ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ ড্র হলো

মিরপুর টেস্টে দারুণ জয় বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

মিরপুর টেস্টে দারুণ জয় বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর টেস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশই নিয়ন্ত্রণ করল। মাঝপথে একটু পথ হারা হয়েছিল। শেষে খানিক দুশ্চিন্তাও যুক্ত হলো। তবে শেষ পর্যন্ত মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২১৮ রানের বড় ব্যবধানে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুইয়েকে ২২৪ রানে অলআউট করল বাংলাদেশ। পঞ্চম ও শেষদিনে পুরো দুই সেশনও খেলতে পারল না জিম্বাবুইয়ে। শেষে টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ব্রেন্ডন টেইলর (১০৬*) যা একটু দুশ্চিন্তায় ফেলেছিলেন। যিনি প্রথম ইনিংসেও বাধা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু মিরাজ (৫/৩৮) এমন দ্যুতিই ছড়ান জিম্বাবুইয়ের অন্য ব্যাটসম্যানদের তা ছিল অসহায় আত্মসমর্পণ। চতুর্থদিনের ৭৬ রানের সঙ্গে পঞ্চমদিন আর ১৪৮ রান যুক্ত করতে পারল জিম্বাবুইয়ে। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশ অসহায় ছিল, মিরপুর টেস্টে জিম্বাবুইয়ে অসহায় হয়ে পড়ল। পাকে-চক্রে মিরপুর টেস্টে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ বড় স্কোর (৫২২ রান) গড়েছে। জিম্বাবুইয়েও (৩০৪ রান) দাপট দেখিয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ (২২৪ রান) যত রান করেছে, জিম্বাবুইয়েও একই রানে গুটিয়ে গেছে। প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশ (২১৮ রানে) যত রানে এগিয়ে ছিল, জিম্বাবুইয়েও তত রানেই হেরেছে। প্রথম ইনিংসে এক মুশফিকুর রহীম (২১৯*) যত রান করেছে, তারচেয়ে এক রান কমে হেরেছে জিম্বাবুইয়ে। আফসোস দু’এক জায়গায় ভালভাবেই আছে। সিলেট টেস্টে যদি বাংলাদেশ ১৫১ রানে হেরে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে না পড়ত, তাহলে টেস্ট সিরিজও বাংলাদেশ জিতে নিত। টেস্ট সিরিজ যে ১-১ ড্র হলো, দেশের মাটিতে হওয়া টেস্ট সিরিজের শিরোপা জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হলো, সেটি আফসোসের তালিকায় যুক্ত হলো। সিলেট টেস্টও যদি জিততো বাংলাদেশ তাহলে সিরিজ জয়ের সঙ্গে ১২তম টেস্ট জয় হতো। সঙ্গে আফসোস থাকল আরেকটি। আর ৯ রান কমে জিম্বাবুইয়েকে অলআউট করা গেলে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টিই পাওয়া যেত। জিম্বাবুইয়েকে ২০০৫ সালে যে ২২৬ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সেটি নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় হয়ে থাকল। মিরপুর টেস্টের জয়টি রানের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রইল। অস্ট্রেলিয়াকে গত বছর আগস্টে হারানোর এক বছর পর আবার টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। বছরটি যেভাবে দুশ্চিন্তায় কাটছিল, সেই চিন্তাও আপাতত দূর হলো। বছরটি টেস্টের জন্য খুবই খারাপ যাচ্ছিল বাংলাদেশের। হারের পর হার হচ্ছিল। আবার ইনিংসে বাংলাদেশ ২০০ রানও করতে পারছিল না। ব্যাটসম্যানদের কি বেহাল অবস্থা হচ্ছিল। তা থেকে মিরপুর টেস্টে নিজেদের মেলে ধরলেন ক্রিকেটাররা। তাতে বড় জয়ও আসল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে যা শান্তির বার্তাও বইয়ে দিল। সাকিব ও তামিমকে ছাড়াই টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। সিলেট টেস্টে বাজে অবস্থা হওয়ার পর মিরপুর টেস্টে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ। টেস্ট জিতেও নিল। সেই সম্ভাবনার পথ তৈরি হলো ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহীমের (২১৯*) ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে মুমিনুল হকের (১৬১) দেড় শ’ রানের ইনিংসে। প্রথম ইনিংসেই বড় স্কোর গড়ে ফেলে বাংলাদেশ। এরপর মাঝপথে একটু পথ হারায়। টেইলর (১১০), মুর (৮৩) দুর্দান্ত জবাব দেন। তবে দুই টেস্টে ১৮ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হওয়া তাইজুল ইসলাম (৫/১০৭) ও মিরাজের (৩/৬১) বোলিংয়ে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ে ফলোঅনেই পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশ জিম্বাবুইয়েকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠায়নি। ঝুঁকি নেয়নি। বাংলাদেশই ব্যাটিংয়ে নামে। এবার শুরুতেই বেহাল অবস্থায় পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ দলকে পথ দেখান আট বছর পর সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১০১*)। এমন টার্গেটই জিম্বাবুইয়ের সামনে দেয় বাংলাদেশ যা করা জিম্বাবুইয়ের জন্য অসম্ভব ছিল। জিততে হলে জিম্বাবুইয়েকে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো। চতুর্থদিন শেষ সেশনে জিম্বাবুইয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। দিনটিতে ২ উইকেটে ৭৬ রান করায় পঞ্চম ও শেষদিনে জিম্বাবুইয়ের জিততে ৩৬৭ রানের দরকার ছিল। সেই রান করতে গিয়ে মিরাজ (৫/৩৮) ও তাইজুলের (২/৯৩) ঘূর্ণির সামনে পড়ে খেই হারিয়ে ফেলেন জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা। টেইলর (১০৬*) শুধু উইকেট আঁকড়ে থাকেন। একটু দুঃশ্চিন্তাতেও ফেলেন। কিন্তু মিরাজের স্পিন জাদুতে অন্য ব্যাটসম্যানরা অসহায় হয়ে পড়েন। তাতে বাংলাদেশও মিরপুর টেস্ট জিতে নিল। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খুশি। যদিও টেস্ট সিরিজ জেতা যায়নি, তবে সিরিজে হারও হয়নি। ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার পর টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ ড্র করা গেছে। জয়ে আনন্দিতও মাহমুদুল্লাহ। এ নিয়ে বলেছেন, ‘সবাই চাচ্ছিল জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ জিতুক। আমার মনে হয় জিম্বাবুয়েকেও ক্রেডিট দিতে হবে, ওরা ভাল ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই ভাল করেছে। প্রথম টেস্টে কিছু ল্যাক অব ডিসিপ্লিন ছিল যা টেস্ট ক্রিকেটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওই জিনিসটা আমরা করতে পারিনি যা এই টেস্টে করতে পেরেছি। প্রথম টেস্ট হারের পর আমরা খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম তার বহিঃপ্রকাশ মাঠে দেখাতে। আমার মনে হয় আমরা কিছুটা হলেও করতে পেরেছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যদি আপনি ম্যাচ জয় করেন, তাহলে অবশ্যই আপনার আনন্দ লাগা উচিত। ম্যাচ জিতলে ওতটুকু অধিকার থাকে আনন্দ প্রকাশ করার। আমরা যখন খারাপ খেলি, ড্রেসিংরুমে মনটা আমাদেরই বেশি খারাপ হয়। আমাদের চোখের পানিটা কেউ দেখে না। আমরা এটা কাউকে বলিও না।’ জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে শিরোপা ভাগাভাগি করতে মাহমুদুল্লাহরও কষ্ট হয়েছে। সিলেট টেস্ট না হারলেই যে টেস্ট সিরিজটাও বাংলাদেশেরই হতো। তাই মাহমুদুল্লাহ বলেছেন, ‘প্রথম টেস্টে আমার মনে হয় আমরা খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছি। শুরুতে আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি ম্যাচেই জেতা। হোম কন্ডিশনে জিম্বাবুইয়ে হোক, অস্ট্রেলিয়া হোক কিংবা অন্য যে কোন দলই হোক, আমরা সবসময় চাই নিজেদের কন্ডিশনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে যেন আমরা সিরিজ জিততে পারি। যে ফরমেটেই হোক আমাদের লক্ষ্য থাকে এমনটাই। সেদিক থেকে বললে ট্রফিটা শেয়ার করতে খুবই খারাপ লাগছে।’ ট্রফি ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছে। তবে সিলেট টেস্ট বাজেভাবে হারের পর মিরপুর টেস্টে জেতার আনন্দও আছে।
×