ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় খাঁজকাটা পাইল বসছে আগামী সপ্তাহে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 পদ্মায় খাঁজকাটা  পাইল বসছে আগামী  সপ্তাহে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসছে আগামী সপ্তাহে। ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে এ পাইল বসবে। ইতোমধ্যে ১২টি খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর ১১টি খুঁটিতে ৭৭ টি ট্যাম পাইল বসবে। বাকি ৬৫টি পাইলের টিউব পদ্মা থেকে তুলে নিয়ে ঘষামাজা করে এখন ঝকঝকে পরিষ্কার করা হচ্ছে। এবং নতুন ডিজাইন অনুযায়ী খাঁজ লাগানো হচ্ছে। তাই কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপে এখন পাইলের খাঁজ লাগানো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সেতুর ৬ ও ৮ নম্বর খুঁটির জন্য বিশেষ ডিজাইন করা হচ্ছে। সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ৪০টি খুঁটির ডিজাইন সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে সর্বপ্রথম কাজ শুরু করা ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির ডিজাইন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেনি। পুরনো নক্সা অনুযায়ী এই খুঁটি দুটিতে ইতোমধ্যে ৩টি করে ৬টি পাইল বসানো হয়ে গেছে। নদীর তলদেশে মাটি নরম থাকায় বিষয়টি উদ্্ঘাটন হবার পর তাই এই খুঁটি দুটির কাজ স্থগিত করা হয়েছে। এখন নতুনভাবে নক্সা করতে গিয়ে অন্যান্য খুঁটির ডিজাইন চূড়ান্ত করা গেলেও এই দুটি খুঁটির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। কারণ, এই দুটি খুঁটির ৩টি করে যে ৬টি পাইল বসে আছে সেগুলো না ওঠানো যাচ্ছে, না রাখা সম্ভব হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুরনো ৬টি পাইল রেখে নক্সা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সে কারণেই অন্য খুঁটির মতো ডিজাইন না করে এই খুঁটি দুটির ডিজাইন বিশেষভাবে করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতে পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এই দুটি খুঁটির ডিজাইনও এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা দুটি খুঁটির ডিজাইনও পেয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা। এদিকে পদ্মা সেতুর এখন হুলুস্থূল কাজ চলছে। শুষ্ক মৌসুমের সুযোগ নিয়ে এখন সেতু এলাকায় অবিরাম চলছে কাজ। কাজের গতি অনেক বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। নদীতে এ পর্যন্ত ১৮৩ টি পাইল স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। যার ১৬৫ টি পাইলের কংক্রিটিং হয়ে গেছে। মূল সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ৩১টি খুঁটির কাজ চলমান রয়েছে। যার ১৪টি খুঁটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি ১৭টি খুঁটির বিভিন্ন ধাপের কাজ এখন চলমান রয়েছে। এছাড়া ১১টি খুঁটির মধ্যে ৯টি খুঁটিতে কাজ শুরুর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। নদীতে সেতুর এলাইনম্যান চ্যানেলে নাব্য সঙ্কট দেখা দেয়ায় ভারি ক্রেন সব খুঁটিতে যেতে পারছে না। যার কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও নাব্য সঙ্কট দূর করতে ৬টি ড্রেজার কাজ করছে। শীঘ্রই এ নাব্য সঙ্কট দূর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬টি স্প্যান বসিয়ে দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে জাজিরা প্রান্তের সর্বশেষ স্প্যান ৭-এফ এর ওপর ৫৬টি