ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

অপশক্তির বিরুদ্ধে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

অপশক্তির বিরুদ্ধে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’

লেখার শিরোনামে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ তাও আবার অপশক্তির বিরুদ্ধে। পাঠক একটু ঘাবড়ে গেলেন, নাকি কৌতূহল! সবই পরিষ্কার করছি। তবে এই ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ সুপার হীরো ‘কৃশ’ কিংবা অতিমানবীয় ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ নয়- সাধারণ রক্ত মাংসের মানুষ এবং জীবন যুদ্ধে পরীক্ষিত সৈনিক। জাতির মনোরাজ্যে দহন কালের যে দগ্ধ সময় বয়ে যাচ্ছে তা প্রশমিত করতে বাংলাদেশের চেতনা বুকে নিয়ে দিন-রাত রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে অন্ধকারের বুকে আলো ফোটানোর চেষ্টা যিনি করছেন তিনি ‘মিস্টার বাংলাদেশ’। সমসাময়িক বাস্তবতা বললে ভুল বলা হবে, বেশ আগে থেকেই ভুল বুঝিয়ে, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, ভুল পথে পাঠানোর যে অপচেষ্টা আমাদের এই পুণ্য মাতৃভূমিতে- তার কেবল ভুলই সার। এই ভুলকে ভূলুণ্ঠিত করতে আসছে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ পাঠক এই ‘ভুল’ কথাটার মানে নিশ্চই বুঝতে পারছেন। আর একটু পরিষ্কার করি। ‘যে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করল সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল এবং যে একজন নিরপরাধ ব্যক্তির জীবন রক্ষা করল সে যেন সমগ্র মানব জাতিকেই রক্ষা করল’ আল কোরান সূরা (আল-মায়িদাহ; আয়াত ৫:৩২)। এবার বলেন গত কয়েক বছর ধরে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির শান্তি বিনষ্ট করতে ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী তথা ধর্মীয় উগ্রবাদীরা যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে তার ভয়ঙ্কর প্রভাব হিসেবে আমরা দেখেছি ‘হলি আর্টিজেন’ ‘শোলাকিয়া’ হামলাসহ অসংখ্য ব্যর্থ চেষ্টা আমাদের রবীন্দ্র-নজরুলের সম্প্রীতির বাংলার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। আর এই জ্বলন্ত বিষয় নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ নামের সমসাময়িক বাস্তবাতার সিনেমা। আগামীকাল শুক্রবার দেশব্যাপী ‘মিস্টার বাংলাদেশ’। গত পাঁচ নবেম্বর ২০১৮ ইউটিউবে মুক্তি পায় মিস্টার বাংলাদেশের অফিসিয়াল ট্রেলর। ট্রেলরে এক উদভ্রান্ত উগ্রবাদীর চিৎকার ‘এই দেশে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করাই হবে আমাদের জিহাদের আসল উদ্দেশ্য।’ ৩মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ট্রেলরে একজন যুবকে দেখা যায় মরণপণ চেষ্টা করে এই জঙ্গীদের ধ্বংস করছেন, ফ্ল্যাশব্যাকে তার অতীতের কিয়দাংশ দেখানো হয়। এই হলো মোটামুটি মিস্টার বাংলাদেশের পুরোপুরি অজানা প্লাটফর্ম! বাকিটা সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করা খিজির হায়াত খানের বয়ানে জানার চেষ্টা করব। আনন্দকণ্ঠ থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় মিস্টার বাংলাদেশের চিন্তাটা কিভাবে মাথায় এলো আর কে এই মিস্টার বাংলাদেশ? খিজির হায়াত; দেখেন উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদ এখন সারাবিশ্বে একটি গুরুতর সমস্যা। সময়ে সময়ে আমাদের দেশে এই সমস্যা প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিগত