ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেবেন না

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেবেন না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএমডিসি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি। তিনি বলেন, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মানব জাতির প্রধান অস্ত্র এ্যান্টিবায়োটিক। অতিরিক্ত, অপর্যাপ্ত ও অযৌক্তিক এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে এ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু উদ্ভব হচ্ছে। এই জীবাণু ব্যক্তির জন্য প্রাণঘাতী হওয়া ছাড়াও সমাজে ব্যাপক প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি করতে পারে। সারাবিশ্ব জুড়ে এটি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং জীবাণুসমূহ এ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বিস্তারও দ্রুত ঘটছে। কম বা বেশি সকল প্রকার এ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমণ চিকিৎসায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ব এ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ (১২-১৮ অক্টোবর) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘ এ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছেন, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছেন কি? ’ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যথেচ্ছ ব্যবহারে কার্যকারিতা হারাচ্ছে এ্যান্টিবায়োটিক। রোগীদের দেহে এ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতা বেড়েছে। জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রথাগত এ্যান্টিবায়োটিক কাজে আসছে না। এটি মানুষ ও পশু স্বাস্থ্য এবং কৃষি সেক্টরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিরোধী জীবাণু পরবর্তীতে পশু থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হতে পারে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, চিকিৎসকদের পক্ষেও ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অবাধে ওষুধ বিক্রি করে থাকে ফার্মেসির লোকজন। অনেক সময় রোগী ও তাদের লোকজনও চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ এবং তা অনুযায়ী ওষুধ কেনার প্রয়োজন অনুভব করেন না। ওষুধ প্রতিরোধী বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। অনেক চিকিৎসক ব্যবসায়িক স্বার্থে রোগীদের জন্য অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর রোগীরাও আস্থার সঙ্গে ব্যবহার করে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের তালিকাভুক্ত ওষুধ। এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে সকলকে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরির জন্যও সরকার কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়, নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে জনবল বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, নারী ও শিশুদের জন্য উন্নততর ও সহজলভ্য মানসম্মত সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশে একটি কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য খাতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধির বিস্তার, সার্বিক প্রজনন হার ও অনাকাক্সিক্ষত প্রজনন হার হ্রাসকরণ এবং মহিলা ও পুরুষের গড় আয়ু, প্রথম সন্তান জন্মের সময় মায়ের বয়স, পুষ্টির মান ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিকরণ। এ সকল উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রতি ৬০০০ জনগোষ্ঠীর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। উন্নত ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল নির্মাণের পাশপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যাবৃদ্ধি এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বলে জানান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। মহাপরিচালক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেসব ওষুধ রোগ প্রতিরোধে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে, সেগুলোর অনেক এ্যান্টিবায়োটিক আজ জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওষুধ প্রতিরোধী মোকাবেলায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে অনেক সাধারণ সংক্রামক রোগ ভাল হবে না। এতে অসহায় অবস্থায় রোগীকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে। ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়টি খুব পরিষ্কার। এ বিষয়ে আজ উদ্যোগ না নিলে আগামীকাল একটি রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে না। লাখ লাখ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারে এমন অতি প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ নষ্ট করে ফেলতে পারি না আমরা। ওই সব ওষুধ যাতে প্রতিরোধী না হয়ে ওঠে সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
×