ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাহিত্যে ভ্যাম্পায়ারিজম

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

সাহিত্যে ভ্যাম্পায়ারিজম

‘মানুষ ক্রমেই রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে ও রহস্যজনকভাবে মারা যাচ্ছে। শিশুরা হারিয়ে যাচ্ছে- ফিরে এলে ওদের গলায় দেখা যাচ্ছে ধারালো দাঁতের সূক্ষ্ম ক্ষতচিহ্ন। এসব কিসের আলামত?’ প্রাচীনকাল থেকে ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মানুষ বহুবিধ রকমের কুসংস্কার ও আত্মায় বিশ্বাসী ছিল। ভ্যাম্পায়ারে বিশ্বাস হচ্ছে তার মধ্য একটি কুসংস্কার। এটিকে কেন্দ্র করে বিশ্বসাহিত্যে তৈরি হয়েছে ভ্যাম্পায়ারিজমের মতো মতবাদ। ভ্যাম্পায়ার (vampire): রক্তচোষাজীব ও ভীতদের কল্পনা। ভ্যাম্পায়ার শব্দটি লিথুয়ানিয়া ভাষার ‘ওযেম্পটি’ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘পান করা’ জার্মান ভাষার ‘ওয়্যাম্পিয়ার’ শব্দটি ১৭৩২ সালে ইংলিশে ভ্যাম্পায়ার হয়ে প্রকাশ পায় যাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ভ্যাম্পায়ারিজম মতবাদের জন্ম দেয় যা সাহিত্য, সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র, ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিত্রকলায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ভ্যাম্পায়ারিজম (ঠধসঢ়রৎরংস): যে সকল অতিপ্রাকৃত মানবদেহের জীবনীশক্তি (রক্ত,আত্মা) শুষে নিয়ে বেঁচে থাকে তারাই ভ্যাম্পায়ার। আর এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে ভ্যাম্পায়ারিজম মতবাদ। ভ্যাম্পায়ার ধারণায়- গভীর রাতে পৃথিবীর সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সন্তর্পণে কে যেন বের হয়ে আসে গুহা, খনি, গাছের আড়াল এবং ভুতুরে বাড়িঘর থেকে। ভ্যাম্পায়ার একটি পৌরাণিক ও লোককথার প্রাণী যার বিশ্বাস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিতে পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদ ব্রায়ান ফ্রস্ট মনে করেন, ‘রক্তচোষা দৈত্য ও ভ্যাম্পায়ারের বিশ্বাস মানুষের অস্তিমতোই একটি ব্যাপার’ আঠারো শতকের প্রথম দিকে পূর্ব ইউরোপে ভ্যাম্পায়ার কুসংস্কারের মাত্রা যতই বাড়তে থাকে মানুষের মধ্য মাসহিস্টেরিয়া ততই বৃদ্ধি পায়। ভ্যাম্পায়ারে বিশ্বাসীদের ধারণা ছিল যে সকল মানুষ, পুশু-পাখি, জানোয়ার অস্বাভাবিকভাবে মারা যায়; মৃত্যুর পরে তাদের দেহ অক্ষত থাকলে তারা ভ্যাম্পায়ার হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং এ ভ্যাম্পায়ার যাকে কামড়াবে সেও ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হবে। প্রস্তর যুগে আত্মায় বিশ্বাস ছিল একটি সর্বসম্মত ধারণা এই সময়ের মানুষ তার পূর্ব পুরুষ বিভিন্ন