ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নদী তীরের ঠিকানা হারা মানুষ ঘর পেয়ে খুশি

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 নদী তীরের ঠিকানা হারা মানুষ ঘর পেয়ে খুশি

নদী ভাঙনের থাবায় পড়া ঠিকানা হারানো হাজারো মানুষ এখন সুখের ঘর পেয়ে মহাখুশি। তাদের ভাবনাতেও ছিল না নিজের একটা ঘর হবে। এখন সেই ঘরকে ঘিরে গড়ে উঠছে তাদের জীবন। একদা যার হাত ছিল ভিক্ষার এখন সেই হাত কর্মের। সেদিনের সেই দৃশ্যপট পাল্টে গিয়ে আজ আলোকিত পথ ধরে এগিয়ে চলার দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ঘরহারা মানুষের ঠাঁই হচ্ছে। রড সিমেন্টের খুঁটিতে টিনের উন্নত কাঠামোর ঘর এখন তাদের জীবনের আশ্রয়। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙালী তীরের এলাকা চরগ্রামের মানুষকে ভর বছর যুদ্ধ করতে হয় নদীর সঙ্গে। কখনও নদী ভেঙে নিয়ে যায় বসতভিটা। টিকে থাকে সামান্য ভূমি। এই মাটিতে তাদের পক্ষে ঘর বানানোও সম্ভব হয় না। তারা নিজেকে হারিয়ে নিজেদের খুঁজতে থাকে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে স্বজনদের থেকে। কে কোথায় কিভাবে মাথা গুঁজে থাকে তারা বুঝতে পারে না। কেউ গৃহস্থের বাড়িতে গতর খেটে। কেউ তাও না পেয়ে ভিক্ষের হাত বাড়াতে বাধ্য হয়। দিনমান অন্নের সন্ধানের পর ঘুমিয়ে পড়ে ছোট্ট কোন ঝুপড়ি ঘরে। কেউ বাঁধের ওপর আকাশের নিচে। কেউ খোলা স্থানে বসতি গড়ে পোকামাকড়ের সঙ্গে। ওদের নিরাপত্তার বালাই ছিল না। দেশের এইসব ঘর হারা মানুষের আশ্রয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি করা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। সারিয়াকান্দির প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সারোয়ার আলম জানান, যাদের ন্যূনতম ভিটে (দশ শতাংশের নিচে) আছে কিন্তু ঘর বানাবার সামর্থ্য নেই তাদের ঘর নির্মাণের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের বরাদ্দ মেলে জুন মাসে। এরপর কাজ শুরু হয়। প্রথম দফায় যমুনা তীরের সারিয়াকান্দি সদর, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, ভেলাবাড়ি ও কামালেরপুরে ৮১টি পরিবারের জন্য ৮১টি উন্নত ঘর বানিয়ে দেয়া হয়। যমুনা তীরের ও চরগ্রামের হাজারো নিঃস্ব মানুষের জন্য এই সংখ্যার ঘর যথেষ্ট হয় না। তাই দ্রুত স্থানীয় এমপি মোঃ আব্দুল মান্নান সংসদে বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারপর তিনি ওপর মহলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কাজলা ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নের জন্য আরও ৩শ’ ঘর নির্মাণের বরাদ্দপত্র আনেন। এর মধ্যে যমুনার চরগ্রাম কাজলার জন্য ২শ’ ও ফুলবাড়ির জন্য ১শ’ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয় কাছাকাছি সময়ে। এই ঘরগুলোরও নির্মাণ শেষ হয়ে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, এমনটিই জানান পিআইও সারোয়ার আলম। প্রতিটি ঘর রড সিমেন্টের শক্ত খুঁটির ওপর চারদিকে টিনে ঘেরা ও টিনের চালায় নির্মিত। ১৫ ফুট বাই ১৫ ফুটের (বারান্দাসহ) প্রতিটি ঘরের মেঝে পাকা। নির্মাণে খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। এই ঘরের সঙ্গে পাকা উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা আছে। ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা জানালেন যমুনা তীরের এই এলাকার নিঃস্ব মানুষের জন্য একটি শক্ত কাঠামোর ঘর বানিয়ে দিয়ে জীবনমান উন্নত করার এই প্রকল্প সরকারের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়েছে। কাজলা ইউনিয়নের চরের ভিতরে ট্যাংরাকুড়া, পাকেরদহ, জামথলে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে পাকা রাস্তার ধারে। যাতে ঘর থেকে বের হয়েই তারা যোগাযোগের সুবিধা পায়। কুতুবপুর ইউনিয়নের সুখী বেগম, ফুলবাড়ির আয়েশা, রাশেদা, রেনু, কাজলার ট্যাংরাকুড়া চরের মোমেনার সংসার ছিল তবে নিজেরদের ঘর ছিল না। কেউ থাকত ঝুপড়ি ঘর তুলে কোন রকমে। দিন কাটত কোন বাড়িতে। কেউ ভিক্ষাও করত। তাদের মতো ৩৮১ পরিবারের মাথার ওপর আজ টিনের চালার উন্নত ঘর। শিশু বেলার পিতৃমাতৃহীন সুখী বেগমের জীবন শুরু হয় অস্তিত্বের সঙ্গে লড়াই করে। মানুষের লাঞ্ছনা গঞ্জনা নিয়ে বেড়ে ওঠার পর বিয়ে হয় এলাকার ভিক্ষুক আনসার আলীর সঙ্গে। সুখী বেগমের ২ ছেলে ১ মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর আলাদা হয়ে যায়। অসহায় হয়ে পড়া এই সুখী বেগম টিনের ঘর পেয়ে আজ মহা খুশি। বললেন, ঘর হয়েছে। স্যানিটারি পায়খানা হয়েছে। পানির জন্য টিউবওয়েলের ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুত নেই। এই বিষয়ে পিআইও বললেন, প্রকল্পের মধ্যে টিউবওয়েল ও সোলারের বরাদ্দ নেই। যে কারণে পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়নি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনলে হয়তো সেই ব্যবস্থা হবে। আপাতত ঘর গ্রহীতারা নিজেদের উদ্যোগেই পানির ব্যবস্থা করে নিয়েছে। কেউ সোলার প্যানেল বসাবার চেষ্টা করছে। ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনারুত তারিক বললেন, নদী ভাঙন কবলিত এই এলাকায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়ন কার্যক্রম গতি পায়। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×