ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের আইসিটি ও ইংরেজীতে দক্ষ করতে ব্যাপক পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 শিক্ষার্থীদের আইসিটি ও ইংরেজীতে দক্ষ করতে ব্যাপক পরিকল্পনা

সমুদ্র হক ॥ সরকারী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক আইসিটি শিক্ষা, শিক্ষকগণের শিক্ষাদানের মানের উন্নয়ন ও অধিকতর প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষাতেও দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬শ’ ৫৪ কোটি টাকা। যা এ যাবতকালের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীতে (পিইডিপি) সর্বোচ্চ ব্যয়। পিইডিপি-৪ নামের এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেছেন। রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে ২০২৩ সালের মধ্যে। এই প্রকল্পে শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার এই উন্নয়নে বিশ^ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এজেন্সি (জাইকা), ইউনিসেফসহ কয়েকটি সংস্থা অর্থায়নের নিশ্চয়তা দিয়েছে। দেশে মাঠ পর্যায়ের সরকারী প্রাথমিক স্কুল নিয়ে সাধারণের ধারণা পাল্টে দিতে পিইডিপি-৪ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশে সরকারী প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬শ’ ১টি। এর মধ্যে পরীক্ষণ বিদ্যালয় ৫৫টি। মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬শ’ ৮০ জন। যাদের মধ্যে মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীর গড় হার ৫০ : ৫০। কোন কোন স্কুলে মেয়ে শিক্ষার্থীর হার ছেলেদের চেয়ে বেশি। এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করেন ৩ লাখ ২২ হাজার ৭শ’ ৬৬ জন শিক্ষক। খোঁজ-খবর করে দেখা গেছে মাঠ পর্যায়ের সরকারী প্রাথমিক স্কুলগুলোতে ভর্তির হার ৯৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপনীর হার এখনও ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ইংরেজী বিষয়ে শিক্ষার মান ও সফলতার হার আশানুরূপ নয়। ইংরেজী শিক্ষা এখনও উন্নত পর্যায়ে যায়নি। অনেক শিক্ষকের মধ্যে পেশাগত দক্ষতার অভাব ও দায়িত্বহীনতাও পাওয়া যায়। শহর ও নগর এলাকার চেয়ে গ্রামের স্কুলগুলোর পাঠদানের পরিবেশ এখনও উন্নত হয়নি। এর মধ্যেই মাঠ পর্যায়ের কিছু স্কুলের পাঠদান ও প্রাথমিক শিক্ষা সার্টিফিকেট (পিইসি) পরীক্ষার ফলাফল শহরের স্কুলের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে বগুড়ার শিবগঞ্জের আমতলি মীর লিয়াকত আলী সরকারী প্রাথমিক স্কুল। এই স্কুলের শিক্ষার মান খুবই ভাল। সকল প্রাথমিক স্কুলের সকল বিষয়ে শিক্ষার মানকে উন্নত করে আইসিটি শিক্ষায় দক্ষ করে তুলতে পিইডিপি-৪ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় আগামী ৫ বছরে উন্নত শিক্ষা প্রদানে ১ লাখ ৬৫ হাজার ১শ’ ৭৪ জন নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এই শিক্ষকগণ মাঠ পর্যায়ের যে স্কুলগুলোতে শিক্ষকের পদ খালি আছে সেখানে যোগদান করবেন। প্রকল্পের এই শিক্ষকগণের বেতন ভাতায় ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ১ লাখ ৩৯ হাজার ১শ’ ৭৪ জন শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ২০ হাজার শিক্ষককে এক বছরের জন্য তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তিতে (আইসিটি) বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ৬৫ হাজার শিক্ষক পাবেন লিডারশিপ প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই শিক্ষকদের চাকরির মানও উন্নীত করা হবে। যাতে তারা পরবর্তী সময়ে অন্যদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। মেধাভিত্তিক কয়েকজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হবে।
×