ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেই নীল আর্মস্ট্রংয়ের স্পেসস্যুট নাসার হাতছাড়া

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 সেই নীল আর্মস্ট্রংয়ের স্পেসস্যুট নাসার হাতছাড়া

চাঁদের মাটিতে পা রেখে বদলে দিয়েছিলেন মানব ইতিহাস। সেই ইতিহাসের স্রষ্টা মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রংয়ের স্পেসস্যুটই কিনা নাসার হাতছাড়া আর এর জন্য দায়ী নাকি তাদেরই গা ছাড়া মনোভাব। এমনটাই দাবি করেছে সংস্থার অফিস ইন্সপেক্টর জেনারেলের দফতর। সম্প্রতি নীল আর্মস্ট্রংয়ের একটি স্পেসস্যুট নিলামে তুলেছে টেক্সাসের ‘হেরিটেজ অকশন’ সংস্থা। তাদের দাবি, মহাকাশচারী হিসেবে যাত্রা শুরুর সময়, প্রথম দিকে ওই স্যুটটিই গায়ে চড়াতেন আর্মস্ট্রং। এতদিন তার পরিবারের দখলে ছিল সেটি। যা তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। অনলাইন নিলামে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত স্যুটটির দাম উঠেছে ১১ হাজার ডলার পর্যন্ত। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোথায় সেটি বেপাত্তা হয়ে গেছে তা জানতই না নাসা। কলকাতার আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে বলেছে, শুধু আর্মস্ট্রংয়ের স্পেসস্যুটই নয়, গত কয়েক বছরে নাসা একাধিক ঐতিহাসিক এবং মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে। তাদের অফিস ইন্সপেক্টর জেনারেলের দফতর জানিয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে চেষ্টা সত্ত্বেও বেশ কিছু জিনিস হাতছাড়া হয়ে গেছে নাসার। যেগুলোর অসীম ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। কিছু জিনিস হারিয়ে গেছে, যথাস্থানে মিলছে না অনেক কিছু। কিছু আবার সঙ্গে নিয়ে গেছেন প্রাক্তন কর্মীরা। সংস্থার তরফে সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়ায় ঠিকাদারদের হাতেও গিয়ে পৌঁছেছে অনেক জিনিস। হারিয়ে গেছে একটি চার চাকার ল্যুনার রোভার। চাঁদের মাটিতে এই ধরনের যান ব্যবহার করা হয়। দুই মহাকাশচারীকে বহন করতে সক্ষম এই যানের মাধ্যমে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২০০৪ সালে আলাবামার বাউন্টসভিলের জনবহুল এলাকায় ওই রকম একটি ল্যুনার রোভার খুঁজে পান এক ব্যক্তি। নাসার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। যানটি ফিরিয়ে দিতে চান। কিন্তু চার মাস কেটে গেলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নাসা। তারপর ওই ব্যক্তি রোভারটিকে কিলোদরে বেচে দেন। তখন টনকনড়ে নাসা কর্তৃপক্ষের। সেটি কেনার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু যে ব্যবসায়ী রোভারটি কিনেছিলেন, তিনি জিনিসটির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই নাসাকে না দিয়ে রোভারটিকে নিলামে মোটা অঙ্কের টাকায় বেচে দেন। ১৯৬৯ সালে ‘এ্যাপলো ১১’-এ প্রথম চাঁদের মাটিতে পা রাখেন দুই মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং এবং এডুইন অলড্রিন। একটি ব্যাগে চাঁদের মাটি এবং পাথর ভরে এনেছিলেন তারা। সেই ব্যাগটিও হারিয়ে ফেলে নাসা। ২০১৩ সালে সেটির খোঁজ মেলে। ২০১২ সালে মাত্র ৯৯৫ ডলারে এক ব্যক্তিকে ওই ব্যাগটি বিক্রি করে দেয় মার্কিন মার্শাল বিভাগ। বিনা অনুমতিতে ব্যাগটি বিক্রি করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে নাসা। কিন্তু পরাজিত হয়। ২০১৭ সালের জুালাই মাসে নিলামে ওঠে ব্যাগটি। সেবার ১৮ লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয় সেটি। মহাকাশে ব্যবহারের জন্য বিশেষ ‘ওমেগা স্পিডমাস্টার প্রফেশনাল’ হাতঘড়ি বেছে নিয়েছিল নাসা। স্পেস শাটল মিশনের সময় ব্যবহার করা হয় সেটি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আচমকাই সেটি লন্ডনে নিলামে উঠছে বলে খবর মেলে। তবে সময় থাকতে খবর পেলেও কিছু করে উঠতে পারেনি নাসা। কারণ ওই ঘড়িটিকে মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিনা তাই নাকি মনে করতে পারেনি তারা। পরে একটি প্রদর্শনীতে ঘড়িটিকে রাখতে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ভাড়াা গুনতে হয় মার্কিন সরকারকে।১৯৮৫ সালে ‘এ্যাপলো-১’ মহাকাশযান থেকে ৩টি হ্যান্ড কন্ট্রোলার ফেলে দিতে নির্দেশ দেন নাসার এক সুপারভাইজার। যার মধ্যে ভিডিও গেম জয়স্টিকও ছিল। তবে না ফেলে সেগুলোকে বাড়তি নিয়ে যান এক কর্মী। কয়েক বছর পর চড়া দামে বিক্রি করেন। তখন টনকনড়ে নাসার। ‘স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল এয়ার এ্যান্ড স্পেস মিউজিয়াম’-এ সেগুলোকে রাখতে চেয়ে আর্জি জানায়। তবে টানা তিন বছর অনুরোধ জানিয়েও লাভ হয়নি। তাই শেষমেষ হাল ছেড়ে দেয় নাসা। এতগুলো মূল্যবান জিনিস হাতছাড়া হওয়ায় এখন নড়েচড়ে বসেছে মার্কিন সরকার। শুরু হয়েছে তদন্ত। সংস্থার কর্মীদের একদফা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তবে সকলেই নাকি দায় এড়িয়ে গেছেন।
×