ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেলা জজদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আইনমন্ত্রী

৩০ বছরের পুঞ্জীভূত মামলাজট নিরসনে কাজ করছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

 ৩০ বছরের পুঞ্জীভূত মামলাজট নিরসনে কাজ করছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিগত ৩০ বছরের পুঞ্জীভূত ৩৪ লাখ মামলার জট নিরসনে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। বিচার প্রার্থী জনগণকে বিচার দিতে হবে একই সঙ্গে মামলার জটও কমাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি তার মধ্যে একটা হলো মামলা তাড়াতাড়ি শেষ করার ব্যবস্থা। পাশাপাশি কীভাবে মামলা দ্রুত শেষ করা যায় তার জন্য বিপরীত পথও খুঁজছি। আমরা আইনের শাসনকে কোনভাবে প্রভাবিত করতে চাই না। এ জন্য আমাদের আইনের শাসনের মধ্যে থেকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। রবিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জেলা জজদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা অবগত আছেন, কিছুদিন আগে অর্থাৎ বছরদেড়েক আগে আপনাদের (জেলা জজদের) শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার বা আইন মন্ত্রণালয়ের কথা কাটাকাটি হয়েছে। কেন হয়েছিল। এটা কি আমার স্বার্থে হয়েছিল। আমি আমার ইগো স্বার্থে তার সঙ্গে ইয়ে করেছিলাম। না। এটা হচ্ছে- উনারা যেসব কথা বলছেন। আমি বলব উনারা না, এখানে একমাত্র এক ভদ্রলোক তার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন (সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা)। সেখানে উনারা বলেছিলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে বেনামে একটা অভিযোগ এলেই তাহলে তারা আপনাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে নেবেন। আপনাদের একটা নোটিস দেয়ার প্রয়োজনও উনারা রাখবেন না। আমি তখন বললাম, এটা কীভাবে সম্ভব। তাদের সম্মানের কথাটি আপনাদের মাথায় রাখা উচিত। তাদের যদি আপনারা সম্মানটুকু না দেন তাহলে তারা কীভাবে কাজ করবে। মন্ত্রী বলেন, একজন জেলা জজ যদি সব সময় এই ভয়ে থাকেন যে, কেউ একজন তার বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে অভিযোগ দেয় সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে প্রসিডিং শুরু হয়ে যায়। সবচেয়ে আপত্তিজনক কথা হচ্ছে, কাউকে অবহিত করারও প্রয়োজন হবে না। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। সবচেয়ে বড় কথা হলো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাকে প্রথমত একটা শোকজ নোটিস দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে, আপনারা সেটাও রাখবেন না। এই সমস্যাটা যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি নয়। এটা তো পরিষ্কার। সিনহা চলে যাওয়ার পর এই সমস্যা নিয়ে আমি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সব বিচারপতিকে নিয়ে বসেছি। দুদিনেই তা সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি তখন সকল বিচারপতির কাছে গ্রহণযোগ্যও হয়েছে। আপনারা আমাকে ক্রেডিট দেন, না দেন, সেটা বড় কথা নয়। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, গত ৩০ বছরের পুঞ্জীভূত মামলার জট নিয়ে এখন আপনারা লড়াই করছেন। প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে ৩৪ লাখ মামলার জটের কথা। তিনি বলেন, এটা যখন এক লাখ, দুই লাখ ছিল তখন যদি কোন পদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে হয়ত এখন ৩৪ লাখ মামলার জটের দায়ভার নিয়ে কাজ করতে হতো না। তার পরও বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচার দিতে হবে একই সঙ্গে মামলার জটও কমাতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি তার মধ্যে একটা হলো মামলা তাড়াতাড়ি শেষ করার ব্যবস্থা। পাশাপাশি কীভাবে মামলা দ্রুত শেষ করা যায় তার জন্য বিপরীত পথও খুঁজছি। সিভিল মামলা বেগুনক্ষেতের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, একবার লাগালে দীর্ঘ সময় ধরে ফল আসতে থাকবে। আমরা এই সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে চাই। জনগণকে বিচার দিতে হবে। বিচার দিতে যদি আমরা দেরি করি তাহলে যেটা হবে সেটা হবে বিচার বিভাগের ব্যর্থতা। আর এর ফলে স্ট্রীট জাস্টিস উইল প্রিভেন্ট (প্রাধান্য পাবে)। অনেক জায়গায় কিন্তু তাই হচ্ছে। বিচার দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে স্ট্রীট জাস্টিস হ্যাব টেকেন ওভার। আর এই স্ট্রীট জাস্টিস যদি প্রিভেন্ট করেন তাহলে এনার্কি (নৈরাজ্য) আসতে বাধ্য। আমরা আইনের শাসনকে কোনভাবে প্রভাবিত করতে চাই না। এ জন্য আমাদের আইনের শাসনের মধ্য থেকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ কারণে নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা জেলা জজ। আপনারা জনগণকে বলবেন, যেসব মামলা সহজে নিষ্পত্তিযোগ্য তা যেন কোর্টে না এসে বাইরে তারা সমাধান করে ফেলে। এভাবে যদি তাদের উৎসাহিত করা যায়, তাহলে মনে হয় মামলার সংখ্যা অনেক কমে যাবে। আমি আপনাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বিচারপতি মুসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হকসহ অনেকে।
×