত ৫০ আসন চায়

কৌশল অপকৌশলে জামায়াত ॥ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দিকে তাকিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

কৌশল অপকৌশলে জামায়াত ॥ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দিকে তাকিয়ে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে লাগাতার নাশকতার গোপন রণপ্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াত। ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকলে এক ধরনের চিন্তা আর নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের ডাক দিলে কৌশল কী হবে, তা ঠিক করেছে নিবন্ধনবিহীন দলটি। বিএনপির শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা নিয়ে সন্দীহান জামায়াত। তবে এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা ২০ দলের অন্তত ৫০ আসন চায়। ফলে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে দাবি করলেও ২০ দলের ছেড়ে দেয়া সকল আসনেই জামায়াত নেতারা হতে যাচ্ছেন ড. কামাল হোসেনদের প্রার্থী। জামায়াত এখন পর্যন্ত তাদের মনোনয়ন ফরম কেনা প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেনি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকের নাম বাইরে চলে এসেছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সূত্রগুলো বলছে, জামায়াত ৬১ আসনে মনোনয়নপত্র কিনেছে। অন্তত ৫০ আসন চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের কাছে। নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৪টি আসন পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিল ২০ দল। এবার সেখানে ৪০ আসনের বিষয়ে কোন ছাড় দিতে তারা রাজি নয়। তবে বিএনপি যতটি আসনেই জামায়াতকে ছাড় দেবে সেখানে ২০ দল ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের কোন প্রার্থী দেয়া যাবে না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে জামায়াতের হাই কমান্ড। বিএনপিকে একই কথা জানিয়ে দিয়েছে ২০ দলের অন্যতম ক্যাডারনির্ভর বাহিনী ছাত্র শিবির। কিন্তু জামায়াতের প্রতীক কি জোটের অন্যদের মতো ধানের শীষ হবে, নাকি অন্য কোন প্রতীক, তা নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের দেনদরবার। টানাপোড়েন চলছে জামায়াত নেতাদের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়া নিয়েও। ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বিএনপিকে জানিয়েছে, ২০ দল জামায়াতকে আসন ছাড়লে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে সামনে আসবেন জামায়াত নেতারা। যা দেশের মানুষের মাঝে ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবের জন্ম দেবে। বিষয়টি নিয়ে কৌশলী হচ্ছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। রাজনীতিতে সকলের নির্বাচনে যাওয়ার আলোচনার মধ্যেই যে প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে সেটি হলো, ২০ দলীয় জোটের বড় শরিক জামায়াতের কী হবে? কি করবে জামায়াত? ২০ দল জামায়াতকে যেসব আসন দেবে সেখানে কি তাহলে যুদ্ধাপরাধী দলটির নেতারাই হচ্ছেন ড. কামালদের প্রার্থী? এসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতের নিবন্ধনও বাতিল হয়ে গেছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দল হিসেবে যেমন জামায়াতের নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই তেমনি তাদের প্রতীক নিয়েও ভোটে দাঁড়ানোর উপায় নেই। রাজনৈতিক পরিম-লে জামায়াতের কৌশল নিয়ে আলোচনার মধ্যে দলটির শীর্ষ পর্যায় বলছে, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থিতার কৌশলই নিয়েছে। আপাতত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের ব্যানারে ৩১টি, এর মধ্যে জোটবদ্ধভাবে ৩০টি এবং এককভাবে একটিতে নির্বাচন করে জামায়াত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি আসনে জোটগত সমর্থন পেলেও চারটি থেকে দলীয়ভাবে করে। দলটির তৃণমূলের অভিমতের ভিত্তিতে এবার তাদের দাবি ৬২টি। তবে চূড়ান্তভাবে ৪টি আসনে ন্যূনতম ছাড় চায় জামায়াত। ১৯৮৬ সালের ৭ মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দলটি ১০টি আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে দলটি ২২২ প্রার্থী দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত তিনটি আসনে জয়ী হয়। