ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুর টেস্টে জয়ের পর বললেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে এই আত্মবিশ্বাস কাজে দেবে

‘আমাদের চোখের পানি কেউ দেখে না’

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

‘আমাদের চোখের পানি কেউ দেখে না’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঘরের মাটিতে পরপর দুই বছর (২০১৬ ও ২০১৭) ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে টেস্টে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু সেই দলটিই খর্বশক্তির জিম্বাবুইয়ের কাছে এবার সিরিজের প্রথম টেস্টে ১৫১ রানে হেরে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। সেই হারে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন ক্রিকেটাররা, তাই মিরপুর টেস্টে নিজেদের উজাড় করে দিয়ে বিষয়টির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চেয়েছে স্বাগতিকরা। অবশেষে সিরিজ বাঁচানো জয়টি এসেছে মিরপুর টেস্টে এবং এরপর অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট জয় শেষে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আক্ষেপের সুরে জানালেন, হারলে সবার মন অনেক খারাপ থাকে। কিন্তু কেউ ক্রিকেটারদের চোখের পানিটা দেখে না। জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে পূর্ণ সিরিজ শেষ হতে না হতেই এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নামার প্রস্তুতি শুরু হবে। ইতোমধ্যেই ক্যারিবীয়রা বাংলাদেশে পা রেখেছে। সেই সিরিজে মিরপুর টেস্টের জয়টা দলের সবাইকে আত্মবিশ্বাসী করবে বলে দাবি মাহমুদুল্লাহর। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে ৪ টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিলেন মাহমুদুল্লাহ। এর মধ্যে আগের তিনটির মধ্যে দুটিতেই হেরেছিলেন এবং একটি ড্র করেছিলেন। এমনকি জিম্বাবুইয়ের কাছেও হারতে হয়েছে। অবশেষে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি। মিরপুর টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম জয় দেখার পর মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘যদি আপনি ম্যাচ জয় করেন তাহলে অবশ্যই আপনার আনন্দ লাগা উচিত। ম্যাচ জিতলে ওতটুকু অধিকার থাকে আনন্দ প্রকাশ করার। আমরা যখন খারাপ খেলি, ড্রেসিং রুমে মনটা আমাদেরই বেশি খারাপ হয়। আমাদের চোখের পানিটা কেউ দেখে না। আমরা এটা কাউকে বলিও না। সবাই চাচ্ছিলো জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ জিতুক। প্রথম টেস্ট শেষে একটা কথা বলেছিলাম, আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সবাই বেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, প্রথম টেস্ট হারের পর আমরা খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম তার বহিঃপ্রকাশ মাঠে দেখাতে। আমার মনে হয় আমরা কিছুটা হলেও করতে পেরেছি।’ ব্যাটসম্যান হিসেবেও নিজেকে ফিরে পেয়েছেন মিরপুর টেস্টে। আগের ৯ ইনিংসে মাত্র ১০.৭৫ গড়ে ৮৬ রান করা মাহমুদুল্লাহ ৮ বছর ১০ মাস পর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ কিছুটা রিলিফ বলতে পারেন। কারণ আমার শেষ পাঁচ টেস্টে কোন ভাল পারফর্মেন্স ছিল না। আমি এই ফরমেটে সংগ্রাম করছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম আমার জায়গাটা মূল্যায়ন করতে, কারণ অধিনায়ক হিসেবে সবসময় সামনে থেকে পারফর্ম করতে হয়। ওই দায়বদ্ধতা আমার মধ্যে ছিল। আমি চাই এই ফরমেটে আরও ধারাবাহিক হতে।’ প্রথম টেস্টে কোনভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না পরাজয়। সে কারণেই দলের সবাই খুব কষ্ট যেমন পেয়েছিলেন, তেমনি দ্বিতীয় টেস্টে জিতে সবকিছু ভুলেও যেতে চেয়েছেন। সে জন্যই সিলেট টেস্ট শেষে বিপর্যস্ত দলকে নিয়ে বলেছিলেন, এভাবে টেস্ট খেলার মানেই হয় না। এবার জয়ের পর এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘যদি আমরা প্রথম টেস্টের মতো খেলি তাহলে অবশ্যই মানে হয় না। আবার যদি আপনি এই টেস্টের কথা চিন্তা করেন, যদি আমরা এমন মানসিকতা দেখাতে পারি এবং কাজেকর্মে সেটা দেখাতে পারি, তাহলে অবশ্যই মানে হয়। এই ম্যাচটা জিতে যেহেতু আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নামব, এর জন্য এটা ভাল একটা কামব্যাক। এই ম্যাচে রান করাতে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস আরও ভাল হবে। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও কাজে দেবে।’ সেই আত্মবিশ্বাস থাকলেও জিম্বাবুইয়ের চেয়ে শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা ক্যারিবীয়দের সঙ্গে লড়াইটা সহজ হবে না। আবার ক্যারিবীয়দের পেস বোলিংটাও চ্যালেঞ্জিং হবে। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসে চিন্তা করব কেমন উইকেট চাচ্ছি। ওদের দলও আমাদের দেখতে হবে, আমরা সবসময় যে স্পিনবান্ধব উইকেট করি, সেই দিকেই হয়তো আমরা যাব। ওদের যে পেস বোলিং আছে (রোচ, গ্যাব্রিয়েল..) সবাইকে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেছি, ওই অভিজ্ঞতাটুকু আছে ওরা কেমন বোলিং করতে পারে। তাছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট এবং বাংলাদেশের উইকেটতো এক নয়। আমরা যদি আমাদের হোম কন্ডিশনটা আমাদের মতো করে গড়ে নিতে পারি তাহলে ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে আসতেও পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কতটা ভাল ক্রিকেট খেলছি সেটা। তারা অনেক ভাল দল। আমাদের মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে তৈরি থাকতে হবে কঠিন উইকেটে খেলার জন্য। আমাদের মধ্যে এই বিশ্বাস আছে আমরা আমাদের দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারব।’
×