ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হোল্ডারকে ছাড়া বাংলাদেশে উইন্ডিজ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

হোল্ডারকে ছাড়া বাংলাদেশে উইন্ডিজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য দুঃসংবাদ। বাংলাদেশ সফরে তারা পাচ্ছে না টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক জেসন হোল্ডারকে। বেশ কিছুদিন ধরে কাঁধ ও গোড়ালির চোটে ভুগছিলেন তিনি, সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরে সেটি আরও বেড়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ জানিয়েছেন হোল্ডারের মাঠে ফিরতে অন্তত চার সপ্তাহ সময় লাগবে। সাদা পোশাকে গত মৌসুমে বিশ্বের অন্যতম সফল বোলার লোয়ার-অর্ডারে ব্যাট হাতেও ছিলেন দারুণ কার্যকর। হোল্ডারের অনুপস্থিতিতে টেস্টে নেতৃত্ব দেবেন সহ-অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রেথওয়েট। বুধবার তার নেতৃত্বে ঢাকায় এসে সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে চলে গেছে ক্যারিবীয় দলের প্রথম অংশ। ২২ নবেম্বর থেকে সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে প্রথম টেস্ট। তার আগে একটি দু’দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে সফরকারীরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাকি সদস্যদের আজই ঢাকায় আসার কথা। হতাশ হোল্ডার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরে যেতে না পারায় আমি অবশ্যই হতাশ। তবে মেডিক্যাল দলের সঙ্গে পরামর্শের পর আমাদের মনে হয়েছে, আমার কাঁধের চলমান সমস্যা সামলাতে এবং আরও ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে এটি ছাড়া উপায় নেই। গত মার্চে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকেই এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে আমাকে। ব্যথা সামলে খেলেছি। কিন্তু এখন এমন অবস্থায় গিয়েছে যে, সামনের দিকে তাকিয়ে আমাকে সময় নিতেই হবে।’ তার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও দল সফল হবে বলে বিশ্বাস হোল্ডারের, ‘খেলতে না পারায় আমি হতাশ। তবে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশকে আবার হারানোর সামর্থ্য আমাদের ছেলেদের আছে। আশাকরি আমরা লড়াই করব এবং আরও একটি সিরিজ জয়ের স্বাদ পাব।’ উল্লেখ্য, গত জুন-জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে ভরাডুবি হয়েছিল বাংলাদেশের, হোল্ডার সেদিকে ইঙ্গিত করেই এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ জানিয়েছেন, চার সপ্তাহ পর আবার পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে হোল্ডারের অবস্থা। শুধু অধিনায়কই নন, ব্যাটে-বলে দলের সেরা পারফর্মারদের একজন হোল্ডার। আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তাকে না পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বড় এক ধাক্কা নিশ্চিতভাবেই। হোল্ডার জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে মাঠে ফিরবেন বলে আশাবাদী গ্রেভ। চোটের কারণে সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরে প্রথম টেস্টে খেলতে পারেননি হোল্ডার। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাট হাতে ফিফটির পর তিনি বোলিংয়ে নেন পাঁচ উইকেট। দুই টেস্টেই তিনদিনে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩-১ ব্যবধানে হারা ওয়ানডে সিরিজের পাঁচ ম্যাচই খেলেন হোল্ডার। টেস্টে বল হাতে এ বছরটা দুর্দান্ত কেটেছে হোল্ডারের। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন চারবার। সবগুলোই শেষ চার টেস্টে, ৩টি আবার টানা তিন ইনিংসে। হোল্ডার গত ১০০ বছরে পেসারদের মধ্যে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে কম গড়ের নতুন রেকর্ড গড়েছেন এ বছরই। হায়দরাবাদে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। চলতি বছর ১১.৮৭ গড়ে ৩৩ উইকেট পূর্ণ করেন। বছরে কমপক্ষে ৩০ উইকেট নিয়েছেন এমন বোলারদের মধ্যে যা গত ১০০ বছরে সেরা গড়ের নতুন নজির। চলতি ২০১৮ সালে ৬ টেস্ট খেলেই এমন কীর্তি গড়েছেন মাঠের ক্রিকেটে ধুঁকতে থাকা উইন্ডিজ সেনাপতি। এক্ষেত্রে আগের রেকর্ডটা ছিল শোয়েব আকতারের। ২০০৩ সালে ৩০ উইকেট নেয়া সাবেক পাকিস্তান স্পিডস্টারের গড় ছিল ১২.৩৬। তবে গড়ের বিষয়টি বাইরে রাখলে বছরে সর্বোচ্চ ৬২ শিকারের রেকর্ড কিন্তু ইমরান খানের, ১৯৮৬ সালে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো বর্তমান পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর গড় ছিল ১৩.২৯। টানা তৃতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন হোল্ডার। ভারত সফরে বিধ্বস্ত উইন্ডিজ টেস্ট সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয় ২-০ ব্যবধানে। দলটির সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স মোটেই সুখকর নয়। ২০১৯ বিশ্বকাপের টিকেটের জন্য বাছাই খেলতে হয়েছে এক সময়ের পরাক্রমশালী ক্যারিবীয়দের। অথচ দলের কঠিন সময়ে বল হাতে দারুণ ধারাবাহিক জেসন হোল্ডার। এক সময় ক্রিকেটবিশ্ব দাপিয়ে বেড়াতেন উইন্ডিজ পেসাররা। নব্বইয়ের দশকেও পিচে আগুন ঝরাতেন কার্টলি এ্যামব্রোস-কোর্টনি ওয়ালশ। সেইদিন আর নেই। গতি হারিয়েছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট। এই হতাশার মধ্যে হোল্ডার যেন ব্যতিক্রম। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে সময়োপযোগী ব্যাটিংয়ে ২৭ বছর বয়সী বার্বাডিয়ান ক্রমশ নিজেকে একজন কার্যকর অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাংলাদেশ সফরে দুই টেস্ট এবং সমান তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও টি২০ খেলবে ক্যারিবীয়রা। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট, ঢাকায় দ্বিতীয়টি। তিন ওয়ানডের প্রথম দুটি ঢাকায়, তৃতীয়টি সিলেটে। সেখানেই প্রথম টি২০। সর্বশেষ ঢাকায় বাকি দুই টি২০ দিয়ে শেষ হবে উইন্ডিজের বাংলাদেশ সফর। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সূচী ১৮-১৯ নবেম্বর : দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ, চট্টগ্রাম ২২-২৬ নবেম্বর : প্রথম টেস্ট, চট্টগ্রাম ৩০ নবেম্বর-৪ ডিসেম্বর : দ্বিতীয় টেস্ট, ঢাকা ৬ ডিসেম্বর : একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ, ফতুল্লা ৯ ডিসেম্বর : প্রথম ওয়ানডে, ঢাকা ১১ ডিসেম্বর : দ্বিতীয় ওয়ানডে, ঢাকা ১৪ ডিসেম্বর : তৃতীয় ওয়ানডে, সিলেট ১৭ ডিসেম্বর : প্রথম টি২০, সিলেট ২০ ডিসেম্বর : দ্বিতীয় টি২০, ঢাকা ২২ ডিসেম্বর : তৃতীয় টি২০, ঢাকা
×