ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগুনসন্ত্রাস আবার শুরু হয়েছে। জনগণ যখন উৎসবমুখর হয় তখন বিএনপির খুব খারাপ লাগে। তারা সেই উৎসবে পানি ঢালে। সেটাই বুধবার নয়াপল্টনে আমরা দেখলাম। তবে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। ভোটের, গণতন্ত্রের ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। সেজন্য আমরা জনগণের পাশে আছি এবং সব সময় আমরা পাশে থাকব। আর ২০১৪ ও ২০১৫ সালে চেষ্টা করে সফল হয়নি, আগামীতেও সফল হবে না। বৃহস্পতিবার ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভায় সূচনা বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদেরকে (বিএনপি) বলব, নির্বাচনে যেহেতু আসবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠুভাবে হয় সেটাই চেষ্টা করা। অন্তত নির্বাচন বানচালের চেষ্টা যেন তারা না করে। আগামী নির্বাচনে বিজয়ের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তাতে আগামী নির্বাচনেও জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের জীবনমান, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখবে, সে বিশ্বাস আমার আছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে সব দল আসার ঘোষণায় দেশে যখন একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে তখনই নয়াপল্টনের ওই ঘটনা (পুলিশের ওপর হামলা) ঘটল। কোন কথা নেই, বার্তা নেই; সেখানে বিএনপির এক নেতা তার মিছিল নিয়ে এলো। যেটা মিছিল নিয়ে আসার কথা নয়। তারপরও নিয়ে এসে সেখানে মারপিট হয়, এতে অনেক পুলিশ আহত হয়। তিনটা গাড়িও পোড়াল। তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তারা যে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, আবার ঠিক সেই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করল। মানে অগ্নিসন্ত্রাস ছাড়া, মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ান ছাড়া বিএনপি কোন কাজ করতে পারে না- এটাই প্রমাণ। তিনি বলেন, জনগণ চায়, একটা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক। যে নির্বাচনে তারা ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করবে। তবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, যখন বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ একটা আনন্দমুখর পরিবেশে, সবাই খুশি, নির্বাচন করবে, নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে, তাদের মনমতো প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবে তখন এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই যেকোন সন্ত্রাস, অগ্নি সংযোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তারা (জনগণ) যেন যে কোন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রুখে দেন। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা অগ্নি সংযোগ করল, সন্ত্রাস করল আর উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। দোষ চাপাল ছাত্রলীগের ওপর। কিন্তু যেখানে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেল, তাদের নেতাকর্মীরাই এ কাজ (পুলিশের ওপর হামলা) করছে। সেখানে তারা হুট করে বলে দিল, ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছেলেরা এ কাজ করেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ছাত্রলীগ গেল কখন এবং যাবে কেন? ভিডিও ফুটেজে তো সবার চেহারা দেখা যাচ্ছে। একটাও কি ছাত্রলীগ-যুবলীগের কারও চেহারা আছে? সবই তো বিএনপির গু-াদের চেহারা, সবাই তো বিএনপির। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশকে মারা এটা তো আমরা ২০১৪ সালে দেখলাম, ১৫ সালেও দেখলাম। আবার বুধবারও। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা খুব সহনশীলতা দেখিয়েছে। দুই গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ভস্মীভূত, একটা আংশিক। এভাবে মানুষের জানমাল নষ্ট করা এবং যখন মানুষের একটা আনন্দ উৎসব, সেই সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটানো অত্যন্ত দুঃজনক, আমি নিন্দা জানাই। সংসদীয় বোর্ডের সভায় বড় বড় কথা বলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাদের নিয়ে তারা দল করে। তাদের (বিএনপি) দলের গঠনতন্ত্রের সাত অনুচ্ছেদও এখন তারা অস্বীকার করে। যে কোন সাজাপ্রাপ্ত, খুনী, ডাকাত, দুর্নীতিবাজ সবাই তাদের নেতা হতে পারে। আর এদের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে, তারা আগে অনেক বড় বড় কথা বলে এখন দেখা যাচ্ছে তারাই এই দলের সঙ্গেই যুক্ত। বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের এগিয়ে যাওয়াটা তারা নস্যাত করতে চায়। সাধারণ মানুষ যখন সুখে থাকে, বিএনপির মনে তখন দুঃখ দেখা দেয়। নইলে এতিমের অর্থ আত্মসাত করতে পারে না। এতিমের অর্থ আত্মসাত করেই কারাগারে বিএনপি নেত্রী। আরেকজন তো (তারেক রহমান) গ্রেনেড হামলা, মানি লন্ডারিংসহ নানা অপকর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কিছু কথা বলেছি। এত মানুষের ভেতর থেকে একজন প্রার্থী বেছে নেয়া সহজ কাজ নয়। ৪ হাজারের মাঝখান থেকে ৩০০ জনকে বেছে নেয়াটাও কঠিন কাজ। তারপরও আমরা মনোনয়ন বোর্ডে বসেছি, যাচাই-বাছাই করে ঠিক করব। দলীয় সূত্র জনায়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৃহস্পতিবার থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু করা হলো। এরপর ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে সংসদীয় বোর্ডের আরও সভা। এসব সভায় পর্যায়ক্রমে আলোচনা করে প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা প্রতীকে’ ভোটে দাঁড়াতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ৪ হাজার ২৩ প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দীন আহমেদ, রশিদুল আলম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন প্রমুখ।
×