ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে পাসপোর্ট করতে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

 বগুড়ায় দালাল চক্রের  দৌরাত্ম্যে পাসপোর্ট  করতে ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় পাসপোর্ট কেন্দ্রীক দালাল চক্রের তৎপরতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে। এছাড়া পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরিস্থিতি সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় পাসপোর্টের জন্য আবেদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট সরবরাহ হচ্ছে না এবং পাসপোর্ট প্রাপ্তির সময়ও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এতে পাসপোর্ট নিতে এসে দিনের পর দিন অফিসে ধর্ণা দিতে হচ্ছে সাধারণ লোকজনকে। চিকিৎসা বা জরুরী প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজনে পাসপোর্ট করতে এসেও নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে অবশ্য পাসপোর্ট অফিস থেকে জানান হয়েছে, শীতকালীন সময়ে পাসপোর্ট করতে ইচ্ছুক লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয়ভাবে পাসপোর্ট প্রিন্ট বিভাগে চাপ বেশি থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে পাসপোর্টের জন্য ফরম পূরণ, জমা, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও পাসপোর্ট গ্রহণের কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। তবে পাসপোর্ট বিতরণ লাইনে বেশির ভাগ লোকজনই স্লিপে দেয়া নির্ধারিত তারিখে এসে পাসপোর্ট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাধারণ সময়ে প্রতিদিন যেখানে আবেদন জমা পড়তো ১শ’ থেকে সোয়া শ’ সেখানে বর্তমানে আবেদন জমা পড়ছে আড়াই শ’ থেকে ২৮০। এর মধ্যে ২ শতাধিক আবার নতুন পাসপোর্টের আবেদন। তিনি আরও জানান, বিপুল সংখ্যক পাসপোর্টের আবেদনের কারণে কেন্দ্রীয় প্রিন্টিং বিভাগ থেকে পাসপোর্ট পেতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বতর্মানে বগুড়া পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রিন্টিং’র অপেক্ষায় থাকা পাসপোর্টের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। এদিকে পাসপোর্ট অফিসে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চত্বরে দালাল চক্রের তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান না থাকলেও এর সামনের এলাকা (খান্দার), পাসপোর্টের ফি জমা দেয়ার জন্য নির্ধারিত ব্যাংক এলাকা, এবং বগুড়া রেজিস্ট্রি অফিস এলাকায় একাধিক দালাল চক্র তৎপর। এর সঙ্গে রয়েছে আরও কয়েকটি স্থানে ট্রাভেল এজেন্সির নামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব কিছু অফিস। এসব জায়গা থেকে দালাল চক্রের সদস্যরা দ্রুততম সময়ে এবং লাইনে দাড়ানোর ঝামেলা এড়িয়ে পাসপোর্ট দেয়ার নামে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনের নিকট থেকে চুক্তি ভিত্তিক এককালীন টাকা নিচ্ছে। একুশ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট সরবরাহের জন্য সরকারী খাতে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও দালাল চক্র আবেদন ফরম পূরণসহ ঝামেলা এড়িয়ে পাসপোর্ট দিতে টাকা নিচ্ছে ৬ হাজার টাকা। তবে বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, তার অফিস এলাকায় দালাল বা হয়রানির সুযোগ নেই। শুধু চাপ বেশি থাকলে দীর্ঘ লাইনে দাড়াতে হচ্ছে। রবিবার দুপুরে পাসপোর্ট অফিসে দালাল চক্রের এক সদস্য লাইনে দাড়ানো বিক্ষুব্ধ কয়েক ব্যক্তির হাতে ধরা পড়েন। ওই ব্যক্তি ২টি পাসপোর্ট আবেদন ফরম লুকিয়ে জমা দেয়ার চেষ্টা করছিল। অফিসের প্রধান ফটকের প্রহরী তাকে সহায়তা করছিল বলে বিক্ষুব্ধ কয়েকজন অভিযোগ করেন। তবে বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের পক্ষ থেকে অফিসের বাইরে রাস্তার ওপর বিভিন্ন ফটোস্ট্যাট ও কম্পিউটারের দোকানসহ ট্রাভেল এজেন্সির সাইনবোর্ড ঝুলানো দোকান গুলোতে দালাল চক্রের তৎপরতা থাকার বিষয়টি স্বীকার করা হয়। পাসপোর্ট কর্মকর্তা জানান, অফিসের প্রধান ফটক থেকে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে নানাভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিসহ ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ করার ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়ে গত মাসে জেলা প্রশাসন বরাবর লিখিতভাবে জানানোর পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছিল। এতে দালালদের তৎপরতা সপ্তাহখানেক বন্ধ থাকলেও আবার তা চালু হয়েছে বলে তারা অভিযোগ পাচ্ছেন। পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জানান, ভেতরে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। তবে বাইরে কেউ দালাল চক্রের খপ্পরে পড়লে তাদের তেমন কিছু করার থাকে না। তবে এ বিষয়ে সচেতনমূলক কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তিনি জানান।
×