ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইঞ্জিনিয়ার এম এ মান্নান

বিজয় পতাকা হাতে যেতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 বিজয় পতাকা হাতে  যেতে হবে

প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদে অনেকেই অধিষ্ঠিত হন কিন্তু রাষ্ট্রনেতার সংখ্যা আদতেই কম। দুনিয়ায় দেশের সংখ্যা দুই শতেরও বেশি। গত পাঁচ যুগে এসব দেশে কয়েক হাজার প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির আগমন ঘটেছে। কিন্তু দেশ ও দুনিয়ার মানুষ মনে রেখেছে গুটি কয়েকের নাম। যাদের মধ্যে নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, সুকর্ন, মার্শাল টিটো, দ্যাগল, চার্চিল, মার্গারেট থ্যাচার, জামাল নাসের, লি কুয়ান, মাও সেতুং, হোচিমিন, নেলসন ম্যান্ডেলা, জনএফ কেনেডি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এমন নামের সংখ্যা বেশি নয়। সমসাময়িক বিশ্বে এ তালিকায় স্থান পেতে পারেন যারা তাদের মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শিজিন পিং, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন, মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা দেশের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রীও তিনি। তবে এসব পরিচয়ের বাইরে তার দুটি পরিচয় দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর হৃদয়রাজ্যে চির জাগরূক হয়ে থাকবে। প্রথমত. তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। দ্বিতীয়ত. তিনি একজন সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়ক। যিনি নিজের দেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অবস্থান থেকে উন্নয়নের সোপানে নিয়ে গেছেন। তার পয়মন্ত হাতের ছোঁয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ দারিদ্র্যমোচনে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্বের যে সব দেশ দারিদ্র্যমোচনের লড়াই করছে, বাংলাদেশকে তারা তাদের সামনে মডেল হিসেবে রাখছে। বিশেষত, গত দশ বছরে বাংলাদেশ একের পর এক বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এ সরকারের আমলে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প তৈরি হচ্ছে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে। মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে দ্রুত বেগে। কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুড়ঙ্গ পথ। তৈরি হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর। বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশজুড়ে ১০০টি ইপিজেড। যেগুলো বাস্তবায়িত হলে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশের রফতানি আয় বেড়ে যাবে বিপুলভাবে। শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে শুধু ভোটের গণতন্ত্র নয় ভাতের গণতন্ত্রও ফিরিয়ে দিয়েছেন। মানুষ যাতে তিন বেলা পেট ভরে খেতে পারে সে লক্ষ্যে তাদের শূন্য হাত যাতে কর্মের হাতে পরিণত হয় সে পথে চলতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অবিস্মরণীয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে তিনি দেশের আট ভাগের এক ভাগ এলাকার বিদ্রোহ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। কওমি মাদ্রাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা সনদের স্বীকৃত দিয়ে তাদের দেশের মূলধারার অংশীদার করেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াতে ইসলামী তথা মওদুদীবাদীদের ষড়যন্ত্র রোধে দেশের আলেম সমাজের সমর্থন নিশ্চিত করে চমক দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ঘোষণা করেছিলেন ক্ষমতায় গেলে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করবেন। বাংলাদেশে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আমলে। ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাও করেন বঙ্গবন্ধু। মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের কল্যাণে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এ জন্য ব্যয় করা হবে শত শত কোটি টাকা। প্রতিটি মসজিদ কমপ্লেক্সে থাকবে মিলনায়তন ও পাঠাগার। মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন ও খেদমতকারীদের বেতন দেয়া হবে সরকারী তহবিল থেকে। দেশের সব মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনের জন্য মাসিক ভাতা দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে আশ্রয় দিয়েছেন। গত বছর বন্যায় ফসলহানির কারণে যখন বিদেশ থেকে কোটি কোটি মণ চাল-গম আমদানি করতে হয়েছে, সে সময়েও প্রধানমন্ত্রী মজলুম মানুষের প্রতি তার মানবিক দায়বোধের কথা ভুলে যাননি। যে কারণে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম তাকে মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধি দিয়েছে। দেশবাসীর বিশ্বাস, মানবতার সেবায় অবদান রাখা তথা লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবন বাঁচানোর জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। আমাদের দেশের মানুষের কাছে এক দশক আগেও উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত হতেন দুটি মানুষ। এদের একজন সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান, অন্যজন মালয়েশিয়ার নন্দিত রাষ্ট্রনেতা মাহাথির মোহাম্মদ। লি কুয়ানের নেতৃত্বে এক সময়কার জেলেদের দ্বীপ সিঙ্গাপুর বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া অর্জন করেছে উন্নয়নের অসামান্য কৃতিত্ব। কিন্তু এখন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন এক বিস্ময়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এমন এক ভূ-খন্ডকে উন্নয়নের সোপানে তুলেছেন যে দেশের হাজার বছরের ইতিহাস অন্ধকারে ঢাকা। শায়েস্তা খানের আমলে যখন এ দেশে টাকায় ৮ মণ চাল কেনা যেত তখনও এ দেশে দুর্ভিক্ষে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে দুটি দুর্ভিক্ষে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ মূলত একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে উড়াল দেয়ার যে কৃতিত্ব বাংলাদেশ দেখিয়েছে তার