কয়েক বছর লক্ষ্য করলে আপনি দেখতে পাবেন আমাদের চিরচেনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে কে বা কাড়া যেন অন্যভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। আমাদের হাজার বছরের বাঙালী চেতনাকে ধ্বংস করে উগ্র চেতনা বিস্তারের চেষ্টা করছে, এই অপশক্তির বিরুদ্ধে যে বা যারা রুখে দাঁড়াবে তারা প্রত্যেকেই ‘মিস্টার বাংলাদেশ’। আর একটা কথা কোন ধর্মের কোথাও উল্লেখ নেই যে, ধর্মের নামে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা যায়। পবিত্র কোরানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যা আমাদের ট্রেইলরে দেখতে পাবেন। আনন্দকণ্ঠ, এ রকম একটা বিষয়ে সিনেমা করলেন কোন ভয় ভীতি বা কোন প্রতিবন্ধকতা? না, তেমন কিছু উল্লেখ করার মতো নয় তবে, জঙ্গীদের রক্তচক্ষু আমাকে বা আমাদের একেবারেই শাষাবে না তাও ঠিক নয়। আনন্দকণ্ঠ, বর্তমান চলচ্চিত্রের মন্দার বাজারে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন, আপনাদের প্রচার-প্রচারণার সময়মতো খুব নেই? আশা করি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে আর প্রচারের জন্য সময় যা আছে তার সবটাই কাজে লাগাতে চেষ্টা করছি। বাকিটা সময় বিচার করবে। ‘মিস্টার বাংলাদেশের আর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘কুমু’ অর্থাৎ মিসেস বাংলাদেশ চরিত্রে অভিনয় করছেন শানারৈই দেবী শানু। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় নিজের প্রথম সিনেমা এবং অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে? শানু; প্রথমত আমি ভীষণ খুশি এবং উত্তেজিত আমার প্রথম সিনেমা ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ নিয়ে আর অভিনীত চরিত্র? দেখেন এটি একটি জঙ্গীবাদ তথা উগ্রবাদ নির্মূলের কাহিনীভিত্তিক সিনেমা। গল্পটা খুবই সমসাময়িক যেখানে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে যুব সমাজকে ভুল পথে নেয়ার চেষ্টা পাশাপাশি এসবের বিরুদ্ধে একজন প্রতিবাদী পরীক্ষিত মানুষের সত্য ও মানবতা প্রতিষ্ঠার নিদারুণ সংগ্রাম দেখানো হয়েছে। আমি কুমু অর্থাৎ মিসেস বাংলাদেশের চরিত্রে অভিনয় করছি। আনন্দকণ্ঠ, এই সিনেমায় বা চরিত্রে অভিনয় করতে কোন চ্যলেঞ্জ বা কোন প্রতিবন্ধকতা? শানু; চ্যালেঞ্জ ছিল কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। আগামীকাল শুক্রবার ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ অনেকটা হঠাৎ করেই মুক্তির তারিখ নির্ধারিত হয়েছে কি? বিষয়টা কিছুটা ঠিক, আমি যতদূর জেনেছি নবেম্বরের ৩০ তারিখ মুক্তির পরিকল্পনা আমাদের ছিল সেখান থেকে ১৬ তারিখ এগিয়ে আশা এই আরকি। দর্শকদের কাছে আপনার কোন প্রত্যাশা বা বার্তা? শানু; আমরা কেবল দর্শকদের হল পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই বাকিটা দর্শক বিচার করবেন। জঙ্গীবাদ নিয়ে আমাদের দেশে এর আগে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন প্রয়াত পরিচালক তারেক মাসুদ তাঁর ‘রানওয়ে’ সিনেমায়। যেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে সমাজের প্রাণ যুবসমাজকে ভুল বুঝিয়ে তাদের আত্মঘাতী করে তোলা হচ্ছে। সমকালীন জীবন বাস্তবতার গল্প ছিল সেই সিনেমা উপজীব্য। এ্যাকশন এবং বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা মিস্টার বাংলাদেশ কতটা সময়ের দাবি তুলে ধরতে পারবে তা কেবল সময়েরই অপেক্ষা।
×