ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী তৎপরতা বাড়ার নেপথ্যে জামায়াত কানেকশন

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 জঙ্গী তৎপরতা বাড়ার নেপথ্যে জামায়াত কানেকশন

গাফফার খান চৌধুরী ॥ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, জঙ্গীদের তৎপরতাও তত বাড়ছে। জঙ্গীদের তৎপরতা বাড়ার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। জঙ্গীদের অর্থায়নসহ নানা বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সারাদেশে জঙ্গীবিরোধী অভিযানও জোরদার করা হয়েছে। একের পর এক অভিযানে জঙ্গী গ্রেফতারের সংখ্যা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। ধারাবাহিক অভিযানের পরও জঙ্গীরা তাদের গোপন তৎপরতা থেকে সরে যায়নি। উপরন্তু নির্বাচনে নাশকতা চালাতে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছে। জঙ্গীরা টার্গেটকিলিং চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য আগামী মাস থেকে সারাদেশে জঙ্গীবিরোধী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে চালানো সেই অভিযানে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি জঙ্গী গ্রেফতার ও হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশেষ সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করার পর থেকেই সারাদেশে জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অভিযানে গত এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৮ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। আর নিহত হয়েছে এক নারী ও এক পুরুষ জঙ্গী। পলাতক রয়েছে ৯ জন। আর জঙ্গীদের অর্থনৈতিকভাবে সহায়তাকারী হিসেবে জামায়াত-শিবিরের ৮ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা এক সময় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এখনও তারা দলে আছে কিনা সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য মেলেনি। যদিও জামায়াত-শিবিরের দাবি, জঙ্গীবাদের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। কোন সদস্য জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়লে দলে আর তাদের সদস্য রাখা হয় না। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ সূত্র বলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ অক্টোবর নরসিংদীর মাধবদীর দুটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। দুদিন পর একটি জঙ্গী আস্তানা থেকে খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘলা (২৫) ও ইশরাত জাহান মৌসুমী ওরফে মৌ (২৪) নামের দুই নারী জঙ্গী আত্মসর্মপণ করে। তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আরেকটি আস্তানায় জঙ্গী দম্পতি আবদুল্লাহ আল বাঙ্গালী ও তার স্ত্রী আকলিমা আক্তার মনি নিহত হয়। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জনকণ্ঠকে জানান, আত্মসর্মপণ করা মৌ গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আর ২৩ মার্চ মেঘলা ও ২ মার্চ মনি জামিনে মুক্তি পেয়েই আবার আত্মগোপনে গিয়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। তারা ২০১৬ সালে তাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। এ তিন জনই জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বেসরকারী মানারাত ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থী ছিল। তারা এক সময় জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংস্থার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, এনজিওর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত-শিবির জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করে আসছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামী নামে বেনামে এনজিও খুলে বিদেশ থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা এনেছে। এসব টাকার অধিকাংশই ব্যয় করেছে জঙ্গীবাদের পেছনে। কারণ জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব ইসলামী দল ও জঙ্গী সংগঠনগুলো বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। একটি মূল জায়গায় তাদের মতামত এক হওয়ায় অবলীলায় জঙ্গীরা অধিকাংশ ইসলামী দলের কাছ থেকে একই সঙ্গে সহানুভূতি ও অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে জঙ্গীদের অর্থায়ন করা হচ্ছিল। অর্থায়নকারীদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৮ অক্টোবর মুহম্মদ ফজলুল হক রিকাবদার, ফজলুল হক, হুমায়ুন কবীর, আশরাফুল হক, আসগর হোসাইন, শেখ শাহজাহান কবীর, মনিরুল ইসলাম, আব্দুর রউফ ও আল মামুন খন্দকার নামের জামায়াত-শিবিরের সাবেক আট নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এনজিওটির মাধ্যমে বিদেশে থেকে আনা সাড়ে ৬২ কোটি টাকার অধিকাংশই ব্যয় করেছে জঙ্গীবাদের পেছনে। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর কৃষিবিদরা ‘নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড’ ও ‘নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামের আরও দুটি এনজিওর মাধ্যমে জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করতেন। গ্রেফতারকৃতরা রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির ও যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে মৃত্যু হওয়া মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসূফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। সারাদেশে চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত ৭ নবেম্বর রাজধানীর পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএসের ৯ নম্বর সড়কের ৬৪৪ নম্বর বাড়ির ৫ম তলায় জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত ‘স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ (এসকেবি)’ নামের একটি এনজিও থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের হাতে গ্রেফতার হয় ৮ আনসার আল ইসলামের জঙ্গী। গ্রেফতারকৃত সাফ ওয়ানুর রহমান (৩৪), সুলতান মাহমুদ (২৫), নজরুল ইসলাম (৩৮), আবু তাহের (৩৬), ইলিয়াস মৃধা (৩০), আশরাফুল আলম (২৪), হাসনাইন (৩০) ও কামরুল (২৮)। তাদের কাছ থেকে জঙ্গীবাদে অর্থায়নের জন্য সংগ্রহ করা ১৪ লাখ টাকাসহ বহু আলামত উদ্ধার হয়।
×