ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পল্টনে বিএনপির তাণ্ডব কি আরেকটি নাশকতার চক্রান্ত!

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

পল্টনে বিএনপির তাণ্ডব কি আরেকটি নাশকতার চক্রান্ত!

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি দলীয় অফিস পল্টনে বুধবার যে সহিংস সন্ত্রাসের তাণ্ডব চালিয়েছে তার নেপথ্য কাহিনী খুঁজে বের করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। প্রভাবশালী বিদেশী রাষ্ট্র, মানবাধিকার সংগঠন, নির্বাচনী পর্যবেক্ষকসহ বিদেশীদের কাছে একাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি সেই বার্তা পাঠানোই ছিল উদ্দেশ্য। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে দলীয় অফিসের সামনে সহিংস সন্ত্রাসের তা-ব ঘটানো হয়, যা এটা ছিল পূর্বপরিকল্পিত একটি সাজানো নাটক। গোয়েন্দা তদন্তে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। গোয়েন্দা তদন্তে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান ব্যর্থ এটা প্রমাণ করতেই সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলার ঘটনা ঘটায় বিএনপি। কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হয়, যাতে বোঝানো যায় যে, নির্বাচনের পরিবেশ নেই এই ধরনের অজুহাত সামনে এনে বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও জোটগুলোকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে আনার চক্রান্ত হয়। গোয়েন্দা সূত্রমতে, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে পল্টনের বিএনপির দলীয় অফিসের সামনে যে সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা ঘটানো হয়েছে তাতে আগামী দিনগুলোতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাবে কিনা সে ধরনের সংশয়, সন্দেহ, আতঙ্ক, উদ্বেগ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করেছে বিএনপি। সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনার যে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে যেভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার আগুন সন্ত্রাস চালানো হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর জন্য সন্ত্রাসের একটি মহড়া দিয়েছে বিএনপি। নিজেরা সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে অন্য দল ও জোটগুলোকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে এনে ’১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি একতরফা নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিতে ষড়যন্ত্রের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেন, পল্টনের বিএনপি অফিসের সামনে সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনায় জড়িত অনেকের পরিচয় পেয়েছি এবং তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তারা সবাই বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। নাশকতায় জড়িত অন্তত ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে পুলিশ অথচ পল্টনে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগে জড়িতদের বাঁচাতে বিএনপি নেতৃবৃন্দ উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সহিংস কর্মকা- করে তার দায় বিএনপির ওপর চাপাতে চাইছে। এমনকি মাথায় হেলমেট পরিহিত এক যুবককে ছাত্রলীগের ক্যাডার বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, যা বৃহস্পতিবার ছিল ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর উৎসবমুখর হয়ে ওঠে রাজনীতির অঙ্গন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহে ব্যর্থ প্রার্থীরা। রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে ওঠার মধ্যে বুধবার দুপুরে পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিএনপির কর্মীরা পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগকালে গাড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে বুকের কাপড় খুলে নৃত্য করেছে, লম্বা লাঠি দিয়ে দৌড়ে এসে তা-ব চালানোর দৃশ্যগুলো মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। ডিএমপি লেখা গাড়িগুলোতে আগুন দেয়ার পর প্রকাশ্য রাজপথে আগুন জ্বলার দৃশ্য দেখে অনেকের মুখেই শোনা গেছে, বিএনপি আবার ’১৩-’১৪ সালের আগুন সন্ত্রাসের যুগে ফিরে গিয়ে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর, গাড়িতে আগুন দেয়ার যে ভিডিওফুটেজ টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রচারিত হয়েছে, তাতে বিএনপির নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের চক্রান্ত ভেস্তে গিয়ে দলের ওপর মানুষজনের নেতিবাচক বিরূপ মনোভাবের কথা মুখে মুখে ফিরছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে ততই নির্বাচনের মাঠ উত্তেজনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কারণে বিএনপি নানা ছলচাতুরি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। নির্বাচনের পরিবেশ নেই, পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে ইত্যাদি ধরনের অজুহাত তৈরি করে বিএনপি নিজেরাই নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে কৌশলে দূরে সরে গিয়ে একতরফা নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিয়ে বেকায়দায় ফেলতে চায় ইসি ও নির্বাচনকালীন সরকারকে। ইসি ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বিএনপি দেশী-বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফায়দা লোটার চেষ্টার ছক কষছে।
×