ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আঁরা ন যাইয়্যুম ॥ ফের হোঁচট খেল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

আঁরা ন যাইয়্যুম ॥ ফের হোঁচট খেল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ যে বিশ্ব চাপের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ধাপে ধাপে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি হয়ে অভ্যর্থনা জানাতে বৃহস্পতিবার প্রস্তুত ছিলÑশেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়ে গেছে। ইতোপূর্বে কয়েক দফা উভয় দেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার দিনক্ষণ ধার্য ছিল। প্রথম দফায় ৩০ পরিবারের দেড় শ’ জনকে প্রত্যাবাসন করার কথা ছিল। কিন্তু সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তুমব্রুর জিরো পয়েন্টের ওপারে অপেক্ষার পর মিয়ানমার পক্ষ বলা যায় খালি হাতেই ফিরে গেছে। ফিরে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের সীমানা বরাবর এপার থেকে বিজিবির (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে ওপারে অপেক্ষমাণদের জানান দেয় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। এপারের পক্ষের এমন ইঙ্গিত পেয়ে ওপারের পক্ষ গুটিয়ে ফেলে অভ্যর্থনার যাবতীয় প্রস্তুতি। এ ঘটনা নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। প্রত্যাবাসনের পরবর্তী তারিখ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন। এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিদেশী কূটনীতিক ও সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে ব্রিফিং করেছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার তুমব্রু জিরো পয়েন্টে নবনির্মিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কপথে প্রথম দফায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ৩০ পরিবারের দেড় শ’ জনকে প্রত্যাবাসনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল বাংলাদেশ পক্ষ। অনুরূপভাবে মিয়ানমার পক্ষও এদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে জিরো পয়েন্টের ওপারে হাজির হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষমাণ ছিল। কিন্তু সকাল থেকেই আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় শিবির টেকনাফের উনচিপ্রাং পয়েন্টে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শুরু করে মিছিল, মুহুমুর্হু স্লোগান দিতে থাকে ‘আঁরা ন যাইয়্যুম (আমরা যাব না)। বিক্ষোভরত রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্বসহ ৫ দফা দাবি সংবলিত স্লোগানও দেয়। এ অবস্থায় ট্রানজিট পয়েন্ট ছিল ফাঁকা। যাদেরকে প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল তাদের কাউকে ট্রানজিট পয়েন্টে আনা যায়নি। বরঞ্চ, যারা যাওয়ার কথা ছিল তারাও বিক্ষোভের তোড়ে ভড়কে যায়। এ সময় প্রত্যাবাসনের জন্য বেশকিছু যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বটে। কিন্তু কেউ প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক না হওয়ায় সব আয়োজন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতিসংঘসহ বিশ্বের অসংখ্য দেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের বর্বরোচিত আচরণের বিরুদ্ধে সরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আছে। শুধু তাই নয়, এসব দেশ রোহিঙ্গাদের সসস্মানে ফিরিয়ে নেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের দফায় দফায় বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন শুরু করার দিনক্ষণ ধার্য হয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় আগে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পক্ষের পাশাপাশি মিয়ানমার পক্ষও ধাপে ধাপে সকল আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জাতিসংঘ এবং এর শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং বিভিন্ন দাতা ও মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার আপত্তি এবং ইতিবাচক রিপোর্ট না আসা ও সর্বোপরি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঢেউ উপচেপড়ার প্রেক্ষাপটে বহুল কাক্সিক্ষত প্রত্যাবাসন কর্মসূচী নতুন করে হোঁচট খেয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন গলার কাঁটা হয়ে আছে, তেমনি জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত এদেশটির কাঁধে আরও ভারি বোঝায় পরিণত হয়ে আছে। বিশেষ করে উখিয়া, টেকনাফ অঞ্চলের মানুষ এবং এর সন্নিহিত এলাকা সর্বোপরি দেশের জন্য একটি ভয়ানক রূপে জিইয়ে যে থাকবে তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রতীয়মান। আবার কখন দু’দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে এবং নতুন দিনক্ষণ ধার্য হবে এবং সে অনুযায়ী আশ্রিত রোহিঙ্গারা যেতে রাজি হবে কিনা সবই এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ার সীমান্ত এলাকা তুমব্রুর জিরো পয়েন্ট ছিল সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ওপারে ঢেকিবুনিয়ায় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষমাণ ছিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিপরীতে এপারে প্রশাসন প্রত্যাবাসনে তালিকাভুক্তদের জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এবারের জিরো পয়েন্ট সন্নিহিত এলাকা এবং ট্রানজিট পয়েন্ট ছিল সম্পূর্ণ ফাঁকা। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নতুন করে হোঁচট খাওয়ার পর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মূলত বুধবার রাত থেকে প্রতিবন্ধকতার ইঙ্গিত আসতে থাকে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিক্ষোভের উত্তাল ঢেউ শুরু হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশ পক্ষ প্রত্যাবাসনের সকল প্রস্তুতি নিয়েও তা শুরু করতে পারেনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা গেল না। জাতিসংঘসহ যেসব দেশ ও সাহায্য সংস্থার শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রত্যাবাসন এখনই শুরু না করার যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সে ব্যাপারে তিনি কোন বক্তব্য করেননি। তবে খোঁজ নিয়ে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট শক্তিশালী দেশ এবং সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ প্রত্যাবাসিত হবে এমন রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূলে নয়। ইউএনএইচসিআরকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হলেও বুধবার রাত পর্যন্ত এ সংস্থার পক্ষে প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক কোন রিপোর্ট দেয়া হয়নি। এদিকে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বিভিন্ন গ্রুপ ও কিছু এনজিও সংস্থার উস্কানিমূলক তৎপরতার কারণে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরে দিনভর প্রত্যাবাসনবিরোধী সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে সামগ্রিক পরিবেশকে রীতিমত উত্তপ্ত করে তুলেছে। টেকনাফের উনচিপ্রাং এলাকার আশ্রয় শিবিরে ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে। উখিয়ার আশ্রয় শিবিরগুলোতে রয়েছে ৫ লক্ষাধিক। বৃহস্পতিবার টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রিত শিবিরগুলো প্রত্যাবাসনের বিরোধিতায় উত্তপ্ত ছিল। সবচেয়ে বেশি উত্তাপ সৃষ্টি হয় উনচিপ্রাং শিবিরগুলোতে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি যাতে অবনতি না ঘটে তা নিয়ে বিশেষ নজরদারি সৃষ্টি করা হয়। ওপারের পরিস্থিতি ॥ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওপারের ঢেকিবুনিয়া নোম্যানসল্যান্ডে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে প্রত্যাবাসিতদের অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষায় ছিল মিয়ানমার পক্ষ। এপার থেকে দেখা গেছে ওপারের ব্যাপক আয়োজন। অসংখ্য যানবাহন ছিল প্রস্তুত। দিন শেষে সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। এপারের অবস্থা ॥ সীমান্তের এপারে তুমব্রুর জিরো পয়েন্ট ও অনতিদূরে স্থাপিত ট্রানজিট পয়েন্ট ছিল একেবারে ফাঁকা। প্রত্যাবাসিত হবে এমন তালিকাভুক্তদের আনার জন্য বেশকিছু যানবাহন সকাল থেকেই অবস্থান নেয়। সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের যানবাহনও দেখা গেছে। কিন্তু আশ্রয় শিবির ছেড়ে কেউ বের হয়নি। আর প্রত্যাবাসনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার কাউকে শিবির অভ্যন্তরে যেতেও দেখা যায়নি। এর আগেই রোহিঙ্গাদের যে বিক্ষোভ মিছিল ও মুহুমুর্হু স্লোগান দৃশ্যমান হয় তাতেই সাধারণ রোহিঙ্গা ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের কাউকে কোন তৎপরতায় দেখা যায়নি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএনএইচসিআর’র গোপন রিপোর্ট রয়েছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পর আশ্রয় শিবিরে রাখা হলে তাদের আর মানবিক সহায়তা দেয়া হবে না। ওই গোপনীয় রিপোর্ট বেরিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে বলা হয়েছে, শরণার্থীদের যেন দীর্ঘ সময় আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা না হয়। যদিও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অস্থায়ীভাবে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভয়, তারা আবারও মিয়ানমার পক্ষের রোষানলে পড়তে পারে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি মিয়ানমার সরকার। সেখানে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি। এছাড়াও প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি কিনা ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে তা নিয়ে যাচাই করার প্রক্রিয়াটিও শেষ হয়নি। এর আগে কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) আবুল কালাম বুধবার রাতে বলেছিলেন, প্রথম দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ৩০ পরিবারের দেড় শ’ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের যাবতীয় ভৌত পরিস্থিতি সম্পন্ন হয়েছে। ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সংস্থার মুখপাত্র ফিরাজ আল খতিব বুধবার রাতে জানিয়েছেন, সংস্থার প্রতিনিধিরা বুধবার সারাদিন প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা সব পরিবারের সঙ্গে কথা বলে একটি রিপোর্ট দেবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরার পরিবেশ মিয়ানমারে এখনও সৃষ্টি হয়েছে বলে সংস্থা মনে করে না। বাংলাদেশের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের সমঝোতার আওতায় প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চায় কিনা তা যাচাই করার কাজটিই শুধু সংস্থাটি করছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ইউএনএইচসিআরের অবস্থান হলো, সম্মতির বিষয়টি যাচাই শেষ হলে এর ফল তারা সরকারকে জানাবে। সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা কোন্ কোন্ পরিবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী বা আগ্রহী নয় সে বিষয়ে তারা সরকারকে কোন তথ্য দেবে না। উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ১৫ নবেম্বর প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে নিশ্চিত করা দুই হাজার ২৬০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথম দিকে প্রতিদিন ১৫০ জন করে রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের আগেই বাংলাদেশ ওই তালিকা ইউএনএইচসিআরকে সরবরাহ করে। ভারত ও চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। হাজার হাজার রোহিঙ্গার বিক্ষোভ ॥ ‘আঁরা ন যাইয়্যুম’ (আমরা যাব না)। রোহিঙ্গারা দাবি তুলেছে তাদের কোথায়, কিভাবে নিয়ে যাচ্ছে, নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে কিনা, সে দেশে গিয়ে অবাধ চলাফেরার সুযোগ পাবে কিনা; এসব বিষয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা নিজভূমে ফিরে যাবে না। রোহিঙ্গারা বলেছে, তাদেরকে জোর করে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে। কারণ তাদেরকে মিয়ানমারে জোর করে পাঠানো হলে মিয়ানমারের সেনারা তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলবে। তারা বলেছে, আবারও নির্যাতিত হতে তারা সে দেশে ফিরে যেতে অনিচ্ছুক। বৃহস্পতিবার উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, জামতলী, টেকনাফের উনচিপ্রাং ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা নেতাদের নেতৃত্বে প্রত্যাবাসন বিরোধী বিক্ষোভ করে মুহুমুর্হু স্লোগান দেয়। বিক্ষোভকারীরা এদের সাহায্য-সহযোগিতায় আশ্রিত হয়ে এদেশের বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তারা এও দাবি তুলেছে বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দিলেও বিদেশের আর্থিক সহায়তায় তারা প্রাণে বেঁচে আছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন ও বিতাড়ন জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে আশ্রয় নেয়াসহ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছে। এই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ২০১৭ সালের ২৩ নবেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। চুক্তি পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমারের অসহযোগিতার কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্ব হয়ে ১২ মাস সময় অতিবাহিত হয়। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় নতুন একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশ মিয়ামারের কাছে আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ওই তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫শ’ জনকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র দেয়। গত ৩০ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রথম ধাপে ২ হাজার ২৬০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ফেরত নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এক পয়েন্টে ১৫০ জন করে, দুইটি পয়েন্টে ৩শ’ রোহিঙ্গাকে। প্রথম ধাপের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ১৫ নবেম্বর থেকে শুরুর দিন ধার্য হয়। প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রত্যাবাসনের খবর শুনে অনেকের ক্যাম্প ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পের ভেতর বিক্ষোভ শুরু করে তারা। বিক্ষোভে অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা ‘এখন আমরা ফিরব না, গণহত্যার বিচার চাই, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই, স্বদেশের জায়গা-জমি ফেরত চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। বেশিরভাগ রোহিঙ্গা বলছে, তারা এখনই ফেরত যেতে প্রস্তুত নয়। বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় যেসব রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করার কথা ছিল তাদের বেশিরভাগ টেকনাফের উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসার জন্য আরআরআরসি অফিসের কয়েকটি বাস সেখানে পৌঁছলে বিক্ষোভ শুরু করে রোহিঙ্গারা। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে নানা দাবি তুলে স্লোগান দিতে থাকে রোহিঙ্গারা। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের বহনের জন্য নিয়ে যাওয়া বাসগুলোও ঘিরে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এদিকে বৃহস্পতিবার আশ্রয় শিবিরগুলোতে বিক্ষোভের এ ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোপূর্বেকার চেয়ে এখন দ্বিগুণে উন্নীত করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এরই ফাঁকে বহু রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় শিবির সন্নিহিত পাহাড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরও জানা গেছে। জিরো পয়েন্টে অপেক্ষায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ॥ রোহিঙ্গাদের অভ্যর্থনা জানাতে মিয়ানমার ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা দেশটির এক মন্ত্রীর নেতৃত্বে সকাল ৯টা থেকে ঘুমধুম-ঢেকিবুনিয়া পয়েন্টে (প্রত্যাবাসন ঘাট) অপেক্ষায় থাকে। ডেকোরেশনের কাপড় টাঙ্গিয়ে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল ঢেকিবুনিয়া ঘাঁটির নিচে অপেক্ষায় থাকে যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি নিয়ে বাংলাদেশ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা কখন আসবে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুরের পর বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মিয়ানমার প্রতিনিধিদল সেখানে অপেক্ষা করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বন্ধুসুলভ কথা বলে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল ফিরে যায়। প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি ॥ উখিয়ার পার্শ্বস্থ নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে যখন প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেরুনতলী পয়েন্ট দিয়ে হলেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালানোর তথ্য মিলেছে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্প সরেজমিন পরিদর্শনকালে ক্যাম্পের কমান্ডার ২৯ ব্যাটালিয়ন আনসারের এপিসি জাকের আলী জনকণ্ঠকে জানান, তারা ভোর-সকাল থেকে রোহিঙ্গা পারাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় থাকলেও এ পর্যন্ত কোন রোহিঙ্গা দল কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনের জন্য আসেনি। ফলে কোন রোহিঙ্গাকে ওপারে পাঠানো সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরুর ঘটনা ॥ দেশ স্বাধীনের পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলেও ১৯৭৮সালে বিএনপি সরকারী হিসেবে ৩ লাখ ৫০হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। বেসরকারী হিসেবে এ সংখ্যা সাড়ে ৪ লক্ষাধিক। আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলেও দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ফাঁকি দিয়ে থেকে যায় এদেশে। তৎকালীন সরকারদলীয় চিহ্নিত কিছু নেতা তাদের পক্ষ হয়ে ধনাঢ্য রোহিঙ্গাদের এদেশে বসবাসের সুযোগ করে দেয়। বিদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য পাসপোর্ট থেকে শুরু করে সব ধরনের কাগজপত্র যোগাড়ের সুযোগও করে দেয়। মিয়ানমার ঘাঁটিতে হামলা ॥ আরএসও গঠিত হওয়ার পর তৎকালীন বিএনপি সরকার তাদের মদদ যোগায়। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ে অস্ত্রের ঘাঁটি তৈরি করে ট্রেনিং দেয়। ওসব ঘাঁটি থেকে মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু পয়েন্টে গিয়ে আরএসও ক্যাডাররা নাসাকা বাহিনীর চৌকিতে দূর থেকে গুলি ছোড়ে। এতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালালে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী দুই মাসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে অনুপ্রবেশ করে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ১টি মোট ২০টি আশ্রয় শিবির স্থাপন করে ওই সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। ১৯৯২সালে প্রত্যাবাসন শুরু হয়ে পাঁচমাস পর আরএসও ক্যাডাররা বিদেশে যোগাযোগ করে ঢালাওভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না করার জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করায়। হঠাৎ থমকে যায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। মিয়ানমার থেকে ছাড়পত্র আসা সাড়ে নয় হাজারসহ প্রায় ৩২ হাজার শরণার্থী থেকে যায় বাংলাদেশে। তাদের উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া দুটি ক্যাম্পে রাখে সরকার। অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার (১৯৯৬) সঙ্গে সঙ্গে ওসব অবৈধ ঘাঁটিতে হামলা চালায় এবং আরএসওর ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয়। এদিকে ১৯৯২ সালে যেসব রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল, তারা আবারও একই অভিযোগ তুলে ১৯৯৪ সালে দেড়লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে। সরকার তাদের আর শরণার্থীর মর্যাদা না দিয়ে বস্তি করে থাকার মৌখিক অনুমতি দেয়। তখন থেকে অনুপ্রবেশকারী ওসব রোহিঙ্গাকে তালিকাভুক্ত করে শরণার্থী মর্যাদা দেয়ার জন্য ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ সরকারের কাছে বহু লেখালেখি করেছে। ২০১২ সালেও মিয়ানমার থেকে প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। ২০১৬ সালে অনুপ্রবেশ করেছে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর অনুপ্রবেশ করেছে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে প্রত্যাবাসন না হয়ে থেকে যাওয়া ৩০ হাজার এবং প্রত্যাবাসনের জন্য অপেক্ষায় থাকা ৩২ হাজার রোহিঙ্গার কক্ষে ২৭ বছরে জন্ম নিয়েছে আরও অন্তত ৬০ হাজার শিশু। ২০১৭ সালে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গা নারীরা গত ১৫ মাসে জন্ম দিয়েছে আরও সাড়ে ৪ লাখ শিশু। প্রতিমাসে ৪৫ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে বলে রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত এক এনজিও কর্মকর্তা জানিয়েছেন। রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে ঢালাওভাবে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ১৫মাস। প্রতিমাসে ৪৫হাজার শিশু যদি জন্ম গ্রহণ করে, তাহলে প্রায় সাড়ে ১২লাখ রোহিঙ্গার সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে ওই ১৫মাসে ১৯লাখে পরিপূর্ণ হবে। ১৯৭৮সালে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশের আনাচেকানাচে অন্তত ৩০লাখ রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গার ঢল ॥ ইতোপূর্বে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করলেও ২০১৭সালের মতো এত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেনি। ওপারের বিভিন্ন সূত্র মতে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা যখন বার বার দেশটির ঘাঁটিতে হামলে পড়ছে, তাই রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী দেশটিতে না থাকুক নীতিতে মিয়ানমার সরকারের বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালায়। আল-ইয়াকিনের সঙ্গে সম্পর্ক মিয়ানমার সেনাদের ॥ ওপারে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী সশস্ত্র সংগঠন আল ইয়াকিনের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বড় বড় কর্মকর্তার গোপন বৈঠক হয়েছে। আল-ইয়াকিন নেতাদের বিপুল কিয়েট (মিয়ানমারের মুদ্রা) দিয়ে ঘাঁটিতে হামলা ঘটনার সূত্রপাত ঘটানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী ওই ঘটনাকে উপলক্ষ দেখিয়ে রোহিঙ্গা নিধনে নামে সেনাবাহিনী। তবে আল-ইয়াকিন প্রধান মোঃ আতা উল্লাহসহ প্রথম সারির সন্ত্রাসী কাউকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আল-ইয়াকিনের সন্ত্রাসীরা মিয়ানমারে দিব্যি ঘুরে বেড়ালেও বর্তমানে সরকারী বাহিনী তাদের গ্রেফতার না করায় রহস্যটি আরও ঘনীভূত হয়েছে দেশটিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মাঝে। উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয়দের মাঝে উৎকণ্ঠা ॥ বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয়দের মাঝে নতুন উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা ভারে এ অঞ্চলের পরিবেশসহ সামগ্রিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। রোহিঙ্গারা যত্রতত্র আবাসস্থল গড়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে আছে। স্থানীয়রা শুরু থেকে ক্ষুব্ধ। কিন্তু সরকারের মনোভাব বুঝে তারা রোহিঙ্গাদের প্রতি এখনও সদয় মনোভাব নিয়ে আছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মাঝে অকৃতজ্ঞের সংখ্যাই বেশি। এ নিয়ে স্থানীয়রা অতিষ্ঠ। তারা আশা করেছিল বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। ধাপে ধাপে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকল আশা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এখন তাদের মাঝে নতুন শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে এই বলে যে, আদৌ এরা ফিরে যাবে কিনা।
×