ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিটিআরসিরও তদারকির ব্যবস্থা নেই

মোবাইল অপারেটররা কোন শর্তই মানছে না, কলড্রপ হচ্ছেই

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

মোবাইল অপারেটররা কোন শর্তই মানছে না, কলড্রপ হচ্ছেই

ফিরোজ মান্না ॥ টেলিযোগাযোগ খাতে ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ নীতিমালার অনুমোদন হলেও কোন শর্তই মোবাইল অপারেটররা মানছে না। অহরহ কলড্রপ হচ্ছে। ইন্টারনেটের ধীরগতি তো আছেই। ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, দুর্বল নেটওয়ার্ক কাভারেজ, নেটওয়ার্ক সমস্যা, ভয়েস কলের নিম্নমান থেকেই যাচ্ছে। অথচ বলা হয়েছিল গ্রাহকসেবার অসন্তুষ্টি দূর করতে মানসম্মত সেবা তথা কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালা ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি এ নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কোয়ালিটি অব সার্ভিস বিষয়ে মনিটর করার কথা রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে বিটিআরসি এখনও মনিটর করছে না। ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নীতিমালার অনুমোদন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কাজ শেষ। এখন এটা বাস্তবায়ন করবে বিটিআরসি। কোন অপারেটর মান অনুযায়ী সেবা দিচ্ছে না, গ্রাহকের অভিযোগ, এসব আমলে নিয়ে বিটিআরসি বিষয়টি দেখভাল করবে। নম্বর না বদলে অপারেটর পরিবর্তন তথা এমএনপি সেবা এরই মধ্যে চালু হয়েছে। অপারেটরদের টিকে থাকতে হলে মানসম্মত সেবা দিয়েই টিকে থাকতে হবে। যে অপারেটরের সেবা বা সেবার মান খারাপ হবে সেই অপারেটর থেকে গ্রাহকরা অন্য অপারেটরে চলে যাবেন। ফলে মোবাইল অপারেটররা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজেরাই সেবার মান উন্নত করবে। টেলিযোগাযোগ সেবায় কোয়ালিটি অব সার্ভিসের (কিউওএস) নীতিমালা তৈরি করে বিটিআরসি। এ নীতিমালায় টেলিযোগাযোগ সেবার বিভিন্ন সূচকের মান কি হবে, সেটি পরিষ্কার করা হয়েছে। কমিশনের একটি কারিগরি পর্যবেক্ষণ দল মান নিশ্চিত করতে না পারলে অপারেটরগুলোকে জরিমানা করতে পারবে কিউওএস নীতিমালা অনুসারে। কিউওএস নীতিমালায় বলা হয়েছে, ফোরজি মোবাইল ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি হতে হবে ৭ এমবিপিএস এবং থ্রিজি ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ এমবিপিএস (মেগা বাইটস পার সেকেন্ড)। আর টুজি ইন্টারনেটে ডাউনলোডের ন্যূনতম গতি হতে হবে ১৬০ কেবিপিএস (কিলোবাইটস পার সেকেন্ড)। এদিকে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) জন্যও কিছু নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। অপারেটরগুলোর জন্য বলা হয়েছে, একটি ওয়েবসাইট ডাউনলোড হতে হবে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে। অন্যদিকে মোবাইল ফোনে কথা বলার (ভয়েস কল) সময় কলড্রপের হার হতে হবে ২ শতাংশের কম। এর চেয়ে বেশি হলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে জরিমানা করতে পারবে বিটিআরসি। মোবাইল অপারেটর ছাড়াও আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স, বিটিসিএলের (ল্যান্ডফোন) মতো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কিউওএস নীতিমালা মেনে চলতে হবে। নীতিমালা তৈরির আগেও বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের কাছে কলড্রপ বিষয়ে জানতে চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দিয়েছে। ওসব চিঠিতে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে এক মন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে অভিযোগ তোলেন। এই অভিযোগের পরের দিনই কলড্রপের বিষয়ে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চায় বিটিআরসি। ২২ অক্টোবর বিটিআরসি ওই চিঠি অপারেটরদের দেয়। তবে এ বিষয়ে বিটিআরসি অপারেটরদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানা যায়নি। এদিকে বিটিআরসি এক হিসাবে জানা গেছে, প্রতিদিন মোবাইল অপারেটরদের গড়ে ২২২ কোটি মিনিটি কলড্রপ হচ্ছে। সীমাহীন কলড্রপে মোবাইল গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। গ্রাহকরা কলড্রপের ক্ষতিপূরণ ফেরত পাচ্ছে কি না এমন কোন মনিটরও হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকরা অন্ধকারেই রয়ে যাচ্ছে। একটি মাত্র অপারেটর গত বছরের শেষ দিকে তাদের ৬০ লাখ মিনিট কলড্রপের হিসাব বিটিআরসিতে জমা দিয়েছিল। বাকি তিনটি অপারেটর কোন হিসাব জমা দেয়নি। তারা মুখে বলছে, কলড্রপের ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। অথচ অপারেটররা দিনে কলড্রপ থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই টাকার কোন রাজস্ব সরকার পাচ্ছে না। গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা বা ‘টকটাইম’ ফেরত দেয়ার নির্দেশটি বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল অপারেটরদের গত বছরের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বছরের জুনের মধ্যে অপারেটররা এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। আরও পরে তারা বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে জানায়, কলড্রপের টাকা গ্রাহককে ফেরত দেয়া হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী প্রতি মাসের কলড্রপের হিসাব বিটিআরসিতে জমা দেয়ার কথা থাকলেও কোন অপারেটর হিসাব জমা দিচ্ছে না।
×