প্রতীক, এবং প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করত সেই সঙ্গে চলত যাদুবিদ্যার চর্চা। মানবগোষ্ঠী নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য নরমাংস ভোজনের পথ বেছে নেয় ‘করবাই’, গোষ্ঠী মনে করে অন্য কোন মানব মানবদেহের মাংস ভোজন করলে আত্মিক শক্তি লাভ করা যায়। গফ-গুহায় (১৫০০ বিসি) মানবদেহের হাড়ের ওপর মানুষের দাঁতের কামড় পাওয়া যায়। ব্রোঞ্জ যুগে (২৫০০ বিসি) অন্যের দেহ ভক্ষণ করে আত্মিক শক্তি লাভের জনশ্রুতি আছে, এডিম্মু ছিল প্রাচীন আসিরীয় অঞ্চলের প্রতিশোধ পরায়ন আত্মা। যাদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হতো, সঠিকভাবে কবর দেয়া হতো না, মরার পরে আচার অনুষ্ঠান হতো না তাদের আত্মা পরিণত হতো ‘এডিম্মু’ এ। জীবিত মানুষের প্রতি ছিল তার ঈর্ষা। পরবর্তীতে লৌহযুগে ইউরেশীয়া অঞ্চলের অতিপ্রাকৃত আত্মা প্রথমবারের মতো দেহ ধারণ করে। বৈদিক মিথের (৫০০ বি সি) ‘বেতাল’ প্রথমে ছিল এক ধরনের দুষ্ট আত্মা, যাদুর মাধ্যমে তারা দেহে প্রবেশের ক্ষমতা লাভ করে। জোম্বির মতো নির্বোধ নয়; ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিথোলজিতে যুক্ত হলো দেহধারী বুদ্ধিমান পিচাশ। এদেরও মানব দেহের জীবনী শক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিল। ক্লাসিককালে গ্রীক মিথের প্রথমদিকেই (৪০০ বিসি-ই) শুরু মানবদেহের প্রতি তীব্র আকর্ষণযুক্ত অপদেবতায় প্রভাবিত একদল মেয়ে, জনশ্রুতি আছে- লিলিথ স্বর্গ থেকে রেগে কিংবা বহিস্কৃত হয়ে পৃথিবীতে চলে আসে এবং অশুভ হয়ে দাঁড়ায়। লিলিথকে বলা হয় সকল অশুভ জীবের মাতা যত উবসড়হং আছে তার কিছু এসেছে লিলিথ থেকে তারাই এর সন্তান। ইশ্বর যখন লিলিথকে নেয়ার জন্য দূত পাঠালেন লিলিথ ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালো, দূত জানালো ফিরে না গেলে তার একশত সন্তান হত্যা করা হবে। লিলিথও মানবশিশু হত্যার ঘোষণা দিল। ইহুদী মতে, লিলিথ ছিলো অপরূপ সুন্দরী। সে সেজেগুজে পুরুষগৃহে প্রবেশ করে কামলীলা সম্পূর্ণ করত। পুরুষদের বীর্য সংগ্রহ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, লিলিথের সঙ্গে মিলন শেষে কোন পুরুষ বাঁচত না। লিলিথ তখন সেই পুরুষের রক্ত পান করত আর সংগ্রহকৃত বীর্য ব্যবহার করে গর্ভবতী হয়ে আরও অশুভ সন্তানের জন্ম দিত। মধ্যযুগে জিপসীরা পূর্ব থেকে পশ্চিমে মাইগ্রেট হতো, মূলত ভারত থেকে উদ্ভূত এই জাতিগোষ্ঠী সঙ্গে করে নিয়ে আসে বৈদিক মিথ বেতালার বিভিন্ন ভার্সনÑ যার মধ্য থেকে উদ্ভূত হয় রেভেন্টের ধারণা; তারা বিশ্বাস করতো জিপসীরা সঙ্গে করে শতায়ন নিয়ে এসেছে যারা মৃতদেহে প্রবেশ করে মৃতদেহ জাগিয়ে তুলতে পারে এরাই ছিল আধুনিক ভ্যাম্পায়ারের প্রথম পূর্ব পুরুষ। উলিয়াম অব নিউবার্গ এর করা এক জরিপে (১১৯০এস) ইয়কর্শায়ার এলাকায় অনেকেই দাবি করেন মৃতদেহ কবর থেকে উঠে আসতে এবং জীবিতদের আক্রমণ করতে দেখেছে। কেউ কেউ দাবি করেন আক্রমণের পর রক্তও পান করেছে। মৃত্যু ব্যক্তির কবর খুঁড়ে পাওয়া যায় লাশের মুখে রক্ত। মধ্যযুগের শেষের দিকে (১৬০০ সি-ই) পূর্ব ইউরোপজুড়ে আধুনিক ভ্যাম্পায়ার ধারণা রূপ নিতে থাকে। ইউরোপীয়ানদের লোকালোকের মধ্য ভ্যাম্পায়ার অনাবাসী মানুষ ছিল তারা প্রায় প্রিয়জনদের পরিদর্শন করত এবং জীবিত অবস্থায় আশপাশে বসবাসকারী লোকদের মধ্য দুর্বৃত্ত বা মৃত্যু ঘটেছিল কিনা তা পরীক্ষা করত। তারা শর্টস পড়ত এবং প্রায়শই ১৯ শতকের প্রথমদিকের তারিখগুলো থেকে আজকের গ্যান্ট, ফ্যাকাসে ভ্যাম্পায়ারের থেকে আলাদা আলাদা এবং হালকা অন্ধকারের মুখোমুখি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। ঠধসঢ়রৎরপ সংস্থা অধিকাংশ সংস্কৃতির মধ্য রেকর্ড করা হয়েছিল, আঠারো শতকের বারকানস এবং পূর্বইউরোপে প্রাক- শিল্প সমাজে বিদ্যমান স্থানীয় বিশ্বাসে ভর ( ঐুংঃবৎরধ) হিংস্রতার পর পশ্চিম ইউরোপে এ ভ্যাম্পায়ার শব্দটি জনপ্রিয় হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটির বিশ্বাস মৃত্যুদেহ ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং মানুষকে রক্তপাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। আর পূর্ব ইউরোপে এদের স্থানীয় রূপগুলো ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল- আলবেনিয়ায় শত্রিগা, গ্রীসে ভ্রিমোলাকাস এবং রোমানিয়ায় স্ট্রিগোই। ইউরোপীয় সমাজে ভ্যাম্পায়ার আতঙ্ক এতবেশি ছিল যে মানুষ একে অপরকে ভ্যাম্পায়ার বলে সন্দেহ করত। এই স্টিগোয়ারের ধারণা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে যা পৌঁছে যায় চীন পর্যন্ত। সেখানে আবির্ভাব হয় জিযাংশির ধারণা একদল জেগে ওঠা লাশ যারা দেহ থেকে রক্তের মাধ্যমে শুষে নেয় আত্মা এরা সারাদিন কফিনে বিশ্রাম নিতো জেগে ওঠতো রাতে। ভ্যাম্পায়ার বিশ্বাস তখনকার সমাজব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল মানুষ একজন অন্যজনকে ভ্যাম্পায়ার বলে সন্দেহ করত তাই ভ্যাম্পায়ার থেকে বাঁচার জন্য ব্যবস্থা নিত- চিরস্থায়ীভাবে মারার জন্য ভ্যাম্পায়ারের মৃতদেহের বুকের উপর বাইবেলের বাণী পড়তে পড়তে একটি ক্রুশ গেঁথে দিত অথবা সম্পূর্ণ মৃতদেহ পুড়ে ছাই করা হতো। ভ্যাম্পায়ার যেহেতু হৃদপি-ে বাস করে তাই হৃদপি- বরাবর লোহার গোঁজ মেরে দিত। ভ্যাম্পায়ারকে মারার জন্যে চার্চের পবিত্র পানি, রসুন ইত্যাদি ছিল প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবে ভ্যাম্পায়ার মেরে ফেললেও এরা মরে না দিনের বেলায় লাশের মতো থাকলেও রাতের বেলায় এরা জ্যান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আধুনিক সময়ের