ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোকেন মামলা নিষ্পত্তিতে নানা প্রতিবন্ধকতা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

কোকেন মামলা নিষ্পত্তিতে নানা প্রতিবন্ধকতা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সূর্যমুখী তেলের ঘোষণা দিয়ে এক শ’ কোটি টাকা মূল্যের তরল কোকেন আমদানির চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে মামলাটি উচ্চ আদালত গড়িয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আসলেও এতে কোন গতি দৃশ্যমান নয়। আসামিদের যারা জামিন পেয়েছেন তাদের কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন আর কেউ জেলে রয়েছেন। মামলার সম্পূরক চার্জশীট হওয়ার পরও এর চার্জ গঠনের প্রক্রিয়াটি থমকে আছে। এ মামলার তদন্ত, চার্জশীট, সম্পূরক চার্জশীট দাখিল থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার নানা দেয়াল সৃষ্টি হয়ে আছে। কোকেন ধরা পড়ার ঘটনা দেশে এই প্রথম। সুদূর বলিভিয়া থেকে সূর্যমুখী ব্র্যান্ডের ভোজ্যতেল ঘোষণা দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ জুন রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের একটি দল ‘সানফ্লাওয়ার অয়েল’ ঘোষণার ১০৭ ড্রাম জব্দ করে। প্রথমে চট্টগ্রামে আটক এসব সানফ্লাওয়ার অয়েল ভর্তি নমুনায় কোকেনের অস্তিত্ব নেই বলে জানান দেয়া হলেও পরবর্তীতে ঢাকায় ল্যাব টেস্ট করার পর বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। এতে বেশ কয়েকটি ড্রামে তরল কোকেনের অস্তিত্ব মিলে। ঘটনা তদন্তের ভার দেয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে। গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মোঃ কামরুজ্জামান ২০১৭ সালের ১৯ নবেম্বর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিকসহ ৮ জনকে আসামি করে চার্জশীট দাখিল করে। ৭ ডিসেম্বর অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী গ্রুপের কর্ণধার নূর মোহাম্মদের নাম না থাকায় অধিকতর তদন্তের জন্য র‌্যাবের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। মূলত এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি বিশেষ ক্ষমতা ও আরেকটি চোরাচালান আইনে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাটি নগর গোয়েন্দা পুলিশের ওপরই বর্তায়। আর চোরাচালান আইনের সম্পূরক চার্জশীট প্রদান করে র‌্যাব। তদন্ত শেষে র‌্যাব মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশীট প্রদান করে। অভিযুক্তরা হলেনÑ চট্টগ্রামের ফঁয়সলেক এলাকায় বসবাসকারী আবদুল বারির পুত্র খান জাহান আলী গ্রুপের প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেল, ও আর নিজাম রোডের মৃত হাজী আবদুল কাদেরের পুত্র খান জাহান আলী গ্রুপের কর্ণধার নূর মোহাম্মদ ও তার ছোট ভাই মোস্তাক আহমেদ খান, ঢাকার সবুজবাগ থানা এলাকার মৃত মতিউর রহমানের পুত্র আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল, কুমিল্লার বুড়িচং থানার বাসিন্দা ও চট্টগ্রামের সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী আলম, ঢাকার সবুজবাগ এলাকার মৃত জাহিদুর রহমানের পুত্র ম-ল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার মোঃ ওবায়দুল হকের পুত্র সিএ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, চাঁদপুরের মৌলভী নজরুল্লাহর পুত্র ব্রিটিশ নাগরিক ফজলুর রহমান ফজলু (পলাতক), মৌলভীবাজারের রাজানগর থানার তারামিয়ার পুত্র ব্রিটিশ নাগরিক মোঃ বকুল মিয়া (পলাতক)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে খান জাহান আলী গ্রুপের কর্ণধার নূর মোহাম্মদ উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিন পেয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়া সিএ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল ও একেএম আজাদ ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। তিন আসামি কারাগারে। তারা হলেনÑ গোলাম মোস্তফা সোহেল, মেহেদী আলম ও আতিকুর রহমান। বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিক শুরু থেকেই বিদেশেই রয়েছেন।
×