ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামালের চেম্বারে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত ॥ ইসিতে চিঠি

ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে ঐক্যফ্রন্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে ঐক্যফ্রন্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। মান্না বলেন, আমরা যত দল মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি, তারা সবাই একটি কমন প্রতীক নিয়ে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব এবং সেই কমন প্রতীক হবে ধানের শীষ। অক্টোবর মাসের ১৩ তারিখ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হয়। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে ফ্রন্ট যাত্রা শুরু করে। পরিকল্পিতভাবে নতুন এই রাজনৈতিক মোর্চা থেকে বাদ দেয়া হয় বিকল্পধারাকে। নতুন এই রাজনৈতিক মোর্চা গত রবিবার নানা নাটকীয়তা শেষে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়। এখন দু’পক্ষের মধ্যে আসন ভাগাভাগি ও কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের কোন নিবন্ধন নেই। গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির নিবন্ধন রয়েছে। বৈঠকে আসন বণ্টন নিয়ে কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে আলোচনার যাত্রা শুরু করেছি। নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে যুক্তফ্রন্ট এবং আওয়ামী লীগের মুখোমুখি অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মান্না বলেন, ‘আমরা যখন সরকারের সঙ্গে দেখা করি, প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা নির্বাচন কমিশনারের কাছে গিয়ে যা বলেছি নির্বাচন পেছানোর জন্য তাতে অসংখ্য যুক্তি আছে। বিশেষ করে ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষে সারা ইউরোপ আমেরিকায় উৎসব হয়। এখানে আমাদের পর্যবেক্ষকদের আসার কথা থাকলেও তারা আসতে পারবেন না। এতে সারাবিশ্ব থেকে এক ধরনের বিচ্ছিন্ন করে ভোট করার এই প্রচেষ্টা ঠিক নয়। মান্না বলেন, সরকারী দল বলেছে নির্বাচন এক ঘণ্টাও পেছানো যাবে না, যা এক ধরনের হুমকিস্বরূপ। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি। মান্না এ সময় আরও বলেন, ‘বুধবার বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ বাহিনীর নির্মম হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। একদিকে সরকার পক্ষ চারদিন ধরে সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে একটি উৎসব করল। সেই উৎসবের ফসলে দুজন মারা পর্যন্ত গেলো। তখন পুলিশ কোন কিছু করেনি। অথচ এদিকে দেখা গেল বিরোধী দল বিএনপির মনোনয়নপত্র বিতরণ উপলক্ষে যখন নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছে, তার একদিন আগে নির্বাচন কমিশন সড়ক পরিষ্কার রাখতে বিবৃতি দিলেন এবং তার পরদিনই এই হামলা হলো। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত ছিল।’ মান্না বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, এই হামলার পর পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙ্গা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সরকারী দলের হাত আছে। অসমর্থিত কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য খবরে জানা গেছে, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা হেলমেট পরে (সেই যে হেলমেট বাহিনী আমরা কোটা আন্দোলনের সময় দেখেছিলাম, সেই বাহিনী) নয়াপল্টনে তৎপর ছিল। আমরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি ও নিন্দা জানাই। ঐক্যফ্রন্টের নেতা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি সরকার চেষ্টা করছে, বিরোধী দল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। তারা সেই উস্কানি দিচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ করব। আমাদের সিদ্ধান্ত সব রকমের বাধা উপেক্ষা করে নির্বাচন করব। সেই নির্বাচনে একটা ভোট বিপ্লব হবে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। বৈঠকে ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসীন মন্টু, ঐক্যপ্রক্রিয়ার সুলতান মুহাম্মদ মনসুর, আব্দুল মালেক রতন, সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকে। ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে ঐক্যফ্রন্ট ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিষয়টি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল। ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বিকেল সাড়ে ৩টায় সিইসি দফতরে চিঠি দেন। ঐক্যফ্রন্টের চিঠিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়টি জানানো হয়। গত ৮ নবেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তফসিলে ২৩ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিল। তফসিলের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে একমাস ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্ট এক সপ্তাহ পিছিয়ে পুনর্তফসিল ঘোষণার জন্য আবেদন করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। পরে ইসি বৈঠক করে এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ১২ নবেম্বর পুনর্তফসিল ঘোষণা করে। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ধারা-২০-এর (১)-এর (এ) বিধান অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে নির্বাচনী জোট গঠন করলে এ জোটের যেকোন একটি দলের প্রতীক জোটভুক্ত প্রার্থীদের বরাদ্দ করা যাবে। এ ধরনের প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে ইসি বরাবর আবেদন করতে হবে।
×