রেলওয়ে বক্স স্লাব বসানো হয়ে গেছে। এদিকে কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপে রোডওয়ে ও রেলওয়ে বক্সস্লাব তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর দুই প্রান্তে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) কাজও অনেকদুর এগিয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে খাঁজকাটা পাইল স্থাপন নিয়ে প্রকল্পের বিশেষ ব্যস্ততা চলছে। প্রকৌশলীরা জানান, চ্যানেলে নাব্য থাকায় পাইল স্থাপন কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে খাঁজকাটা পাইল স্থাপন শুরু হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে পাইল স্থাপনের জন্য গাইড ফ্রেম বসানো হচ্ছে। নাব্য সঙ্কট দূর হলে ক্রেন মুভ করা গেলেই এখানে পাইল বসানো শুরু হবে। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল স্থাপন বিশ্বে এই প্রথম। পদ্মা সেতুর ১১টি খুঁটিতে বিশেষ এই পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে। সেতুর এই ১১ খুঁটির (পিয়ার) ৭৭টি টিউব ওয়ার্কশপে খাঁজকেটে ৩ মিটার ডায়ার প্রতিটি পাইল টিউবে ১০টি করে খাঁজ লাগানো হচ্ছে। এই খাঁজ দিয়েই সিমেন্ট মিশ্রণ চলে যাবে নদীর তলদেশের নরম মাটিতে। এই বিশেষ সিমেন্ট মিশ্রণ মাটিকে শক্ত ভিতে নিয়ে আসতে সক্ষম। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই বিশেষজ্ঞরা এই প্রক্রিয়া এপ্লাই করছে। সরেজমিন ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা গেছে বিশাল বিশাল স্টীলের এই টিউবে মজবুতভাবে খাঁজ স্থাপন করা হয়েছে। এই খাঁজ স্থাপনের কারণে ৩ মিটার ডায়ার প্রতিটি পাইল টিউবের ডায়া বেড়ে ৩ মিটারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৩ মিলিমিটার। কারণ প্রতিটি খাঁজ ১.৫ মিলিমিটার। তাই দু’পাশ মিলে এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩ মিলিমিটার ডায়ার বৃদ্ধি হয়েছে। ট্যামগুলোর মুখের অংশ এমনভাবে চোকা রাখা হয়েছে, যাতে মাটিতে প্রবেশ সহজ হয়। তবে খাঁজসহ এই পাইল স্থাপনে হ্যামারের শক্তি বেশি ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ৩টি উচ্চ ক্ষমতার জার্মানি হ্যামার পাইল ড্রাইভ করছে। ১৯শ’ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি বটম সেকশন করে থাকে। তবে এই খাঁজকাটা পাইলটি ১৯শ’ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি ড্রাইভ করতে পারবে না। এটি ড্রাইভ করবে সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যামার। প্রকৌশলীরা জানান, পাইল স্থাপনের পর এই খাঁজ দিয়ে হাই প্রেসার সিমেন্টের মিশ্রণ পাইলের আশপাশের মাটিতে প্রবেশ করবে। তাই পাইলের পাশে অতিরিক্ত হিসেবে এই খাঁজের এক মিটার পর পর ছোট্ট আকারে অথ্যাৎ ৮ মিলিমিটার আকারের ছিদ্র রয়েছে। খাঁজটির সোজাসুজি এবং পাশাপাশি ৩টি করে ছিদ্র রয়েছে। প্রতিটি পাইল টিউবের ১০টি এমন খাঁজ দিয়ে এই সিমেন্ট মিশ্রণ প্রবেশ করবে। খাঁজের মধ্যে সেভাবেই ভেতরে ফাঁকা রেখে চ্যানেল করা হয়েছে। এগুলোর মূল টিউবের অতিরিক্ত। তাই আগের তৈরি করা টিউবগুলো ফের ওয়ার্কশপে নিয়ে এই খাঁজ স্থাপন করা হচ্ছে। আর এই পদ্ধতিতে সিমেন্ট প্রবেশ করানো হবে নরম স্তরের মাটিতে। প্রায় ১১০ মিটার দীর্ঘ এই পাইলের ৬০ থেকে ৬৫ মিটারে এই সিমেন্ট মিশ্রণ প্রবেশ করবে। তবে বাকি অংশে খাঁজ থাকলেও সেই স্থানে ছিদ্র রাখা হয়নি। উপর থেকে যেহেতু সিমেন্ট নিচে প্রেরণ করতে হবে তাই পাইলটির একেবারে প্রথম থেকেই অতিপোক্ত আকারের এই খাঁজ স্থাপন করা হয়েছে।
×