কোন দ্বিতীয় নজির নেই। মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়াকে উন্নত দেশে পরিণত করেছেন এটি ঠিক। কিন্তু একইভাবে ঠিক যে মালয়েশিয়া দুনিয়ার অন্যতম সম্পদশীল দেশ। বিশ্বের এক নম্বর ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী দেশ। টিন ও রাবার উৎপাদনেও শীর্ষ স্থানে। সিঙ্গাপুরের অবস্থানই তাকে ফ্রিপোর্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিয়েছে। সে বিবেচনায় গত ১০ বছরে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি লাভ করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তুলনাহীন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআরআইয়ের জরিপে বলা হয়েছে শেখ হাসিনার পেছনে দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিতে যে একজন শেখ হাসিনার প্রয়োজন সে তাগিদই ফুটে উঠেছে ওই জরিপে। আগামী নির্বাচনে নিঃসন্দেহে এ জনপ্রিয়তা মূলধন হিসেবে কাজ করবে। তবে সে নির্বাচনে প্রতিটি আসনে প্রার্থী মনোনয়নে দলকে বেছে নিতে হবে মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয় প্রার্থীকে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি কাউয়া বা বসন্তের কোকিলরা নয়, ত্যাগী কর্মীরাই আওয়ামী লীগের সম্পদ। মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের হাতে গড়া একজন কর্মী হিসেবে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারকে নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে ভেবেছি। গত এক দশকে বাংলাদেশ অবিস্মরণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। উন্নয়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ অতি দরিদ্রের হার শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছবে। তবে এ বিষয়টি নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে দেশের উন্নয়ন চায়, জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন চায় এমন দল দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে কিনা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায় এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। তবে আওয়ামী লীগ যেহেতু একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় রয়েছে সেহেতু তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে সাবধানী হতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী এবং লুটপাটতন্ত্রে বিশ্বাসী অশুভ শক্তি নিজেদের নোংরা চেহারা ঢাকার জন্য ক্ষুদ্র কয়েকটি দলকে সামনে রেখে নিজেদের থাবা বিস্তারের নতুন কৌশল বেছে নিয়েছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করে সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করছে তারা। এ অপশক্তির মোকাবেলায় আওয়ামী লীগকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নির্বাচনে এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে হবে যারা জনগণের লোক হিসেবে পরিচিত। বিতর্কিত গণবিচ্ছিন্ন কাউকে মনোয়নন দেয়া ঠিক হবে না। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আমার নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ-২ অর্থাৎ কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ায় গত দেড় যুগ ধরে চষে বেড়িয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক এবং জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের হাতে গড়া কর্মী হিসেবে উপলব্ধি করেছি জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে তাদের ভালবাসতে হবে। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে হবে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলতেন জনগণকে ভালবাসলে তাদের ভালবাসা পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধুও দেশবাসীর হৃদয়রাজ্য জয় করেছিলেন উজাড় করা ভালবাসা দিয়ে। বঙ্গবন্ধু কন্যার সব সাফল্যের উৎস ও দলের কর্মীদের প্রতি তার ভালবাসা। দেশবাসীর জন্য নিজেকে আত্মোৎসর্গিত করার মনোভাব। এলাকাবাসী ও দলের কর্মীদের হৃদয়রাজ্যে ঠাঁই করে নেয়ার কারণেই নবম সংসদ নির্বাচনে আমাকে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে নেত্রীর নির্দেশে ডাঃ আবদুল মান্নানের অনুকূলে আসনের প্রার্থিতা ছেড়ে দিলেও আমি এলাকার মানুষ ও দলীয় কর্মীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও দলীয় সিদ্ধান্তকে শিরোধার্য মেনে নিয়ে এলাকার সঙ্গে সর্ম্পক আরও গভীরতর করার প্রয়াস চালিয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা ঘোষিত ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার নিমিত্তে এলাকার হতদরিদ্রদের সাহায্য সহযোগিতা প্রদানে সরকার অনুমোদিত একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি। এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সেবার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মন জয়কে ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছি। দলকে বিপুলভাবে জয়ী করার জন্য, বর্ণচোরাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে নৌকার জয় নিশ্চিত করতে আগামী নির্বাচনে সঠিক জনকে মনোনয়ন দেয়া হবে এমন আবেদনই রাখতে চাই। বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার যে মিশন বঙ্গবন্ধু কন্যা নিয়েছেন তার একজন কর্মী হিসেবে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর থাকব। আগামী নির্বাচনে নির্ধারিত হবে দেশ উন্নয়নের ধারায় আগুয়ান থাকবে, না পেছনে হটবে। নির্ধারিত হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পতাকা উড্ডীন থাকবে না সংঘাত হানাহানির পথে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঙ্গী করে দেশ চলবে না একাত্তরের পরাজিত শক্তির সহযোগীদের হাতে দেশে ভাগ্য নির্ধারিত হবে? এ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তথা আওয়ামী লীগের হারার কোন অবকাশ নেই। আমার বিশ্বাস জেতার এই মিশনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দল ভুল করবে না, করা উচিত নয়। লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পরিচালক বিআরটিএ
×