ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে ঐক্যফ্রন্ট

ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের তালিকা তৈরির নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের তালিকা তৈরির নির্দেশ

শংকর কুমার দে ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সারাদেশের নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোকে ‘রেড,’ ‘ইয়েলো,’ ‘গ্রীন’ এই তিন ক্যাটাগরিতে বাছাই করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ভোট গ্রহণের কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রেড কেন্দ্রগুলো হবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইয়েলো কেন্দ্র হবে কম ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন কেন্দ্রগুলো হবে শূন্য ঝুঁকিপূর্ণ। হেভিওয়েট প্রার্থী, কম হেভিওয়েট প্রার্থী, সাধারণ প্রার্থী; এমন প্রার্থী বিবেচনায় নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীর পক্ষে সন্ত্রাস হতে পারে এমন প্রার্থী, কালো টাকার ছড়াছড়ি হতে পারে এমন প্রার্থী, বিদেশী পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে থাকবে এমন প্রার্থী বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, কম গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে তালিকা তৈরি করা হবে। সারাদেশের তিন শ’ নির্বাচনী এলাকার কোন্ নির্বাচনী এলাকায় ভোট কেন্দ্র কত তার সংখ্যা বের করে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে দেশী-বিদেশী সবস্তরের পর্যবেক্ষক থাকবেন। এ বছর নির্বাচনের পরিবেশ হবে ভিন্ন। নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে সারাদেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের কাছে এই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য নির্দেশিকা পাঠানো হবে। রাজধানী ঢাকার নির্বাচনী আসনগুলোতে পুলিশ সদর দফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাটাগরি ভাগ করে কেন্দ্র বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ সভায় ডিএমপি কমিশনার এই ধরনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো বাছাই করার জন্য নির্দেশ দেন ডিএমপির ৪৯ থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের সময় নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে ভোট কেন্দ্রের অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রভাব বিস্তারের সম্ভাব্যতা ও প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় আনা হয়। কারণ, কোন কোন প্রার্থীর নিজ এলাকার কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী সমর্থকদের কোণঠাসা করার আশঙ্কা থাকে। আবার কোন কোন প্রার্থী সন্ত্রাস, অস্ত্র, মাদক ইত্যাদির ব্যবহার করতে পারে নির্বাচনের সময়। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের মাঠে নামানো, কালো টাকা ছড়িয়ে নির্বাচনের পরিবেশ বিষিয়ে তোলাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর আশঙ্কা থাকতে পারে এমনসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়ে থাকে। ঢাকা মহনগর পুলিশের ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান বলেছেন, গত সোমবার ডিএমপির সদর দফতরে মাসিক অপরাধ সভায় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি সদর দফতরের সভায় রাজধানীর ভেতরে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বাছাই করে ‘রেড’, ‘ইয়েলো’ ও ‘গ্রীন’ এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বিবেচনায় সেসব এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। একই সঙ্গে আসনগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিকদলের বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও বিবেচনায় আনতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন করে রাজনৈতিক মামলা ও ধরপাকড় নিষেধ করা হয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলা রয়েছে বা যারা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, তাদের গ্রেফতারে কোন সমস্যা নেই। এছাড়া, রাস্তায় সরাসরি কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট কোন দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে টার্গেট করে মামলা বা ধরপাকড় করা হবে না। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা আইন ভঙ্গ করবে, কেবল তাদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। কারণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এমন জায়গাগুলোতে আমাদের আগাম প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সম্প্রতি অসংখ্য গায়েবি মামলা হওয়ার কারণে উর্ধতন কর্মকর্তারা বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন। কারণ, কিছু মামলায় এমন ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে, যারা ঘটনার সময় বিদেশে অবস্থান করছেন বা অনেক আগেই মৃত্যৃবরণ করেছেন। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যে কোন মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছে।
×