ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কর অফিসেও মেলার সুবিধা চান করদাতারা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

কর অফিসেও মেলার সুবিধা চান করদাতারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আয়কর মেলায় রিটার্ন জমা কিংবা অন্যান্য সেবা মিলছে খুব সহজেই। আয়কর কর্মকর্তাদের আন্তরিকতাও বেশ। ফলে সহজেই আয়কর দিতে পারছেন করদাতারা। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করে করদাতারা বলছেন, এমন আন্তরিকতা কর অফিসগুলোতে থাকলে দেশে কর আদায়ের পরিমাণ আরও বাড়ত। মানুষেরও আস্থা বাড়ত কর অফিসের প্রতি। নবমবারের মতো আয়োজিত রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়কর মেলার বৃহস্পতিবার ছিল তৃতীয় দিন। এ দিনে আয়কর মেলার প্রাঙ্গণে বুথগুলোতে প্রচুর ভিড় চোখে পড়ে। আরিফ নামের একজনকে দেখা গেল ফ্লোরে বসে রিটার্ন ফরম পূরণ করছেন। তিনি বলেন, ফ্লোরে বসে পূরণ করেও শান্তি। কারণ মেলায় যে পরিবেশ পাওয়া যায়, কর কার্যালয়গুলোতে সে রকম আচরণ পাওয়া যায় না। এখানে কর দেয়া সহজ। এমন পরিবেশ ও আন্তরিকতা কর অফিসগুলোতে থাকলে সরকারের রাজস্ব আদায় আরও বাড়ত। মেলায় আসা হাজার হাজার করদাতা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আয়কর দিচ্ছেন, আয়কর বিবরণী দাখিল করছেন। অন্যদিকে হাসিমুখ তাদের সেবা দিচ্ছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মীরা। মেলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সহজে কর দিতে পারছেন। সাধারণ করদাতাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধীরা অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবন্ধী বুথের দায়িত্বে থাকা এনবিআরের সহকারী কমিশনার জানান, ‘আয়কর মেলার প্রথম দিনে রিটার্ন দাখিল করেছেন নয়জন প্রতিবন্ধী করদাতা। দ্বিতীয় দিনে সেবা নিয়েছেন ১৫ জন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০ জন সেবা নিয়েছেন।’ প্রতিবন্ধী বুথে কর প্রদানকারী আশরাফ উল্লা বলেন, ‘কর দিতে পেরে আমি আনন্দিত। সামনে বছরে আরও বেশি কর দিতে চাই। কারণ আমার দেয়া অর্থ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে।’ আয়কর বিবরণী দাখিলের পর বেঙ্গল গ্রুপের কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন, মেলায় এসে কর দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পাওয়া যায়। কিন্তু কর অঞ্চলে গেলে অনেক রকমের প্রশ্ন ও বিড়ম্বনার পাশাপাশি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পেতে অনেক দেরি হয়। এজন্য প্রতি বছর মেলায় রিটার্ন জমা দেই। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সিটিজেনরা কর প্রদান করছেন। কর দিতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। সামনের বছরে আরও বেশি কর দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন অনেকেই। কর দিতে আসা সিনিয়র সিটিজেন করদাতা আবু তাহের বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও কর দিয়েছে। বেঁচে থাকলে সামনেও দিব। আমার উপাজনের অর্থ দেশের কাছে লাগবে, এটাই আমার শান্তি।’ উল্লেখ্য, সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা-২০১৮ গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ সেøাগানে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হওয়া এই নবম আয়কর মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।’ কেন্দ্রীয়ভাবে এবার মেলা বসেছে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে। গত দুই বছর ধরে আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা ফিরে এসেছে পুরনো প্রাঙ্গণে। ঢাকার পাশাপাশি এদিন সারাদেশে শুরু হয়েছে এই মেলা। মেলার আয়োজক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলা শেষ হবে আগামী ১৯ নবেম্বর। গত ৮ বছরে আয়কর মেলা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, বেড়েছে জনপ্রিয়তা। মেলায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। ২০১০ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে আয়কর মেলায় সেবাগ্রহীতা ও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ গুণ। একই সময়ে মেলা থেকে নিবন্ধন নেয়া নতুন করদাতার সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ ও রিটার্ন জমা দেয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৬ গুণ। এনবিআরের তথ্যমতে, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে ৭ দিন, জেলা শহরে ৪ দিন, ৩২ উপজেলায় দু’দিনব্যাপী এবং ৭০টি উপজেলায় একদিন ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যানার, ফেস্টুন, বেলুন ও আলোকসজ্জায় সেজেছে মেলাগুলো। এছাড়া আয়কর মেলা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে করবিষয়ক এসএমএসও পাঠানো হয়েছে। টিভি ও টকশোতেও থাকবে মেলা সম্পর্কে আলোচনা। সচেতনতা বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে আয়কর ডকুমেন্টারি ও ডকু ড্রামা, যা প্রচার করা হবে বিভিন্ন টেলিভিশন ও মেলায়। মেলায় মিলছে যেসব সুবিধা ॥ করদাতারা সহজেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। ঢাকায় প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য আলাদা বুথ থাকছে। নেয়া যাচ্ছে নতুন কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন)। এনবিআরের ‘ই-পেমেন্ট’ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পরিশোধ করা যাচ্ছে কর। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য রয়েছে আলাদা বুথ। মেলায় স্থাপিত সোনালী ও জনতা ব্যাংকের বুথে করদাতারা আয়কর জমা দিতে পারছেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন শুল্ক, ভ্যাট, সঞ্চয় অধিদফতর, বিসিএস (কর), একাডেমি, কাস্টমস একাডেমি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পৃথক পৃথক বুথ রয়েছে। এসব বুথ থেকে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারছেন। করদাতাদের মেলা প্রাঙ্গণে আয়কর রিটার্ন, ই-টিআইএন আবেদন ফরম এবং চালান ফরম সরবরাহ করা হবে। করদাতাদের সুবিধার্থে মেলায় হেল্প ডেস্ক, তথ্যকেন্দ্র ও আয়কর অধিক্ষেত্র সংক্রান্ত বুথ রয়েছে। এসব বুথের মাধ্যমে করদাতাদের আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ, চালান ও পে-অর্ডার প্রস্তুতসহ আয়কর আইনবিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। করদাতাদের সুবিধার্থে মেলায় রয়েছে ফটোকপির ব্যবস্থাও।
×