ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সারতাজ আলীম

ইন্টারনেটের অন্ধকার জগত

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

ইন্টারনেটের অন্ধকার জগত

তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তার ঘটেছে ইন্টারনেটের, সক্ষমতা বেড়েছে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর। মুহূর্তের মধ্যেই লাখ লাখ ফলাফল এনে সামনে হাজির করে গুগল। বর্তমানে ৪.৮৩ বিলিয়ন ওয়েবসাইট কোন না কোন সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত করা আছে। কিন্তু এই ৪.৮৩ বিলিয়নের বাইরেও ইন্টারনেটের একটা বড় অংশ আছে যেটা সার্চ ইঞ্জিন দেখতে পায় না। ডার্ক ওয়েব এবং ডিপ ওয়েব খ্যাত ইন্টারনেটের এই অংশ দৃশ্যমান অংশের থেকে ৪০০-৫০০ গুণ বড়। ইন্টারনেটের যে কন্টেন্টগুলো সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে পায় না কিন্তু ঠিকানা জানা থাকলে আপনি সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন সেগুলো ডিপ ওয়েব। ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের সেই অংশ যেখানে প্রচলিত উপায়ে প্রবেশ করা যায় না। ‘সার্চ ইঞ্জিনগুলো ওয়েব ক্রলার বা ওয়েব রোবটের সাহায্যে লাখ লাখ সাইটকে তদারকি করে। অনেক সাইটই নিজে লিপিবদ্ধ হতে অনুরোধ জানায়। যেসব সাইট চায় না যে তাদের সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে পাক তারা রোবট টেক্সট নামের প্রোটকল ব্যাবহার করে ক্রলারকে তাদের সাইট থেকে দূরে রাখে। এভাবেই একটি সাইট সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে পাওয়া যায় না‘ জানালেন ওয়েব বিশেষজ্ঞ আশিক আহমেদ। ডার্ক/ডিপ ওয়েবের আরেকটি বিশেষত্ব হলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ডোমেইন (যেমন .com) ব্যবহার না করে ‘সিউডো টপ লেভেল ডোমেইন’ (যেমন .onion)ব্যাবহার করা হয়। বাড়তি হিসেবে ওয়েব ঠিকানাগুলো এতই দুর্বোধ্য হয় যে এগুলো লিখে রাখা ছাড়া কোনভাবে মনে রাখা সম্ভব নয়। এভাবেই এটি চলে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। কি আছে ডার্ক/ডিপ ওয়েবে ॥ ডার্ক ওয়েবের ব্যবহারকারী মূলত তারাই যাদের সবার নজর এড়িয়ে যে কোন কারণেই হোক বাড়তি গোপনীয়তা দরকার। অনেকের ধারণা এখানে শুধুই হ্যাকার, পেশাদার খুনী বা অবৈধ বাণিজ্য চালানোর মতো অন্যায় এবং আইনবিরোধী কাজই হয়ে থাকে। আসলে কিন্তু এমনটা না, অনেক কারণে যে কারোরই বাড়তি গোপনীয়তা প্রয়োজন হতে পারে। তথ্য ফাঁস করতে চাওয়া হুইসেলব্লোয়ার, আড়িপাতার হাত থেকে নিরাপদের থাকতে চাওয়া কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মী, গুপ্তচর, মানবাধিকার কর্মী বা সাধারণ মানুষ যে কেউই প্রকাশ্যে না আসে এখান থেকে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে। যেমন আরব বসন্তের সময় বিপ্লবকারীরা ডার্ক ওয়েবে যোগাযোগ করত। ধারণা করা হয় উইকিলিকসের প্রকাশ করা তথ্যগুলোও তারা ডার্ক ওয়েবে আদান প্রদান করত। প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান নিয়ে অগণিত নিবন্ধের উৎসও এই ডার্ক ওয়েব। তবে সংখ্যার দিক থেকে ডার্ক ওয়েবে মাদক কেনাবেচার সাইটই বেশি। এছাড়া চোরাই বাজার, অবৈধ অস্ত্র এবং বিকৃত সিনেমার সাইটও কম নয়। কপিরাইটের তোয়াক্কা না করে বিক্রি হচ্ছে সিনেমাও। ডলারের চেয়ে ক্রিপটোকারেন্সিতেই এখানে বেশি লেনদেন হয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরের ৬ মাসে কুখ্যাত চোরাই বাজার সিল্ক রুটের প্রতিষ্ঠাতারা প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার দ্বিতীয়বারের মতো এই ওয়েবসাইটি বন্ধ করতে সক্ষম হয়। গোপনীয়তার ফলে আইন ভঙ্গকারীদের চারণভূমি হয়ে উঠেছে ইন্টারনেটের এই অংশ। ডার্ক ওয়েব নিয়ে গল্পকাহিনীও কম প্রচলিত না। অতি উৎসাহী হয়ে অনেকেই বলে ফেলেন এখানে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশকারীর সব তথ্য চলে যাবে কারও কাছে। কম ধারণা রাখার ফলে যে কেউ এসব বিশ্বাস করে বসে। ফলে বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণে ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে মানুষের মনে একটা রহস্যময় জগত তৈরি হয়ে গেছে । ইন্টারনেট হচ্ছে বিশাল এক তথ্যের সাগর। এই সাগরের কতটা গভীরে প্রবেশ করবেন সেটা নির্ভর করবে আপনার সাঁতার কাটার ক্ষমতার উপর। আইন কানুন মেনে তথ্যের সাগরে ঘুরে বেড়ান, ইন্টারনেট তবে আপনার জন্য অনেকটাই নিরাপদ।
×