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি আসন পায়। মহিলা আসনগুলো থেকে চারটি আসনে জয়ী হয় তারা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত দুটি আসনে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি ও চারটিতে এককভাবে নির্বাচন করে। এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগের ব্যানারে নির্বাচন করেছিল জামায়াত। জামায়াতের নেতাকর্মীরা বলছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দল হিসেবে টিকে থাকাটা বেশি জরুরী। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী আমৃত্যু কারাদন্ডে দন্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলে জাতীয় সংসদের পিরোজপুরের দুটি আসনে প্রার্থী হতে চান। এতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সায় আছে। তবে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা ও ২০-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারও আসনটিতে প্রার্থী হতে চান। পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বড় ছেলে শামীম বিন সাঈদী ও পিরোজপুর-২ (ভা-ারিয়া-কাউখালী-ইন্দুরকানি) আসনে আরেক ছেলে মাসুদ বিন সাঈদী প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন। মাসুদ সাঈদী বর্তমানে ইন্দুরকানি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মাসুদ সাঈদী বলেছেন, পিরোজপুর-২ আসনে আমি প্রার্থী হচ্ছি। আমরা দুই ভাই ২০-দলীয় জোটের কাছে পিরোজপুর ১ ও ২ আসন দাবি করব। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পিরোজপুর-১ আসন থেকে সাঈদী সংসদ সদস্য হন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের কাছে হারেন। পিরোজপুর-১ আসনটি জামায়াত তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। সাঈদীর বড় ছেলে শামীম বিন সাঈদী বলেন, আমি পিরোজপুর-১ আসনে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ লক্ষ্যে এলাকায় জনসংযোগ করছি। জেলা জামায়াত বলছে, পিরোজপুরের দুটি আসনে নির্বাচন করার মতো তাদের নেতাকর্মী রয়েছেন। তবে কোন্ কোন্ আসনে প্রার্থী দেয়া হবে, তা কেন্দ্র নির্ধারণ করবে। এরপর জোটের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের তিন নেতা-চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করেছেন। যদিও চূড়ান্ত কৌশল এখনই প্রকাশ করতে চাইছেন না তারা। শেষ মুহূর্তেও দলটির কৌশল পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন নেতারা। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার এক সদস্য যিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর ফরিদপুরের একটি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি বলছেন, ২০০৮ সালে আমরা মোট ৩৯টি আসনে নির্বাচন করেছিলাম। তখন বিএনপি জোট আমাদের ৩৪ আসন ছেড়ে দিয়েছিল। বাকিগুলো আমরা তাদের ছেড়ে দিয়েছিলাম। এবার অন্তত অর্ধশত আসনে আমাদের ফাইটিং ক্যান্ডিডেট রয়েছেন। সেক্ষেত্রে জোটের কাছে আমরা ৫০/৬০ আসন চাইব। কতটা দেবে সেটা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রতীকের বিষয়ে আমাদের অবস্থান এখনও বলা যাচ্ছে না। আমরা ঐক্যফ্রন্টের ছোট দলগুলোর মতো হঠাৎ বিএনপির প্রতীক নিতে পারি না। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম ইতোমধ্যেই বলেছেন, আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে কী কৌশলে অংশ নেবে সেটা এখনই বলা কঠিন। আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০০৮ সালে বিএনপি আমাদের ৩৪ আসন দিয়েছিল। এবার তারচেয়ে বেশি আসন প্রত্যাশা করছি। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির প্রার্থীর বাইরে গিয়েই নির্বাচন করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ২০ দলে আছি। ২০ দলে থেকেই জোটগত নির্বাচন করব ইনশাল্লাহ! আমাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। প্রতীক নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যিনি যে প্রতীক পাবেন সেই প্রতীক নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কোন সিদ্ধান্ত বা চিন্তাভাবনা এখনও জামায়াতের নেই। জামায়াত নির্বাচন করবে ২০ দলীয় জোটগতভাবে, আর জামায়াতের প্রার্থী হবেন স্বতন্ত্র। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ‘নিবন্ধনহারা জামায়াত’ নেতারা কৌশলে নির্বাচনের মাঠে নিজেদের উপস্থিতি ধরে রাখতে বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে গিয়ে বিএনপিরই নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’ও ব্যবহার করতে পারে। তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সকল দল বিষয়টিকে কীভাবে নেবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যেসব আসনে নির্বাচনে যেতে চায় জামায়াত ॥ নির্বাচনে জোটগতভাবে মনোনয়নের প্রত্যাশায় ৫০ সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ইতোমধ্যেই বিএনপির হাতে তুলে দিয়েছে জামায়াত। সারাদেশে ৬১টি আসন থেকে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থিতার জন্য মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন জামায়াতের প্রার্থীরা। যাচাই-বাছাই করে ৫০ জনের নামের তালিকা দলের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জামায়াতের সূত্রগুলো। তালিকায় নাম ছাড়াও সংশ্লিষ্ট আসনে ভোটের হিসাব, জামায়াতের বিগত দিনে প্রাপ্ত ভোট, সম্ভাবনা, সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিএনপির অবস্থানসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে। এদিকে দলটির আমির মকবুল আহমাদ প্রার্থী হচ্ছেন না। বয়সের ভার ও অসুস্থতার কারণে নির্বাচন থেকে বিরত রয়েছেন, বলছেন নেতারা। তার সংসদীয় এলাকা ফেনী। এছাড়া ঢাকা উত্তর, সিলেট মহানগর ও গাজীপুর মহানগরের আমিররাও নির্বাচন করছেন না। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, অসুস্থতার কারণে এবং বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় আমির নির্বাচন করছেন না। ২০১৬ সালের অক্টোবরে আমির নির্বাচিত হন মকবুল আহমাদ। জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতারের পর, ২০১৬ সালের আগে প্রায় ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে দলটির ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন মকবুল আহমাদ। এ সময় তিনি আত্মগোপনে থেকেই দল পরিচালনা করেছেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। নির্বাচনে ঢাকা-১৫ (মিরপুর-কাফরুল) সংসদীয় আসনে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান। সূত্রগুলো বলছে, যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা হলেন- ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আব্দুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মাওলানা আবু হানিফ, দিনাজপুর-৪ আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-১ আব্দুস সাত্তার, গাইবান্ধা-১ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-৩ মাওলানা নজরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ইয়াহইয়া খালেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল, রাজশাহী-১ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নাটোর-১ তাসনিম আলম, নওগাঁ-৪ খ. ম. আবদুর রাকিব, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, সিরাজগঞ্জ-৫ অধ্যক্ষ আলী আলম, বগুড়া-৫ আলহাজ দবিবুর রহমান মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। পাবনা-১ আসনে ডাঃ আব্দুল বাসেত, পাবনা-৪ অধ্যাপক আবু তালেব ম-ল, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, কুষ্টিয়া-২ মুহাম্মদ আবদুল গফুর, চুয়াডাঙ্গা-২ মোহাম্মদ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-১ আজিজুর রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, যশোর-৫ এনামুল হক, যশোর-৬ অধ্যাপক মুক্তার আলী, বাগেরহাট-৩ আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-১ অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, পটুয়াখালী-২ ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ। ঢাকা-১৫ ডাঃ শফিকুর রহমান, ময়মনসিংহ-৬ আসনে অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা ৬ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কুমিল্লা-১১ ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের, লক্ষ্মীপুর-২ মাস্টার রুহুল আমীন, লক্ষ্মীপুর-৩ আনোয়ারুল আজিম, ফেনী-৩ ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক। চট্টগ্রাম-১০ আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ মাওলানা শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১৬ জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। জামায়াতের আছে নাশকতার প্রস্তুতিও! স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে লাগাতার নাশকতার গোপন রণপ্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াত। ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকলে এক ধরনের চিন্তা, আর নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের ডাক দিলে কৌশল কী হবে- তা ঠিক করেছে নিবন্ধনবিহীন এ দলটি। সরকারকে নাশকতার বিষয়ে ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। যেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে রীতিমতো রণপ্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জামায়াত-শিবির। সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোট বর্জন করতে পারে বলে মনে করছে জামায়াত। তাই ভোট বর্জন করে নির্বাচন ঠেকানোর প্রস্তুতিও আছে জামায়াত-শিবিরের। আবার নির্বাচনে অংশ নিলে গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলিয়ে ভোটকেন্দ্রে শক্ত অবস্থান নেয়া এবং সহিংসতার মাধ্যমে ভোটের ফল নিজেদের অনুকূলে নেয়ার প্রস্তুতি আছে দলটির। প্রয়োজনে হামলার মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া এবং অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নাশকতার টার্গেট নিয়েছে দলটি। নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মূল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে জামায়াত-শিবির থাকবে। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশ জামায়াতের চট্টগ্রামের শীর্ষ কয়েক নেতাকে আটকের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। এ সকল তথ্য এরই মধ্যে প্রতিবেদন আকারে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে আমরা জেনেছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। পুলিশ বলছে, জামায়াতের পরামর্শে ছাত্র শিবিরের ২০১৮ সালের পুরো সাংগঠনিক পরিকল্পনা আমরা জানতে পেরেছি। এই পরিকল্পনার বড় একটি অংশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করতে চায়। এটাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। দ্বিতীয় টার্গেট হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত দেশের সব শাখায় দিক নির্দেশনামূলক একটি বক্তব্য পাঠিয়েছে। এতে ২০ দফা দিক নির্দেশনার কথা উল্লেখ রয়েছে। সেদিক নির্দেশনায় নির্বাচন নিয়ে ছাত্র শিবিরের পরিকল্পনায় সরকার বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নিজেদের বড় শক্তি হিসেবে প্রকাশের কথা উল্লেখ আছে। জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টের ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন ॥ একসঙ্গে দুটি রাজনৈতিক জোটে থাকায় জামায়াত নিয়ে বিএনপিকে ভাবতে হচ্ছে বেশি। তবে বিএনপি জামায়াতকে আসন ভাগ করে দিলে ঐক্যফ্রন্ট কি জামায়াতকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেবে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। নেতারা জামায়াত নিয়ে কথা বললেই এড়িয়ে যাচ্ছেন আবার ২০ দলের সকলকে নিজেদের বলেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলছেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। বিএনপির মধ্যে জামায়াতকে নিয়ে দুই ধরনের মতামত আছে। একটি অংশ মনে করছে যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচন করলে কোন ক্ষতি নেই। আরেকটি অংশ মনে করে, ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের নির্বাচন না করাই ভাল। এদিকে ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান বলেছেন, তারা জোটের ভিত্তিতেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাদের ৫০/৬০ জন এবারের নির্বাচনে অংশ নেবেন। এরকম পরিস্থিতিতেও ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই জামায়াতের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন বলে নিশ্চিত করেন এ জামায়াত নেতা। একইভাবে যেসব আসনে জামায়াতের নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেসব আসনে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে আশাও করেন তিনি। তাহলে কি জামায়াত নেতাই হবেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী? উত্তরে জামায়াতকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের কোন ভাবনা নেই বলে দাবি করেছেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা এবং গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। বলেন, এখানে জামায়াতের আসার কোন সুযোগ বা সম্ভাবনা আছে বলেও আমরা মনে করছি না। যেখানে জামায়াতের নেতারা প্রার্থী হবে সেখানে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী দেবে কি না? সুব্রত চৌধুরী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেখানে প্রার্থী দেবে সেখানে জামায়াতের প্রার্থী থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ৩০০ আসনে সর্বসম্মতভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।
×