মধ্য-ভ্যাম্পায়ারকে ভাবা হয় সাধারণত একটি কল্পিত সত্তা হিসেবে যদিও চুপাকাবরা অনুরূপ ভ্যাম্পায়ারিক প্রাণীর বিশ্বাস কিছু সংস্কৃতিতে রয়েগেছে। ভ্যাম্পায়ারের প্রথম স্থানীয় বিশ্বাস মৃত্যুর পর শরীরের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার অজ্ঞতা এবং কিভাবে প্রাক শিল্প সমাজের লোকেরা এটি যুক্তিসঙ্গত করার চেষ্টা করেছিল, তা ভেবেছিল, মৃত্যুরহস্য ব্যাখ্যা করতে ভ্যাম্পায়ারের চিত্র তৈরি করে। চড়ৎঢ়যুৎরধ—ঠধসঢ়ৎরংস এর কিংবদন্তির সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং অনেক মিডিয়ার এক্সপোজার পেয়েছিল। সর্বপ্রথম ১৮৯৭ সালে চযরষরঢ় ইঁৎহব ঔড়হবং চিত্রকলায় ভ্যাম্পায়ার চিত্রিত করেন। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভ্যাম্পায়ারের অনেক ফ্যান আছে। কিছু মানুষের ধারণা ক্লান্তি, মাথাব্যথা পেটের অসুখ দূর করতে নিয়মিত রক্ত পান করা উচিত এমন চিকিৎসা বহুদিন যাবত চলে আসছে যাকে বলে ঈষরহরপধষ ভ্যাম্পায়ার। এজন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরে ভ্যাম্পায়ার সোসাইটি গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডি জে উলিয়ামের মতে, ‘মানুষের রক্তপানের কথা শুনলেই বিষয়টি আতঙ্কের মনে হয়, সাধারণভাবে প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাস বলে মনে হয়।’ গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ৩১ অক্টোবর হ্যালুইন পালন করা হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে স্পেশাল হ্যালোইন পার্টির আয়োজন করা হয়। অনেক ছেলে মেয়েকে ভ্যাম্পায়ার কস্টিউম পড়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। ভীতিপ্রদ, অলৌকিক ও রোমান্স নিয়ে ভ্যাম্পায়ারিজম সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। ভয়, কল্পনা, মৃত্যু কখনও বা রোমান্স একাত্রে জরিয়ে সাহিত্যের এ ধারাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। ইংরেজ লেখক হোরাস ওয়ানপোলকে এ ধারা আদি লেখল বলা হয় তার উপন্যাস ‘দ্য ক্যাসল অব অটরান্টো’ (১৭৬৪)। পরে আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এবং উনিশ শতকের প্রথমে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যার মূল উৎস ছিল কুসংস্কার, অলৌকিক শক্তির প্রতি মানুষের অন্ধ বিশ্বাস, ভীতিপ্রদ মনোভাব। আধুনিক কথাসাহিত্যের ক্যারিশ্যাটিক এবং অত্যাধুনিক ভ্যাম্পায়ার প্রকাশের মাধ্যমে জন্মগ্রহ করে অত্যন্ত সফল গল্প এবং ভ্যাম্পায়ার নিয়ে প্রভাবশালী কাজ হয়েছিল। ১৮৯৭ সালে ব্র্যাম স্টোকারের ড্রাকুলাকে চিত্তাকর্ষক ভ্যাম্পায়ার উপন্যাস হিসেবে মনে করা হয় এবং সাহিত্যে আধুনিক ভ্যাম্পায়ারিজমের কিংবদন্তির ভিত্তিটি উপলদ্ধি করা হয় যদিও এটি শেরিডান লে ফানুর ১৮৭২ সালের উপন্যাস ‘কার্মিলা’ এর পরে প্রকাশিত হয়েছিল। এই উপন্যাসের সাফল্যের সঙ্গে চলচ্চিত্র, ভিডিও গেমগুলো সাহিত্যে ভ্যাম্পায়ারিজমের ধারণাকে আরও গতিশীল করে। ভ্যাম্পায়ারিজম নিয়ে জন পলোডির বই ‘ঞযব াধসঢ়ুৎব’ ব্র্যাম স্টোকারের প্রভাবশালী কাজ ‘ড্রাকুলা’ উপন্যাসটিই প্রাচীনকালের ভ্যাম্পায়ারের বিশ্বাস নিয়ে আধুনিক সাহিত্য প্রবেশ করে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের রহস্যজনক মৃত্যু, নায়িকার রক্তশূন্যতা, ভ্যম্পায়ারের উৎপাত। উপন্যাসটি একাধিক বর্গে অন্তর্ভুক্ত। ভ্যাম্পায়ার সাহিত্য, ভৌতিক কল্পনা সাহিত্য, গথিক উপন্যাস ও আক্রমণ সাহিত্য। গঠনগতভাবে একাধিক চিঠি, দিনলিপি, জাহাজের নথি আকারে রচিত। সাহিত্য সমালোকরা এ উপন্যাসে ভিক্টোরিয়ান সংস্কৃতিতে নারী অবস্থান, রক্ষণশীলতা, যৌনতা, অতিবেশ, সাম্রাজ্যবাদ, উত্তর সাম্রাজ্যবাদ ও লোককথা হত্যাদির নানা উপাদান পরীক্ষা করে দেখেছে। ব্র্যাম স্টোকার ভ্যাম্পায়ারিজমের আবিষ্কার কর্তা না হলেও একাবিংশ শতাব্দীর একাধিক নাট্যকলা, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সংস্করণে ভ্যাম্পায়ারিজমের যে জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার জন্য এ উপন্যাসখানি বহুলাংশে অবদান রেখেছে ড্রাকুলা উপন্যাসে ক্লাসিক ভ্যাম্পায়ারের রূপরেখা এঁকেছিল সবচেয়ে স্পষ্ট রূপে—ভ্যাম্পায়ারের আচারণ, স্বভাব, পোশাক পরিচ্ছেদ, ক্ষমতা, সরলতা, দুর্বলতা সবকিছুর এক নিখুঁত কাঠামো আঁকেন আর স্টোকারের আইডিয়া বিংশ শতাব্দী থেকে শুরু হয় ভ্যাম্পায়ারের হলিউড যুগ তাই বর্তমান সময়ে ভ্যাম্পায়ার হয়ে ওঠেছে মূলত যৌনাবেদনাময়ী, সম্মোহনী ও আকর্ষণীয়, ইউরোশীয় অঞ্চলের ফুলে ওঠা রক্তচোষা অর্ধগলিত লাশের দুঃস্বপ্ন এখন ভুলে যাওয়ার স্মৃতি। ভ্যাম্প্যায়ার ডায়রি, ট্রুব্লাড টুই লাইট সিরিজ এর মতো এই শতাব্দীর ধারণায় ভ্যাম্পায়াদের চিত্রায়ন করা হয়েছে চিরযৌবনাময় হিরো বা এন্টি হিরো হিসেবে আর এর মূলে রয়েছে রোমান্টিক যুগের কবি সাহিত্যিক যাদের লেখায় ভ্যাম্পায়ার এখন রোমান্স ও বিনোদন। গোথে, কীটস, পোলাদ্রি, জেমস ম্যালকম। Ossentelder এর The vampire(1748), August Burger এর ‘Lenore’, Shelley’s ‘The spectral Horsemon’ (1810), আধুনিক যুগে ভ্যাম্পায়ারকে রোমান্টিকভাবে চলচ্চিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। The sixth sense, The Ring, The grudge, Mirrors, Sleepy Hollow,The Exorist, Rec, Pi“ya যার আবেদন তরুণ সমাজ ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাই ভ্যাম্পায়ার প্রাচীন সমাজের কুসংস্কার হলেও সাহিত্যবেত্তাদের পরিশ্রম ও গবেষণায় আধুনিক যুগে সাহিত্যে ভ্যাম্পায়ারিজম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
×