ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশজয়ী শাবির তিন প্রোগ্রামার

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

দেশজয়ী শাবির তিন প্রোগ্রামার

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি মেনে নিয়ে এ বিশ^বিদ্যালয়টিতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালে। যাত্রা শুরুর পরপরই নিজেদের সাফল্যের প্রমাণ দিয়েই চলছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পিপীলিকা সার্চ ইঞ্জিন, রোবট রিবো, ড্রোন, ওয়াইফাইভিত্তিক ক্যাম্পাস, মোবাইল ফোনে ভর্তিসহ নানা প্রথম অর্জন রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ^বিদ্যালয়টির সাফল্যের মুকুটে সর্বশেষ সংযোজন প্রোগ্রামিং দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাকর ইভেন্ট ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (এসিএম আইসিপিসি) এর ঢাকা সাইটে চ্যাম্পিয়ন। গত ১০ নবেম্বর দেশের সবকটি বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন টিমকে হারিয়ে এ বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন শাবির ‘সাস্ট ডেসিফ্রেডর’। শাবির ‘সাস্ট ডেসিফ্রেডর’ টিমটিই একমাত্র ছয়টি সমস্যার সমাধান করতে পেরে চ্যাম্পিয়ন হয়। অন্যদিকে পাঁচটি করে সমাধান করে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দুটো টিম। ঢাকা সাইটের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হয়ে শাহজালাল ও বুয়েটের এই দুটি দলই ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্তুগালে অনুষ্ঠিতব্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশ নেবে। ঢাকা সাইটের ফাইনাল পর্যায়ে অংশ নেয় ২৯৮টি টিম। ‘সাস্ট ডেসিফ্রেডর’ দলের তিনজন সদস্য হলেন মওদুদ আহমেদ শাহরিয়ার, জুবায়ের আরাফ, অভিষেক পাল। তিনজনই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রোগ্রামিং এর প্রতি ঝোঁক বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার আগ থেকেই। সিএসইতে ভর্তি হয়ে সেই ঝোঁকটাতে মনোনিবেশ করলেন সর্বোচ্চ ভাবেই। যারই ধারাবাহিকতায় এ সাফল্য। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এই সাফল্যের পেছনে তাদের পরিশ্রম ও পরিকল্পনার কথা। শাবির এই দলের কোচ ছিলেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম। সাইফুল ইসলাম ২০১৪ সাল থেকে বিভাগের বিভিন্ন টিমকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয়টির ২০০৫-০৬ সেশনের শিক্ষার্থীও ছিলেন। তবে শিক্ষার্থী অবস্থায় ঢাকা সাইটের তার সেরা সাফল্য ছিলো অষ্টম স্থান অর্জন। জাতীয় পর্যায়ে একবার চ্যাম্পিয়নও হন তিনি। তবে কোচ হওয়ার পর তার নেতৃত্বে শুধু ২০১৭ সালে দেশের চৌকাঠ পেরুতে পারেনি। ২০১৪ তে রাশিয়া, ২০১৫ তে মরক্কো, ২০১৬ তে থাইল্যান্ড, ২০১৮ তে বেইজিংএ অংশ নেয়ার পর ২০১৯ এ পর্তুগালে তার নেতৃত্বে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে যাচ্ছে শাবির টিমটি। এর মধ্যে ঢাকা সাইটে তিনবার চ্যাম্পিয়ন ও দু’বার রানার্সআপ হয় শাবি। তবে শাবির ওয়ার্ল্ড ফাইনালে যাত্রা শুরু ২০১২ সাল থেকে। এবারেরটা নিয়ে আট বছরে সাতবার ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশ নিচ্ছে শাবি। সর্বোচ্চ অর্জন সারাবিশে^ ৫৬তম স্থান অর্জন। দলের এ ধরনের সাফল্যের মূলমন্ত্র একটাই বলে জানালেন কোচ সাইফুল ইসলাম। ‘পরিশ্রম ও পরিকল্পনা’ এর ওপর ভিত্তি করেই তারা কাজ করছেন। তিনি জানান, আমরা একাগ্রতা নিয়ে কাজ করি যার ফলে এই সাফল্য আসছে প্রতিনিয়ত। এজন্য তিনি বিশ^বিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্সের সাবেক শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য বলে জানান। জাতীয় পর্যায়ে অন্তত ৪০টির মতো প্রতিযোগিতায় তিনি কোচ হিসেবে অংশ নেন। মওদুদ রহমান শাহরিয়ার শাবির ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। মৌলভীবাজারের মওদুদ এইচএসসি পাস করেন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে ৩০০তম স্থানও অর্জন করেন তিনি। তবে শাবির ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১০ম স্থান অধিকার করা মওদুদ এবারের টিমের দলনেতা। গতবারও ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট ছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত ২০টির মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। মওদুদ জানালেন, প্রোগ্রামিং এ হাতেখড়ি তার বড়ভাই মাহফুজ আহমেদ খানের হাতে যিনি বুয়েট থেকে পাস করে বর্তমানে একটি সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করছেন। গুগল কিংবা ফেসবুকে কিছুদিন চাকরি করে দেশে ফিরে তরুণদের নিয়ে কিছু করতে চান এমনটাই জানান। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ছেলে জুবায়ের শাবিতে ৩৭তম হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে ৭৬ ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ^বিদ্যালয়ে ৫৮তম স্থান অর্জন করেন। তবে সিলেট ভাল লেগে যাওয়ার ভর্তি হন শাবিতেই। আরাফ ১০ টার মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন যার সেরা সাফল্য ঢাকা সাইটের চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আপাতত লক্ষ্য সামনের বারও ওয়ার্ল্ড ফাইনালে যাওয়া। অভিষেক পাল ২০১৫-১৬ সেশনে বুয়েটে ১০৬০তম, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ৩৫৮তম, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে ২০তম হলেও ভর্তি হন শাবিতে। শাবিতে ৭ম স্থান অধিকার করেন তিনি। প্রোগ্রামিং এ তারও সর্বোচ্চ সাফল্য এবারই। কোনো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া। গুগল, ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়ান্ট কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে তার। তবে সুযোগ পেলে বাইরের প্রলোভন ছেড়ে দেশেই কিছু করতে চান বলে জানান তিনি। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ফাইনালে এর আগে ছয়বার গেলেও সর্বোচ্চ সাফল্য ৫৬তম স্থান অর্জন। তবে এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে সাউথ এশিয়ান অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরতে চান মওদুদ, জুবায়েররা। ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্তুগালে অনুষ্ঠিতব্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে দেশে ফিরতে চান তারা। প্রোগ্রামিং করা স্বপ্ন যাদের তাদের নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তিন তরুণ। বিশ্¦বিদ্যালয়ে উঠে প্রোগ্রামিং শুরু না করে স্কুল কলেজে থাকতে থাকতেই প্রোগ্রামিং করার পরামর্শ দেন তারা। এই দেশজয়ী তরুণেরা বলেন, বর্তমানে প্রোগ্রামিং করতে আলাদা কোন ধরনের টাকা লাগে না। দরকার শুধু প্রচুর পরিমাণে প্রাণ শক্তি। শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওরা যা করেছে তা বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য গর্বের। এভাবেই বিশ^বিদ্যালয়ের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ^বিদ্যালয় এগিয়ে যাবে। আমরা আমাদের দেশের নাম নতুন করে নাতুনভাবে বিশ্বে তুলে ধরব।
×